ইন্টারনেট বন্ধের সুযোগ না রাখার বিষয়টি বিশ্বকে দেখানোর দরকার আছে, বলেন তিনি।
Published : 20 Apr 2025, 12:09 AM
বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধের যে বিধান রয়েছে, সেটি বাতিল করে দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ ‘স্ক্র্যাপ’ করে সেটাকে সম্পূর্ণভাবে ‘রিভিজিট’ করব। সেখানে ইন্টারনেট বন্ধ করার সব ধরনের মেকানিজম, কালাকানুন বন্ধ করে দিব। বিশ্বকে এটা দেখানোর দরকার আছে।”
ইন্টারনেট সেবা বন্ধের যে বিধান রয়েছে, তা বন্ধে এর আগেও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন ফয়েজ আহমদ।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি মিলনায়তনে এক বৈঠকে আবার বিষয়টি তোলেন তিনি।
জুলাই আন্দোলনের মধ্যে ইন্টারনেট বন্ধের প্রভাব তুলে ধরে তিনি বলেন, “যেহেতু জুলাইয়ের ঘটনায় একটা কলঙ্কিত চ্যাপ্টার হয়েছে। (ইন্টারনেট বন্ধের কারণে) আমাদের রেমিটেন্স কমে গেছে। আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের ব্যাংকিং ক্রেডিট রেটিং কমে গেছে।”
নেতিবাচক প্রভাবের কারণে ইন্টারনেট বন্ধের সুযোগ না রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “সেজন্য আমাদের বিশ্বে দেখানোর দরকার আছে যে, ‘উই হ্যাভ ডান সামথিং সিগনিফিকেন্ট’। আমাদের ইন্টারনেট আর বন্ধ হবে না, এটার একটা গ্যারান্টি। আমাদের বিনিয়োগকারীদেরকে দেখানোর একটা বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে, সেটা আমরা করব।”
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৯৭(২) ধারা অনুযায়ী সরকার ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থে’ টেলিযোগাযোগ সেবা নির্ধারিত সময়ের জন্য স্থগিত বা সংশোধন করতে পারে। এ সুযোগ নিয়েই বারবার ইন্টারনেট বন্ধ করা হত।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ করে আওয়ামী লীগ সরকার। জুলাই মাসে টানা ৫ দিন পুরো দেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল টানা ১০ দিন। এর বাইরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। অগাস্ট মাসে সরকার পতনের ঠিক আগেও ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়।
আরও পড়ুন
স্টারলিংকেও থাকছে আড়ি পাতার সুযোগ, যখন তখন বন্ধও করা যাবে
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা তদন্তের কমিটি পরে জানতে পারে, আন্দোলন থামাতে তখনকার টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশেই ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে একবার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ইন্টারনেট বন্ধের অভিযোগ ওঠে। খাগড়াছড়িতে সেসময় সংঘর্ষ চলছিল।
ইন্টারনেট সেবা বন্ধের অভিযোগ অস্বীকার করে বিটিআরসি তখন ব্যাখ্যায় বলে, খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষ আর অগ্নিসংযোগের মধ্যে টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়া দুটি কোম্পানির অপটিক্যাল ফাইবার কাটা পড়ে। এর ফলে মোবাইল অপারেটর রবির ১৬টি টাওয়ার নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, ইন্টারনেট সেবা বন্ধের সুযোগ না রাখার জন্য তারা কাজ করছে। তবে সম্প্রতি স্যাটেলাইটনির্ভর ইন্টারনেট সেবার যে নির্দেশনা জারি করেছে সরকার, সেখানেও টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধের সুযোগও রয়েছে।
‘বাংলাদেশের ইন্টারনেট কোয়ালিটি সবচেয়ে নিকৃষ্ট’
আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি অডিটরিয়ামে ‘টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক- বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘ইন্টারনেট সেবা: সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কথা বলছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
এসময় টেলিযোগাযোগ খাতের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে টাকার বস্তা নিয়ে এসে আপনারা পলিসি ‘ইনফ্লুয়েন্স’ করবেন না। এটা কেউই করবেন না। এই ‘ম্যাল প্র্যাকটিসটা’ থেকে সরে আসবেন।”
দেশে ইন্টারনেট সেবার মান অনুযায়ী দাম বেশির কথা তুলে ধরে ব্যবসায়ীদের প্রতি তিনি বলেন, “আপনারা যারা ইন্টারনেট ব্যবসা করেন, ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন, আপনারা সবসময় দাবি করেন যে বাংলাদেশের ইন্টারনেট এই অঞ্চলের মধ্যে বা বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ডের তুলনায় অনেক সস্তা। কিন্তু এই দাবিটাকে আমি সরাসরি খারিজ করছি।
“খারিজ এজন্য করি যে, বাংলাদেশের যে ইন্টারনেট কোয়ালিটি, এই কোয়ালিটিটা পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট। এই নিকৃষ্ট পণ্য আপনি একটা মধ্য মানের ভ্যালুতে বিক্রি করেন। অর্থাৎ আপনি যদি এখানে কোয়ালিটি অনুযায়ী দাম দেখেন, তাহলে বর্তমান বেঞ্চমার্কে এটার দাম আসবে অনেক বেশি। সেই দিক থেকে আমি মনে করি, বাংলাদেশের ইন্টারনেটের কোয়ালিটি বিবেচনায় এর দাম পৃথিবীর অন্যতম। সবচেয়ে বেশি। সেজন্য আমি এ দাম কমানোর কথা বলি।”