ঢাকা ও করাচির মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু করতে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ এসেছে-যেটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
Published : 21 Nov 2024, 10:36 PM
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রায় চার মাস পর ভারতের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে ডিসেম্বরে; ঢাকায় ওই বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুদেশের সম্পর্কে ‘গতিশীলতা’ আসবে বলে আশা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান বলেন, ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ (এফওসি) নামে পরিচিত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে ডিসেম্বরে। তবে এর দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি।
“আমরা আশা করছি, এই ‘এফওসি’ হওয়ার মাধ্যমে আমাদের দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কটা গতিশীলতা পাবে।”
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক পর্যালোচনায় নিয়মিত আলোচনার প্ল্যাটফর্ম এফওসি। ২০২৩ সালের নভেম্বরে দিল্লিতে সর্বশেষ এফওসি হওয়ায় পরের বৈঠক ঢাকাতে হওয়ার কথা।
বৈঠকে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি নেতৃত্ব দেবেন তার দেশের।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নে তৌফিক হাসান বলেন, “এটি আসলে দুদেশের যে নিয়মিত কূটনৈতিক যোগাযোগ, তার একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এফওসি বা ফরেন অফিস কনসালটেশন।
“এটি গত বছর নভেম্বরে দিল্লিতে হয়েছিল, যে কারণে এবার ঢাকায় হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসে হবে, এটুকু জানা গেছে। তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ বা সময় নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ চলছে। সেটা হয়ত আমরা পরে জানতে পারব।”
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে উড়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন তিনি।
দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ টাইব্যুনালেও তার বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ‘গণহত্যার’ দুটি অভিযোগে হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাকে ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও অন্য আসামিদের আদালতে হাজির করার নির্দেশও এসেছে।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করার কথা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দিন বলেছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তবে সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চায়নি অন্তর্বর্তী সরকার।
শেখ হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকার বা আদালতের কোনো পক্ষ থেকে কোনো চিঠি পেয়েছে কি না, বৃহস্পতিবার এমন প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, “এটা একটা রাজনৈতিক বিষয়। কাজেই সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হবে আমরা তখনই কাজ করব। আমরা আসলে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো অনুরোধ পাইনি। পত্রিকার মাধ্যমে দেখেছি, ইন্টারপোলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
“যেহেতু এটা পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয় সেহেতু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাওয়া ভালো। তবে আমরা কিন্তু এখনও কোনো নির্দেশনা পাইনি। যথাযথ ব্যবস্থার বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানাব।”
এফওসিতে এটা নিয়ে আলোচনা করার অবকাশ থাকবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তখন হয়ত পরিষ্কার হবে, আমরা আসলে কী চাই।”
শেখ হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে প্রত্যর্পণ চুক্তির প্রশ্নে তৌফিক বলেন, “এফওসিতে প্রত্যর্পণের বিষয়টি আসবে কি না, সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। মাত্র একটা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। এটার উপর ভিত্তি করে সামনে হয়ত… ডিসেম্বরে আমরা চিন্তা করছি, সেক্ষেত্রে সময় এখনও আমাদের হাতে আছে। পরবর্তীতে হয়ত বিষয়টি আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন।”
আলোচনায় অগ্রাধিকারের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “কী বিষয়ে আলোচনা হবে এটা দুই দেশ মিলে ঠিক করবে। সাধারণত যেটা হয় সব বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা হয়। কেবল নির্দিষ্ট বিষয় আসবে সে রকম নয়।
“সাধারণত বর্তমান যে সম্পর্ক সেটার বিষয়গুলো আসে, ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক সম্প্রসারণের কী কী ক্ষেত্র চিহ্নিত করা যায় সেই বিষয়গুলোও আসে। কাজে এই মুহূর্তে ঠিক বলা যাচ্ছে না যে ঠিক কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হবে। বলা যায় দুদেশের সম্পর্কের সব বিষয় স্থান পাবে।”
ভিসা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “যাতে অচিরেই এই ভিসা সমস্যার সমাধানে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।”
ভিসা সেন্টার খোলার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি আছে কি না, এমন প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, ”ভিসা সেন্টার আসলে খোলা আছে। তারা এখন মেডিকেল ও শিক্ষার্থী ভিসাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বারবার তারা জনবলের অভাবের কথা বলে আসছে। আমরা আশা করি, তারা এ সমস্যা সমাধানে ভবিষ্যতে যথার্থ পদক্ষেপ নেবেন।”
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এই বৈঠক কোন দেশের আগ্রহে হচ্ছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘উভয়পক্ষের সম্মতিতে’ এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আরেক প্রশ্ন তিনি বলেন, ভারতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চলছে বলে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনকে নানা সময়ে বলেছেন।
“আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এটি জানিয়েছি যে, আমাদের দুই দেশের পারস্পরিক যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার মোটেই কাম্য নয়।”
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি ও সমঝোতা পুনর্বিবেচনা বিষয়ক এক প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, “ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যেসব অ্যাগ্রিমেন্ট ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে সেগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত। সে কারণে সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সেটা একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
“গত ১০০ দিনে হয়ত এ ব্যাপারে অগ্রগতি সীমিত। কিন্তু আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়ার অবকাশ রয়েছে।”
ভারতের কাছ থেকে ট্রানজিট ফি হিসেবে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত কত টাকা পেয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ট্রানজিটের বিষয়টি আসলে একাধিক মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত। এখানে যেমন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আছে, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় আছে, এখানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয় আছে। তাদের সবার সাথে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। এখানে আমাদের কাছে এই পর্যন্ত রেডি রেফারেন্স এই মুহূর্তে নেই।”
ঢাকা ও করাচির মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগের উদ্যোগের বিষয়ে এক প্রশ্নে তৌফিক হাসান বলেন, “এ ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি আমরা একটি অনুরোধ পেয়েছি, যেটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা আমাদের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এ ব্যাপারে হয়ত পরবর্তী আপডেট জানা যাবে।”
বিগত সরকারের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসে আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে নিয়ে এক প্রশ্নে তৌফিক হাসান বলেন, “একটা প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। এ বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আরও অধিকতর তদন্তের একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই তদন্ত দ্রুতই সম্পাদিত হবে। দ্বিতীয় দফা তদন্তের প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”