মহাসপ্তমীর সকালে স্থাপন করা হয় নবপত্রিকা। নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে বিবেচনা করা হয়।
Published : 10 Oct 2024, 01:59 PM
সাত জনমের পাপমোচনের প্রত্যাশা নিয়ে নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের সপ্তমী পূজায় অংশ নিলেন ভক্তরা।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ৫৩ মিনিটে এ পূজা শুরু হয়, শেষ হয় ১০টায়। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় ও উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী পূজা পরিচালনা করেন।
ভক্তরা দেবীদুর্গার চরণে অঞ্জলি দেন। কেউ কেউ দেবীর পদজলে উপবাস ভেঙে প্রার্থনা করেন।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সপ্তমীতে পূজা দিলে সপ্তজনমের, মানে সাত জনমের পাপ মোচন হয়ে যায়।"
বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমীর সকালে প্রথমে নবপত্রিকা স্থাপন করা হয়। ‘নবপত্রিকা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান এই নয়টি উদ্ভিদকে পাতাসহ একটি কলাগাছের সঙ্গে একত্র করা হয়।
পরে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম ‘কলাবউ’।
নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে বিবেচনা করা হয়। এই নয় দেবী একত্রে ‘নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা’ নামে ‘নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমোঃ’ মন্ত্রে পূজিত হন।
নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। দুর্গাপ্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন উপচারে দেবীকে স্নান করানো হয়।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এবার তিথির কারণে একদিন আগেই মঙ্গলবার বোধন এবং পরদিন অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বোধন হল উপলব্ধি করা যে তিনি এসেছেন। অধিবাস হল আমন্ত্রণ জানানো যে আমরা পূজা করব। আর সপ্তমী থেকে মূলত পূজা শুরু।"
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ষষ্ঠী থেকেই আমাদের উৎসব শুরু হলেও উৎসবের আনন্দটা পুরোদমে শুরু হয় সপ্তমী থেকে। মায়ের আগমনে আমরা আনন্দ করব এবং বিশ্বশান্তির জন্য মঙ্গল কামনা করবো।"
এবার সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় পূজা হওয়ায় সবাই ‘নিরাপদ’ অনুভব করলেও সবার মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হওয়ার আহবান জানান কাজল দেবনাথ।
তিনি বলেন, "পুরো দেশের মানুষ আমরা একটা পরিবার। এই দেশে সব ধর্মের মানুষ নিরাপদে তাদের ধর্মচর্চা করবেন বলে আশা করি। সব রাজনৈতিক দল এবং মানুষের মাঝে সম্প্রীতির ঐক্য দরকার। সবাই মিলে একটা পরিবার হয়ে থাকতে পারলে আমাদের কাউকেই আর অনিরাপদ অনুভব হবে না। সবার মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং শুভবোধ জাগ্রত হোক।"
ভক্তদের অনেকেই এদিন দেবীকে অঞ্জলী দিতে মণ্ডপে আসেন। সপ্তমীর দুপুরে ভক্তদের জন্য প্রসাদ বিতরণ করা হবে বলে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের দপ্তর থেকে জানানো হয়।
মন্দির কর্তৃপক্ষ জানায়, এবার তিথির কারণে অষ্টমী পূজাও আগে হবে। শুক্রবার সকাল ৬টার আগে অষ্টমী পূজা শেষ করতে হবে এবং ৮টার মধ্যে সন্ধি পূজা শেষ করতে হবে।
এ বছর দেবীদুর্গার আগমন হয়েছে দোলায় বা পালকিতে এবং দেবী কৈলাসে ফিরবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়।
পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে এবার দুর্গা পূজা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫২টি মণ্ডপ ঢাকায়।