তিউনিসিয়া উপকূলে ভাসতে থাকা সেই ৬৪ বাংলাদেশির মধ্যে মিলন বেপারী নামে একজন তিন বছর আগে মামলা করেছিলেন।
Published : 01 Jul 2024, 11:28 PM
ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে নির্যাতন করে তার ভিডিও দেশে ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে পাঠিয়ে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে-সিআইডি।
সোমবার সিআইডির পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া মোহাম্মদ মাহবুব পাঠান একটি মানব পাচারকারী চক্রের হোতা, যার মাধ্যমে অনেক বাংলাদেশি ইউরোপে যাওয়ার নামে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিন বছর আগে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়া উপকূলে ভাসতে থাকা ৬৪ বাংলাদেশিসহ যে ১০৪ জনকে উদ্ধার করা হয়, তারা সবাই মাহবুব পাঠানের পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হন।
সিআইডি বলছে, তিউনিসিয়া উপকূলে ভাসতে থাকা সেই ৬৪ বাংলাদেশির মধ্যে মিলন বেপারী নামে একজন তিন বছর আগে একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় গত শুক্রবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাহবুব পাঠানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
লিবিয়া থেকে মাহবুব দেশে ফিরছেন বলে সিআইডির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে এবং পরে তাকে সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শরীয়তপুরের নড়িয়া থানায় ২০২১ সালে ৯ জুলাই মানব পাচারের অভিযোগে মিলন বেপারীর করা মামলার সূত্র ধরে প্রাথমিক তদন্তের পর সিআইডি জানতে পারে, মাহবুব পাঠানের নেতৃত্বে চক্রটি মিলন বেপারীসহ অন্যদের বাংলাদেশ থেকে বিমানে করে প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। দুবাই থেকে আবার বিমানযোগে মিশর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজীতে নিয়ে যায়।
“লিবিয়ার বেনগাজীতে মাহাবুব পাঠানের ঠিক করে রাখা নির্দিষ্ট ক্যাম্পে নিয়ে আটক রেখে অভিবাসন প্রত্যাশীদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে তা ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
“এ ধরনের ভিডিও পেয়ে মিলন বেপারীর মা ও চাচি মিলে ২০২১ সালের ২ মে মাহাবুব পাঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৩ লাখ টাকা এবং মাহবুব পাঠান চক্রের সদস্য হেনা বেগমকে ৪ লাখ টাকা দেন।”
সিআইডি জানতে পারে পরবর্তীতে নতুন কৌশল এঁটে ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে মাহাবুব পাঠান ও তার সহযোগীরা মিলন বেপারীর মায়ের কাছ থেকে ওই বছরের ১২ মে আরও ৪ লাখ টাকা আদায় করে।
এভাবে শুধু এই মিলন বেপারীর কাছ থেকে তারা ১০ লাখ টাকা আদায় করে। পরে অন্যদের সঙ্গে তাকেও বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১৫ দিন আটকে রেখে ইতালির উদ্দেশে ভূমধ্যসাগরে বাতাসের সাহায্যে চলা একটি প্লাস্টিকের নৌকায় তুলে দেওয়া হয়।
৬৪ বাংলাদেশিসহ ৭৫ জন সাগরভাসা অভিবাসীকে ২০২১ সালের ৩১ মে উদ্ধার করার পর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম এর সহায়তায় তিউনিসিয়া থেকে ৬৪ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়।
সিআইডি বলছে, তাদের তদন্তে বেরিয়েছে যে, মাহাবুব পাঠান দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে লিবিয়ার বেনগাজিতে বসবাস করছেন। সেখানে বাংলাদেশি প্রবাসীদের নেতাও তিনি। তবে তার আড়ালে মানব পাচার চক্র পরিচালনা করেন।
মাহবুব পাঠানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয় এবং সেখানে তিনি তার অপরাধের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।