“যদি আবার চক্রান্তকারীরা ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করে তাহলে, এই সমন্বয়কদের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হতে পারে", বলেন তিনি।
Published : 29 Jul 2024, 05:03 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের ভিডিও বিবৃতি নেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেছেন, “তারা (সমন্বয়ক) বরং অনুভব করেছে সরকার তো সব দাবি মেনেই নিয়েছে, যে কারণে তারা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছে।”
সোমবার বেলা পৌনে ৩টায় ঢাকার রমনার মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ের প্রধান ফটকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এসব কথা বলেন।
ডিবি কার্যালয় মানুষের ‘আস্থার জায়গা’ উল্লেখ করে হারুন বলেন, “আমরা মনে করি, ডিবি কার্যালয় হচ্ছে মানুষের আস্থার জায়গা। এখানে মানুষকে হেনস্তা করা বা কারো প্রতি অন্যায় আচরণ কখনোই ডিবি করে না, ভবিষ্যতেও করবে না।
“পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আমরা মনে করি, যদি কোনো ব্যক্তি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন, আমাদের কাছে আসেন, তাহলে আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তাদের দেখভাল করা। সেটিই আমরা করছি।”
হারুন বলেন, “এই কোটা বিরোধী আন্দোলনটা করেছিল কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তাদের ভেতরে ঢুকে একটি গোষ্ঠী ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। পুলিশ সদস্যকে ঝুলিয়ে হত্যা, মানুষ হত্যা করেছে। রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোতে আগুন লাগিয়েছে।
“আমরা মনে করি, যদি আবার চক্রান্তকারীরা ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করে তাহলে, এই সমন্বয়কদের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হতে পারে। সেজন্য তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের দেখা দরকার।"
ছয় সমন্বয়ককে যেভাবে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়
কোটা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে এনে এই কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার, আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে আনা হয়।
শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা না হলেও রাতে হারুন ও পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘নিরাপত্তাহীনতার’ কারণে তাদেরকে নিয়ে আসা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় আরও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে হেফাজতে নেওয়া হয়। রোববার নেওয়া হয় নুসরাত তাবাসসুমকে।
কর্মসূচি প্রত্যাহারের পক্ষে বিপক্ষে ঘোষণা
রোববার রাতে ছয় জন পাশাপাশি বসে একটি ভিডিও বার্তা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন নাহিদ ইসলাম।
তিনি সেই ভিডিওবার্তায় বলেন, “আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার, যা সরকার ইতোমধ্যে পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই।
“সার্বিক স্বার্থে এই মুহূর্ত থেকে আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।"
তবে রাতেই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আরও তিন সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ, মাহিন সরকার ও সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশীদ।
ফেইসবুকে তিনজনের একটি ছবি শেয়ার করে এক পোস্টে রিফাত রশীদ লেখেন, “সিনিয়ররা আগেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল, সমন্বয়কদের মাঝে এক গ্রুপকে তুলে নিয়ে গেলে বাকিরা নেতৃত্ব দেবে। কাউকে যদি আটক করে জোরপূর্বক কোনো বিবৃতি আদায় করা হয় তবে আমরা সেটা না মেনে যারা মাঠে থাকব, তারা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
গুজব ছড়াবেন না, স্বজনরা দেখে গেছে: হারুন
হারুন বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলন বন্ধে জোর করে ছয় সমন্বয়কদের দিয়ে বিবৃতি দেওয়ানোর অভিযোগটি গুজব। যারা এই গুজবটি ছড়িয়েছেন তাদের প্রতি অনুরোধ গুজব ছড়াবেন না। ডিবি একটি আস্থার জায়গা। সেখানে কাউকে আটকে রাখা হয় না। জোর করে বিবৃতি নেয়া হয় না।”
নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, "পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আমরা মনে করি যদি কোনো ব্যক্তি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন, আমাদের কাছে আসেন তাহলে আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তাদের দেখভাল করা। সেটাই আমরা করছি।"
ছয় সমন্বয়কের পরিবার তাদের সঙ্গে দেখা করে গেছেন জানিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “ ওদের পরিবার কিন্তু কাল রাতে এসেছিল। আজকেও ডিবিতে এসেছেন। তারা নিজেরাও দেখেছেন ওরা (ছয় সমন্বয়ক) কেমন আছে।
“তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। ওরা যে ভালো আছে সেজন্য ধন্যবাদ দিয়েছে।”
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “খুব শিগগিরই তারা পরিবারের কাছে চলে যাবে।”