হাইওয়ে পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দিয়েছিল, পিবিআই দায়িত্ব নেওয়ার পর তদন্ত নিল ভিন্ন মোড়।
Published : 09 Feb 2023, 06:45 PM
দেড় বছর আগে নরসিংদীতে মাইক্রোবাসের চাপায় নিহত হন দুই যুবক। একে সড়ক দুর্ঘটনা ধরে হাইওয়ে পুলিশ দিয়েছিল মামলার অভিযোগপত্র। এখন পিবিআইর তদন্তে বের হল, এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আর এর কারণ ছিল এলাকার আধিপত্য নিয়ে বিরোধ।
এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তারের পর নিজেদের তদন্তে পাওয়া তথ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন পিবিআই প্রধান বনোজ কুমার মজুমদার।
তিনি তার ধানমণ্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এটাকে সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখ করে হাইওয়ে পুলিশ মাইক্রোবাসের মালিক মো. মাসুম মিয়াকে (৪১)আসামি করে ঘটনার তিন মাস পর সড়ক পরিবহন আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
“কিন্তু নিহত বিপ্লবের ভাই সোহাগ মিয়া আদালতে নারাজি দিলে আদালত পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিলে প্রায় এক বছর তদন্ত করে জানা যায়, এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।”
২০২১ সালের ১২ অগাস্ট নরসিংদীর শিবপুরের লালখারটেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মাইক্রোবাসের চাপায় নরসিংদীর রায়পুরার শাহান শাহ আলম বিপ্লব (৩৪) এবং বেলাব’র মনির হোসেন (৩৪) নিহত হওয়ার খবর আসে। বিপ্লব ও মনির ছিলেন মোটর সাইকেলে। তারা দুজনই ছিলেন বিএনপির স্থানীয় নেতা।
তখন বিপ্লবের ভাই সোহাগ মামলা করলে সেই মামলার তদন্ত করে তিন মাস পর অভিযোগপত্র দেয় হাইওয়ে পুলিশ। তবে সোহাগ মিয়া দেন নারাজি আবেদন। তখন আদালতের আদেশে তদন্তে দায়িত্ব পায় পিবিআই।
পিবিআই কর্মকর্তা আশরাফ আলী জানান, হাইওয়ে পুলিশ তদন্তকালে মাইক্রোবাস চালককে পলাতক দেখিয়ে অভিযোগপত্র দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
“ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে একজন প্রত্যক্ষদর্শীকে পাওয়া গেছে যিনি দেখেছেন ঘটনার পর মাইক্রোবাস যাত্রীরা (যাদের কয়েকজনকে তিনি চেনেন) মোটর সাইকেল আরোহীদের সাহায্য না করে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার কয়েকজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।”
পিবিআইর এসআই আশরাফ আলী এই মামলার তদন্ত করে হত্যার আলামত বের করেন।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গত সপ্তাহে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তার হলেন- মামুন মিয়া (২৬), সোহাগ মিয়া (২০), মাসুদ মিয়া (১৯) ও মাসুম মিয়া (৪১)। এই চারজনের মধ্যে প্রথম তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পিবিআই জানিয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্য বিপ্লব ছিলেন বলে জানান পিবিআই প্রধান বনজ মজুমদার। তার কথায়, বিপ্লবের সঙ্গে থাকায় মনিরকেও হত্যা করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, মামুন মিয়ার সাথে এলাকার আধিপত্য, প্রভাব এবং ডিশ ব্যবসা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল বিপ্লবের।
নিহত বিপ্লবও হত্যামামলার আসামি ছিলেন। খুন হওয়ার দুই বছর আগে ২০১৯ সালের জুন মাসে নরসিংদীর রায়পুরার লোচনপুর বাজারে দুলাল গাজী হত্যাকাণ্ডের মামলা ছিল তার বিরুদ্ধে। আবার সেই মামলায় বিপ্লব গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশকে সহায়তার অভিযোগে দুজনকে পিটিয়ে মেরেছিল তার অনুসারীরা।
বনজ মজুমদার বলেন, বিপ্লব জামিনে বেরিয়ে আসার পর তার এক সময়ের ব্যবসায়িক অংশীদার মামুন এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তখন তিনি বিপ্লবকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন।
“এই হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে মাসুমের মাইক্রোবাসটি নেয় মামুন। ঘটনার সময় এই মাইক্রেবাসে মাসুম না থাকলেও গ্রেপ্তার অন্যরা ছিল, যা তদন্তে উঠে এসেছে।”
দুবার বিপ্লবকে হত্যার পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০২১ সালের ২১ অগাস্ট মামুন সফল হন বলে তদন্ত কর্মকর্তা আশরাফ জানান।
তিনি বলেন, “একবার একজনের জানাজায় আসার কথা থাকলেও বিল্পব সেখানে আসেননি। আরেকবার তার সাথে বেশ কয়েকজন থাকায় সে পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়। পরে মাইক্রোবাসের চাপা দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে সফল হয়।”