ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে হতাহতদের স্মরণে পালন করা হয় নীরবতা।
Published : 10 Feb 2023, 12:04 AM
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের ৫০ বছরের পথচলা আর বাংলাদেশের মানুষের দৃঢ়তা, সাহস ও এগিয়ে যাওয়ার শক্তি উদযাপনে শুরু হলো আশা জাগানোর উৎসব।
বৃহস্পতিবার ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে ‘হোপ ফেস্টিভাল’ শিরোনামে তিন দিনের এ আয়োজন শুরু হয়।
ব্র্যাকের উন্নয়ন কার্যক্রম, সামাজিক ব্যবসা কর্মকাণ্ড, বিনিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য উদ্যোগসহ দেশে-বিদেশে সংস্থাটির সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের সাথে দেশের নানা প্রান্তে কাজ করে যাওয়া মানুষের মিলনমেলায় সেজেছে উৎসব প্রাঙ্গণ।
উৎসবে আগত দর্শক ও অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানিয়ে স্টেডিয়ামের ফটক খুলে দেওয়া হয় বেলা ১১টায়। বিভিন্ন স্টল, উন্মুক্ত মঞ্চ, ইমারসিভ এক্সপেরিয়েন্স সেন্টারের পাশাপাশি শিশুদের জন্য সেখানে আছে বিশেষ জোন।
প্রথম দিনের উৎসবে জাতীয় সঙ্গীতের পর তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবনভিত্তিক একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে প্রথম দিনের আয়োজনে দর্শকরা বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের রাগ পরিবেশনা উপভোগ করেন। পুঁথিপাঠ পরিবেশন করেন অভিনয়শিল্পী ফজলুর রহমান বাবু ও তার দল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের গল্প ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের অসামান্য অবদানকে সম্মান জানিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র আবেগাপ্লুত করে দর্শকদের।
নানা সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ব্র্যাকের সহায়তায় এগিয়ে চলা আধুনিক সময়ের নারী যোদ্ধাদের গল্পও তুলে ধরা হয় একটি পরিবেশনার মাধ্যমে।
এছাড়া স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ ডা. আফসানা আক্তারের জীবন সংগ্রাম মঞ্চে উপস্থাপন করে নাট্যদল ‘প্রাচ্যনাট’। পেশাগত জীবনের এই পর্যায়ে পৌঁছাতে তিনি যে সংগ্রাম আর বৈষম্যের মুখোমুখি হয়েছেন, সে সব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘প্রতিদিনের যোদ্ধা’ নামের এই মঞ্চনাটকে।
অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস ও লালন ব্যান্ডের সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের কার্যক্রম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল মতিন এসেছিলেন বন্ধুদের নিয়ে। উৎসবের প্রথম দিনের পরিবেশনা চলাকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “অর্ণব আর লাল ব্যান্ডের গান শুনতেই বন্ধুদের নিয়ে আসা। তবে ফজলুর রহমান বাবুর পুঁথিপাঠটাও মিস করতে চাইনি।
“একটা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ৫০ বছর পূর্তিতে এমন আয়োজন মুদ্ধতা ছড়িয়েছে। বিশেষ করে দেশের লোকজ সংস্কৃতি তুলে এনে তার মাধ্যমে দেশের ইতিহাস ও ব্র্যাকের কার্যক্রম জানানোর কনসেপ্টটা আমার কাছে ইউনিক লেগেছে। বিভিন্ন কর্মশালার বিষয়টিও ভালো লেগেছে।”
মিরপুর থেকে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন গৃহবধু আসমা আরা মুনা। তিনি বলেন, “আমার বাচ্চারা খুবই মজা পেয়েছে। ভেবেছিলাম শুধু ব্রাকের বিভিন্ন কাজ কর্ম দেখাবে। এসে দেখছি শিশুদের খেলাধুলাসহ দারুণ সব আয়োজন। আমার বাচ্চারা আনন্দ নিয়ে দিনটা পার করছে।”
লালন ব্যান্ডের টানে উৎসবে আসা সংস্কৃতি কর্মী রুহুল আমিন বলেন, “লালনের গান আমার বরাবরই ভালো লাগে। বেশি ভালো লাগে সুমি আপুর গলায়। বেশ কিছুদিন ধরেই ব্যান্ডটির পারফর্মেন্স দেখার জন্য উম্মুখ হয়ে ছিলাম।
“হোপ ফেস্টিভালে লালন ব্যান্ড আসবে শুনে রেজিস্ট্রেশন করি। তাদের গান খুব এনজয় করেছি। পরে দেখব বলে ভিডিও করে রেখেছি। কনসার্টের পার্ট ছাড়াও উৎসবের সবকিছুই খুব মজার ছিল।”
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদা মাহা এসেছেন আড়ংয়ের গহনা তৈরির কর্মশালায় অংশ নিতে। তিনি বললেন, “অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। এ ধরণের আয়োজন মাঝে মাঝে হলে ভালোই হয়। নানা কিছু যেমন শেখা যায়, উৎসব মুখর একটা সময় পাওয়া যায়।”
উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন সাজানো হয়েছে ‘সম্ভাবনার শক্তি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে। এদিন মূল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা হাসান আবেদ।
সব মানুষের সমান অধিকারের দাবি তুলে ধরে পরিবেশনা নিয়ে আসবে ‘সমতন্ত্র’। এছাড়াও থাকবে, যাত্রিক-এর নৃত্যনাট্য এবং আড়ং-এর ফ্যাশন শো। পাশাপাশি সঙ্গীত পরিবেশন করবেন রেনেসাঁ, ফিডব্যাক, ইমন চৌধুরী অ্যান্ড ফ্রেন্ডস, মিফতাহ জামান এবং গার্ল পাওয়ার ব্যান্ড।
হোপ ফেস্টিভালে ব্র্যাকের সহআয়োজক হিসাবে আছে- বিকাশ, ব্র্যাক ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।