রনবী বলেন, “অতিরঞ্জিত’ করে প্রচার করা হচ্ছে”; আয়োজক বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল আলী বলেছেন, রনবীর সম্মান যাতে ব্যাহত না হয় সেই চেষ্টা করা হয়েছে।
Published : 18 Feb 2025, 02:54 PM
চারুকলা অনুষদের এক অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে যোগ দিতে এসে, অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার আগেই এমেরিটাস অধ্যাপক ও চিত্রশিল্পী রফিকুন নবীর (রনবী) ফিরে যাওয়ার যে ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় চলছে, সেই ঘটনার ব্যাখ্যা এসেছে।
বিষয়টি খোলাসা করে চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ঘটনাটি ‘অতিরঞ্জিত’ করে প্রচার করা হচ্ছে।
রণবীকে মঞ্চে উঠতে দেওয়া হয়নি অভিযোগ নিয়ে রফিকুন নবী বলেন, "কেউ কেউ বলছেন, আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা এমন নয়। আমি মঞ্চে উঠলে এখানে একটু গোলমাল হতে পারে। এজন্য আমিই চলে এসেছি।"
অনুষ্ঠানের আয়োজক অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল আলী জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানে রফিকুন নবীকে যাতে অনুষ্ঠানে অতিথি করা না হয় সেই দাবি তুলে চারুকলার বাইরে ‘বিশৃঙ্খলা’ করার চেষ্টা করছিল।
“রনবীর যাতে কোনো অসম্মান যেন না হয়, সেই চিন্তা থেকেই তাকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হলে তিনি আর মঞ্চে উঠেননি।"
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। চারুকলার ওসমান জামাল মিলনায়তনে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল।
এদিন দুপুরে অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে যোগ দিতে উপস্থিত হয়েছিলেন রফিকুন নবী। তবে আয়োজকদের কাছ থেকে ‘আপত্তির কথা শোনার পর’ তিনি অনুষ্ঠানের স্থান ছেড়ে চলে যান।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা তৈরি হয়েছে। চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধুরীসহ অনেকে এই বিষয়টি নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।
কেউ কেউ অভিযোগ করে বলছেন, রনবীকে চারুকলার ‘মঞ্চে উঠতে দেওয়া হয়নি’।
রনবী মঞ্চে উঠলে, অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আসবেন না বলেও প্রচার হচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়।
এ ব্যাপারে জানতে রফিকুন নবীকে ফোন করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ব্যাপারটা একটু অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হচ্ছে। আমাকে মঞ্চে তোলা যাবে না, এটা শোনার পর আমি সেখান থেকে চলে আসি। তারা কেন এটা করলেন, তা তো জানি না।
"কেউ কেউ বলছেন, আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা এমন নয়। আমি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আয়োজকরা জানালেন, আমি মঞ্চে উঠলে এখানে একটু গোলমাল হতে পারে। এজন্য আমিই চলে এসেছি।"
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ।
অনুষ্ঠানের আগেই উপ-উপাচার্যের কার্যালয় থেকে চারুকলা অনুষদকে অধ্যাপক রফিকুন নবীর বিষয়ে আপত্তি জানানো হয় বলেও আলোচনা তৈরি হয়েছে।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম চঞ্চল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, সহউপাচার্যের কার্যালয় থেকে এরকম কোনো নির্দেশনা আসার কথা তার জানা নেই।
আজহারুল ইসলাম বলেন, "অনুষ্ঠানে কারা অতিথি হবেন, সেটা তো বিভাগ থেকেই ঠিক করা হয়। অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের এই অনুষ্ঠানে রফিকুন নবী স্যারকে অতিথি করা হয়েছিল, পরে ওই বিভাগ থেকেই অতিথি হিসেবে স্যারকে 'উইথড্র' করা হয়েছে।"
ঘটেছিল যা
এই বিষয়ে জানতে অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "রফিকুন নবী স্যার তো চারুকলায় ভীষণ সম্মানিত, আমরা সবাই তাকে শ্রদ্ধা করি। রনবীর কোনো অসম্মান যেন না হয়, সেই চিন্তা থেকেই তাকে পরিস্থিতি বলা হলে স্যার আর মঞ্চে উঠেন নি।"
কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল প্রশ্নে ইকবাল আলী বলেন, "চারুকলার বাইরের কিছু লোকজন রফিকুন নবী স্যারকে অতিথি করা নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছিল। পরে আমরা বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে সভা করি। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে স্যারকে বলি।"
বাইরের লোক কারা, আর সহউপাচার্যের কার্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা এসেছিল কী জানতে চাইলে অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, "যারা বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা করছিল, তারা আমাদের চারুকলার কেউ নন। চারুকলার সবাই রফিকুন নবী স্যারকে খুবই সম্মান করেন।"
উপ-উপাচার্যের কার্যালয় থেকে রফিকুন নবীকে মঞ্চে তুলতে বাধা দেওয়ার কোনো নির্দেশনা পাননি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ লিখছেন, ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ছেলে প্রকৌশলী ময়নুল আবেদিনও। রফিকুন নবীর সঙ্গে তিনিও অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে যান।
ইকবাল আলী বলছেন, "ময়নুল আবেদিন আমাদের এই অনুষ্ঠানের মঞ্চে অতিথি তালিকায় ছিলেন না।"
এই বিষয়ে জানতে ময়নুল আবেদিনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল ধরেন নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বিষয়টি যেভাবে ছড়ানো হচ্ছে, এরকম নয়। এটি ভুলভাবে ছড়ানো হচ্ছে।"
এই অধ্যাপকের ভাষ্য, "এই অনুষ্ঠানে রফিকুন নবীকে অতিথি করার কারণে একটা বিশৃঙ্খলা হতে পারে বলে আমাকে কেউ কেউ জানিয়েছেন। রফিকুন নবীর কোনো অসম্মান যেন না হয়, আমি ব্যাপারটি আমার কার্যালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছি, তারা যেন বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে ডিল করেন।
"পরে ওই বিভাগ থেকে আমাকে জানানো হয় রফিকুন নবীকে পরিস্থিতি বলা হয়েছে, তিনি অনুষ্ঠানে থাকবেন না। আমি তখন বলেছি, রফিকুন নবী না থাকলে আমারও যাওয়াটা ঠিক হবে না। তখন তারা আমাকে জানায়, এটা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করে থাকে অনুষ্ঠানটির জন্য। পরে অনুষ্ঠানটা যেন ব্যাহত না হয়, এ চিন্তা থেকে আমি অনুষ্ঠানে যাই এবং সুন্দরভাবেই অনুষ্ঠান শেষ হয়।"
অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "রফিকুন নবী স্যার এই অনুষ্ঠানে ছিলেন না। কিন্তু উনার নামে একটি পুরস্কার কিন্তু দেওয়া হয়েছে। 'রফিকুন নবী স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড' নামে এ বছর থেকেই বিভাগে এই পুরস্কারটি দেয়া হচ্ছে। এটি আমরা অনুষ্ঠানে দিয়েছি।"
অধ্যাপক রফিকুন নবী চলে যাওয়ার পর দুপুরে ওসমান জামাল মিলনায়তনে শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। সহউপাচার্য মামুন আহমেদ সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে এই প্রদর্শনী চলবে। শিক্ষার্থীদের আঁকা বাস্তব ও নিরীক্ষাধর্মী শিল্পকর্ম এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।