গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরীর ৫০টি থানা এলাকায় ৫৫০টি টহল দলের দায়িত্ব পালনের তথ্য দিয়েছে পুলিশ
Published : 27 Feb 2025, 11:52 PM
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সারাদেশে যৌথবাহিনীর চলমান ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ ১৯তম দিনে ৭৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিশেষ এই অভিযান শুরুর পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ১৮ দিনের আলাদা যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, তাতে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তরের এক বার্তায় বলা হয়েছে, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সর্বমোট ১ হাজার ৬৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর মধ্যে অন্য মামলা ও পরোয়ানার ভিত্তিতে ৯১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অভিযানে একটি শ্যুটারগান, একটি কার্তুজ ও দুইটি চাকু উদ্ধারের তথ্য দেওয়া হয়েছে বার্তায়।
যৌথবাহিনীর এই অভিযান শুরুর পর ১৯ দিনে সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৯ হাজার ৩৯৬ জন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর এবং কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনার পর বিশেষ অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয় সরকার।
৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে দেশ ‘অস্থিতিশীলকারীদের’ ধরতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের এ অভিযানে নামে যৌথবাহিনী।
অভিযান শুরুর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিলেও ‘ডেভিল হান্টে’ পৃথক গ্রেপ্তারের তথ্য দেয়নি পুলিশ।
পরদিন থেকে গত ১৮ দিনে পৃথকভাবে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’সহ অন্যান্য অভিযানে সর্বমোট গ্রেপ্তারের তথ্য দিচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর। সে হিসাবে এই কদিনে সারাদেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১০ হাজার ৫ জনকে।
ঢাকায় ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৫০০ টহল টিম
যৌথবাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ মধ্যেই ছিনতাই, ধর্ষণের মত অপরাধ বাড়ায় ঢাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার থেকে ঢাকায় টহল ও তল্লাশিচৌকি বাড়িয়ে ‘তৎপরতা’ বাড়ানোর কথা জানিয়েছে পুলিশ।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরীর ৫০টি থানা এলাকায় ৫৫০টি টহল দলের দায়িত্ব পালনের তথ্য দিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকার বিভিন্ন ‘গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত’ স্থানে ডিএমপি ৬৫টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করেছে।
এর পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ স্থানে সিটিটিসির ১৪টি, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের ১২টি এবং র্যাবের ১০টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া ডিএমপির সাথে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এপিবিএন ২০টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করে।
ডিএমপি বলছে, গত ২৪ ঘন্টায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত মোট ২৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে ১৩ জন ডাকাত, ৩২ জন পেশাদার ছিনতাইকারী, ছয়জন চাঁদাবাজ, ১৯ জন চোর, ২৮ জন চিহ্নিত মাদক কারবারি, ৪১ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত অপরাধীরা।
অপরাধ প্রবণ এলাকায় ‘জোরদার অভিযান’ চালানোর সিদ্ধান্তের পর মধ্যরাত ও ভোরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ খোদ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঢাকার বিভিন্ন তল্লাশিচৌকি, টহল ও থানা পুলিশের কার্যক্রম পরিদর্শন করে নানা ‘নির্দেশনা’ দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার ভোরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাজধানীর চারটি থানা (মিরপুর, দারুসসালাম, আদাবর ও মোহাম্মদপুর) পরিদর্শন করেন বলে তথ্যবিবরণীতে জানানো হয়েছে।
গুলশান থানায় দায়িত্বে অবহেলা করায় বুধবার একজন এসআই ও একজন কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা জানিয়েছেন উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর।
তথ্যবিবরণী অনুযায়ী, উপদেষ্টা বারিধারা ডিওএইচএসের বাসা থেকে বের হয়ে ইসিবি চত্বর, কালশী, পল্লবী, মিরপুর-১০ হয়ে মিরপুর থানায় পৌঁছান।
পরিদর্শন শেষে সেখান থেকে মিরপুর-১ হয়ে দারুসসালাম থানায় যান। দারুসসালাম থানা থেকে টেকনিক্যাল মোড়, শ্যামলী হয়ে আদাবর থানা ও মোহাম্মদপুর থানা পরির্দশ করেন।
পথে জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার চেকপোস্ট ও কালশী মোড় চেকপোস্ট পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিং করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের অফিসারদেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ফোর্স ও টহলের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
তিনি বলেন, “রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্থাপিত চেকপোস্টগুলোও ফাংশন করছে। যৌথবাহিনীর অপারেশনও ভালোভাবে চলছে।”