“আমাদের বাস চলছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে যাত্রী কম৷ সেজন্য বাসের সংখ্যায়ও কমিয়ে আনা হয়েছে।”
Published : 03 Aug 2024, 09:43 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে দফায় দফায় কর্মসূচি ঘিরে চলমান অস্থিরতায় ঢাকার সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ কমেছে, যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে দূরপাল্লার বাসে।
বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ঢাকায় আসা ও ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন রুটের বাসে যাত্রীখরা দেখা গেছে।
শনিবার ঢাকার দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল, চালক, যাত্রী ও কাউন্টারের বুকিং সহকারীদের সঙ্গে কথা বলে যাত্রী কমার বিষয়টি জানা গেছে।
তারা বলছেন, কখন কোথায় সহিংসতা হয়, সেই আতঙ্কে ঢাকায় যাতায়াত কমেছে মানুষের।
যাত্রী কমায় বাসের নির্ধারিত ট্রিপ ছাড়বে কি ছাড়বে না, এই দোলাচালে চালকদের মধ্যে গাছাড়া ভাব রয়েছে বলে তথ্য এসেছে। চালকদের নির্দিষ্ট সময়ে বাস ছাড়ার কাউন্টারে আসতে মাইকিং করতে শোনা গেছে বৃহস্পতিবার।
শুধু দূরপাল্লার বাস নয়, ঢাকার মধ্যেও গণপরিবহন কম দেখা গেছে, যাত্রীর চাপও স্বাভাবিক দিনের মত নেই। তবে সংখ্যায় কম হলেও বাস ও গণপরিবহন চলছে।
ঢাকার সঙ্গে রংপুরের মধ্যে চলাচল করা নাবিল পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের বুকিং সহকারী ইলিয়াস হোসেন বলেন, “আমাদের বাস চলছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে যাত্রী কম৷ সেজন্য বাসের সংখ্যায়ও কমিয়ে আনা হয়েছে।”
মহাখালী থেকে ছেড়ে যাওয়া নওগাঁগামী একতা পরিবহনের চালক শহীদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত কয়েকদিনের সহিংসতার জেরে মানুষজন খুব কম যাতায়াত করছে। যতটুকু জানতে পারছি, জরুরি প্রয়োজন হলেই কেবল মানুষ যাতায়াত করছে। এজন্য যাত্রী সংকট।
“বৃহস্পতিবার আমাদের ট্রিপগুলো ভরাই যায় সবসময়। কিন্তু গেল বৃহস্পতিবার মাত্র ২২ জন যাত্রী নিয়ে গেছি। লস হচ্ছে। আসলে মানুষের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কায় একটা আতঙ্ক কাজ করতেছে।”
ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাস কমিয়ে আনার তথ্য দিলেন এনা ট্রান্সপোর্টের বুকিং সহকারী ইমন ইসলাম। বিভিন্ন রুটের মত মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটেও যায় এনা তাদের বাস।
ইমন ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “সাধারণত অন্য সময়ে রাতে সিলেটে আমাদের পাঁচ-ছয়টা বাস যায়। এখন যাত্রী একদম নেই বললেই চলে। আজকে শুধু দুইটা বাস ছাড়বে।”
ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাতায়াত করা লাবিবা ক্লাসিক লিমিটেডের চালক জগলুল হোসেন বলেন, “বলতে গেলে আমরা যাত্রীই পাচ্ছি না। বসে থাকতে হচ্ছে আমাদের। বাস চলালেও লাভ হচ্ছে না। খরচের টাকাই উঠছে না।
“আমাদের সঙ্গে ট্রিপে আরও দুইজন থাকেন। তাদেরও একটা অ্যামাউন্ট দিতে হয়। সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এভাবে কয়দিন? খেয়ে-পরেই তো চলতে পারব না। পরিবার আছে। তাদের কী দেব?”
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে রংপুরে যায় এস আর প্লাসের বাস। এই পরিবহনের বুকিং সহকারী শিহাব হোসেনের কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
শিহার হোসেন বলেন, “আন্দোলন শুরুর পর থেকেই ঝামেলাটা হইছে। যাত্রী কম। মাঝে কয়েকটা দিন মোটামুটি যাত্রী পেলেও গত তিন-চার দিন ধরে যাত্রী একদমই কম।”
সায়েদাবাদ থেকে চাঁদপুরের মধ্যে চলাচল করে আল আরাফাহ পরিবহনের বাস। এই পরিবহনের বুকিং সহকারী মোহাম্মদ হোসেনও শিহাবের মত একই কথা বললেন।
মোহাম্মদ হোসেনের ভাষায়- এক সপ্তাহ আগেও ভালোই যাত্রী ছিল। কিন্তু এখন একট গাড়ি গেলে ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী হয়। চালকদের তো বেতন দিয়ে হয়। এতে মালিকের লস হচ্ছে।
যাত্রী সংকট দেখা দিলে অনেক চালকের মধ্যে গাছাড়া ভাব দেখতে পান পরিবহন মালিকরা।
মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম বলছিলেন, ঢাকা থেকে দূরের গন্তব্যে বাস ছাড়ার ব্যবস্থা করলেও কোনো কোনো চালককে নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে আমরা মাইকিং করেছি সব চালককে টার্মিনালে উপস্থিত থাকার জন্য।
“কাউন্টারগুলো থেকে আমাদের বলা হচ্ছিল, যাত্রী সংকটের জন্য ট্রিপ কমার সুযোগ নিয়ে নিয়মিত চালক-সহকারীদের অনেকে বাস ছাড়ার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত থাকেন না। এ জন্য আজ (বৃহস্পতিবার) মাইকিং করে তাদের আসতে বলা হয়েছে।”
এদিকে ঢাকার গাবতীল, মিরপুর, আবদুল্লাহপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রীবাড়ী ও শাহবাগ, মহাখালী, রামপুরা ঘুরে দেখা গেছে গণপরিবহন কম চলাচল করছে। যাত্রীর চাপও সেই অর্থে নেই।
বৃহস্পতিবার মিরপুর ও উত্তরায় বিক্ষোভ মিশিলের অংশগ্রহণকারীরা রাস্তায় অবস্থান নেন। ফলে এসব স্থানে গণপরিবহন চলাচল বিঘ্নিত হয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ায় কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল করতে পারেনি।
সদরঘাট লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, দূরপাল্লার যাত্রবাহী লঞ্চ ও জাহাজে যাত্রীর চাপ কম। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা লঞ্চেও যাত্রী নেই তেমন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনার বিচার, দায়ীদের গ্রেপ্তার ও সাজার দাবিতে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয়ে ওঠা কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৬ থেকে ২১ জুলাই সহিংসতায় শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থীসহ দুই শতাধিক মানুষের খবর দিচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলো। সরকার বলছে, সংখ্যাটি দেড়শ’র মত।
চলমান পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার সরকার পতনের একদফা দাবিতে রোববার অসহযোগের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অসহযোগের রূপরেখায় বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি গণপরিবহন বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে, শ্রমিকদেরও কাজে যেতে মানা করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রোববার দূরপাল্লার বাস চলবে কি না, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন।