২০১৮ সাল থেকে ২৫ মার্চ রাতে প্রতীকী ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ।
Published : 25 Mar 2025, 11:16 PM
একাত্তরে বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বিভীষিকার ভয়াল রাতটি আলো নিভিয়ে স্মরণ করল বাংলাদেশ।
সারাদেশে রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত বাতি নিভিয়ে এক মিনিটের ‘প্রতীকী ব্ল্যাকআউট’ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ১০টা ছুঁতেই রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি স্থাপনার আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি স্থাপনাগুলো বাদে ক্যাম্পাসের স্থাপনাগুলোর বাতি নিভিয়ে স্মরণ করা হয় নিহতদের।
একাত্তরের ২৫ মার্চে রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মরণে ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের প্রস্তাব ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়।
পরের বছর থেকে প্রতি ২৫ মার্চ রাতে প্রতীকী ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি পালন করে আসছে বাংলাদেশ। সরকার পরিবর্তন হলেও সেই কর্মসূচির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স মাঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা পাওয়ার পর মুক্তিকামী জনতার মধ্যে বিদ্রোহ দানা বাঁধতে থাকে। অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিধনযজ্ঞের প্রস্তুতি নেয়।
বাঙালির মুক্তির আন্দোলনকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, শুরু হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’।
সেই অভিযানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, রমনা কালীমন্দিরসহ বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় গণহত্যা। শুধু ঢাকাতেই অন্তত ৭ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়।
পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। সশস্ত্র সংগ্রামে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আসে স্বাধীনতা।
গণহত্যা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনী প্রধান আলাদা বাণী দিয়েছেন।
ঢাবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অনুপস্থিত ‘পাকিস্তান’
মঙ্গলবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জনসংযোগ বিভাগ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা দিবস পালিত’ শিরোনামে ৩৫৮ শব্দের ওই বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তবে সেখানে গণহত্যা কারা চালিয়েছ, সে কথা ছিল না।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত্রি স্মরণে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে সন্ধ্যায় স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে মোমবাতি প্রজ্বলন ও শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে হয় আলোচনা সভা।
সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “১৯৭১ সালের ২৫মার্চের গণহত্যা ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম গণহত্যার একটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এ গণহত্যা আরও বেদনাবিধুর। কেননা, এই গণহত্যায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অনেক সদস্যকে আমরা হারিয়েছি।
“অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। দেশটি স্বাধীন হয়েছে বলেই আমরা আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছি। এই স্বাধীনতার পেছনে অকুতোভয় বীরসেনানীদের চরম আত্মত্যাগ রয়েছে। এই বীরসেনানীদের প্রতি আমাদের দায় আছে, রক্তের ঋণ আছে। রক্তের এই ঋণ আমাদের প্রতিদিন স্মরণ করতে হবে।”
উপাচার্য বলেন, “বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার ধারাবাহিকতা আছে। এগুলো আমাদের জাতীয় জীবনের পরিচয় প্রদানকারী একেকটি মাইলফলক।
“বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং ন্যায্যতার প্রশ্নে প্রতিবারই আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। এসব গৌরবময় ইতিহাস আমরা যেন ভুলে না যাই। আমরা যেন বিভাজিত না হই। জাতীয় স্বার্থে আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি।”
আলোচনা সভার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে জগন্নাথ হল গণসমাধিতে মোমবাতি প্রজ্বলন ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।