সচিব পদের নাম বদলাতে সংশোধিত ট্যারিফ কমিশন আইন পাস

সংসদের সাড়ে তিনশ এমপিকে ডেকে এনে, প্রধানমন্ত্রীকে সামনে রেখে একটা শব্দ পরিবর্তন করা অর্থের অপচয় বলে মন্তব্য করেন আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র এমপি পংকজ নাথ।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সচিব পদের নাম পরিবর্তন করতে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) বিল-২০২৪’ সংসদে পাস হয়েছে।

নতুন আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সচিব পদের নাম হবে ‘পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ)।

মঙ্গলবার বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন। জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিল পাসের আলোচনায় জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য সংসদে সমালোচনা করেছেন সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন, সিন্ডিকেট ভাঙা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণ না করায় সরকার বিপদের মধ্যে আছে।

জাতীয় পার্টির এমপি হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, “বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা। টিসিবি নামে একটা সংস্থা আছে যারা বাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করে। উপজেলা পর্যায়ে দেখেছি একটা কার্ড দেওয়া হয়েছে, যার জন্য পাঁচ-ছয়টা পণ্য কিনতে হবে। অনেক মানুষ এটা নিতে পারে না। যা প্রয়োজন নেই সেটাও নিতে হবে, যা প্রয়োজন তাও নিতে হবে।

“এ আইনটি না এনে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কোনো আইন নিয়ে আনতেন, সিন্ডিকেট ভাঙার মত কোনো আইন আনতেন তাহলে মনে করতাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভালো কোনো কাজ করছে।”

বাণিজ্য মন্ত্রলায়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময় তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। যখন তারা যান তখন বাজারটা ঠিক আছে। কিন্তু তারা চলে আসলে আবার যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় চলে যায়। দ্বিগুণ বাড়ে। সিন্ডিকেট ভাঙা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মত ক্ষমতা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আছে বলে আমার জানা নেই।”

বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে বলে জানান হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।

তিনি বলেন, “ওষুধের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকা লাভ করে কোথায় নিয়ে যাবে জানি না। ওষুধ কোম্পানিগুলো শুল্ক ফাঁকি দিয়ে, কম শুল্ক দিয়ে কাঁচামাল নিয়ে আসে কিন্তু আমাদের দেশে দাম বেশি। ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মানুষ সুচিকিৎসা পেত।

“আইন করে ক্যান্সারের ওষুধের দাম, কিডনি চিকিৎসার খরচ কমাবার কথা বলা হচ্ছে। এ কোম্পানিগুলো কি বাইরের? ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি? আমাদের দেশি মালিক। এদের কি বিবেক নেই? কত শতাংশ লাভ করতেছে? ১০০ শতাংশ লাভ করে। যারা দোকানে বিক্রি করে ৩০-৪০ শতাংশ কর দেয়। অনেক ওষুধের মধ্যে দাম লেখা থাকে না। সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন। মানুষের যে হাহাকার অবস্থা, আওয়ামী লীগের এত উন্নয়ন ও অর্জনের পরেও বাজার নিয়ন্ত্রণ না করায় সরকার বিপদের মধ্যে আছে।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র এমপি পংকজ নাথ বলেন, “বিলটিতে জনগণের স্বার্থ নেই। এখানে শুধু শব্দের পরিবর্তন। জনগণের স্বার্থ তখনই থাকত যদি ট্যারিফ কমিশনের দায়িত্ব ভোগ্য পণ্য, নিত্য পণ্যের দাম নির্ধারণ, বাজারে সহজলভ্যতা, আমদানি ও উৎপাদন সমন্বয় করে মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে দেওয়া, সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে গরীব মানুষের কাছে নিত্য পণ্যকে সহজলভ্য করা, সেক্ষেত্রে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ট্যারিফ কমিশনের কাজ।

“ট্যারিফ কমিশন তা না করে শুধু মাত্র সচিবের পদ…গতকালও আমরা ইউনিয়ন পরিষদে সচিব শব্দ বাদ দিয়ে কর্মকর্তা লিখলাম। একটা কাজ করা যায়, সংসদের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পয়সা খরচ না করে একটি প্রশাসনিক আদেশে বলে দেই, সচিব কোথায় কোথায় বলতে হবে, মন্ত্রিসভা বলে দিক, সচিব বলে দিক আমরা করে দেই। একটা মাত্র সচিবের পদ থেকে কর্মকর্তা শব্দের পরিবর্তন করার জন্য সংসদের সাড়ে তিনশ এমপিকে ডেকে এনে, প্রধানমন্ত্রীকে সামনে রেখে শব্দ পরিবর্তন করা অর্থের অপচয়।”