মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
Published : 16 Jan 2024, 10:56 PM
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে হাই কোর্টের একটি রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে গত ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ কথা বলা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বনাম রাষ্ট্র মামলার আট পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এ রায় সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে।
বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ১০ জানুয়ারি ফখরুলের জামিন প্রশ্নে রুল খারিজ করে এ রায় দেয়।
ওই দিন শুনানির পর রুল খারিজ করে এ রায় দেয় ওই বেঞ্চ। এতে করে সেদিন ওই মামলায় জামিন হয়নি বিএনপি মহাসচিবের।
প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, “মামলার নথি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে বিচারিক আদালত সিডিটি (কেস ডকেট-মানচিত্র, সূচিপত্র, রাষ্ট্রপক্ষের ১৬১ ধারায় জবানবন্দির নথিসহ অন্যান্য কাগজপত্র) দেখেছে এবং মামলায় অভিযুক্ত আবেদনকারীর সম্পৃক্ততা পেয়েছে। মামলাটি এখনও তদন্তাধীন থাকায় আমরা বলতে পারি যে বিশেষ করে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা এবং ওই বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশের অভিযোগগুলো সত্যিই অত্যন্ত গুরুতর। প্রধান বিচারপতি প্রজাতন্ত্রের তিনটি অঙ্গের একটির প্রধান। তাই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগ রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে আমরা মনে করি।”
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আসামিপক্ষের আইনজীবীর দাবি ছিল, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান বিচারপতির বাসভবন থেকে অনেক দূরে ছিলেন। কিন্তু বরেন্দ্র কুমার ঘোষ ও অন্যান্য বনাম সম্রাট, যা পোস্ট অফিস কেস নামে পরিচিত, মামলার (প্রিভি কাউন্সিল, ২৩ অক্টোবর ১৯২৪) সিদ্ধান্ত ছিল-একজন ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা দেওয়ার কারণে দণ্ডবিধির ৩৪ ধারার অধীনে দায়বদ্ধ হতে পারে। মেজর মো. বজলুল হুদা (আর্টিলারি) এবং অন্যান্য বনাম রাষ্ট্র মামলার, যা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা নামে পরিচিত, ক্ষেত্রেও একই দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছিল। আমরা মনে করি যে একজন ব্যক্তি তার অনুসারীদের অনেক দূর থেকে আদেশ দিতে পারেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, “অভিযুক্ত আবেদনকারী (মির্জা ফখরুল) দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন করছেন, যাকে তিনি জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলন দাবি করে আসছেন। দুর্ভাগ্যবশত, বিগত কয়েক মাসে দেখা গেছে যে কথিত ওই ভোটাধিকারের দাবি দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে যুক্ত হয়েছে যাতে প্রাণহানি, অগ্নিসংযোগ, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনকারী সরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহন, পুলিশের গাড়িতে হামলার মতো ঘটনা রয়েছে।
“আবেদনকারী বিপর্যয়কর ও উচ্ছৃঙ্খল এসব ঘটনার পরিকল্পনাকারী বা তার কোনো ভূমিকা ছিল কি না, সে বিষয়ে কেবল সুষ্ঠু তদন্তের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। তদন্তের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে এই পর্যায়ে তার মুক্তির জন্য জামিন দেওয়া সহায়ক হবে না বলে আমরা মনে করছি। মামলায় কিছু ধারা আছে জামিন অযোগ্য। প্রজাতন্ত্র ও জনগণের নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা রুলটি খারিজ করছি।”
তবে আবেদনকারী ফখরুল অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ চলাকালে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে রমনা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। মামলায় ফখরুল ছাড়াও দলটির ৫৯ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২৯ অক্টোবর থেকে কারাগারে আছেন বিএনপি মহাসচিব।
এরপর ঢাকার হাকিম ও জজ আদালতে ফখরুলের জামিন আবেদন নাকচ হওয়ায় গত ৩ ডিসেম্বর হাই কোর্টে এসেছিলেন তার আইনজীবীরা।
চার দিন পর ৭ ডিসেম্বর শুনানিতে জামিন না দিলেও হাই কোর্ট রুল দিয়েছিল। মির্জা ফখরুলকে কেন জামিন দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে। সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। পরে ১০ জানুয়ারি শুনানি শেষে রুল খারিজ করে দেয় হাই কোর্টের ওই বেঞ্চ।