রাজধানীর উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের উড়াল সড়কের একটি অংশে গার্ডার তোলার সময় ক্রেনটি কাত হয়ে গেলে ভারী গার্ডারটি ‘উল্টো ঘুরে’ রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া গাড়ির ওপর পড়লে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
‘যান্ত্রিক ত্রুটির’ কারণে ক্রেনটি ‘ভারসাম্য হারিয়ে’ কাত হয়েছে বলে ধারণা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে ক্রেনের অপারেটর পালিয়ে যাওয়ায় ওই সময় ঠিক কী ঘটেছিল তা সুষ্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক ও সওজের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে ডটকমকে জানান, ক্রেন দিয়ে গার্ডার ওঠানোর সময় সবগুলো লেইন বন্ধ করে একটি লেইনে গাড়ি চলাচলের জন্য রাখা হয়। কিন্তু সেখানে গাড়ির চাপ বেশি থাকলে যে লেইনে গাড়ি চলার কথা না সেখানেও গাড়ি চলে যায়।
দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সময় ক্রেনটি ঘুরে ঠিক উল্টো দিকে প্রাইভেটকারের ওপর পড়েছে।
“আমার ধারণা স্লিপ করে ঘুরে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে গেছে। গাড়ির ওপর পড়েছে।”
সোমবার উত্তরার জসিম উদ্দিন রোডে বিআরটির উড়াল সড়কের অংশে একটি গার্ডার তোলার সময় সেটি পড়ে গিয়ে প্রাইভেটকারকে চাপা দেয়। এতে গাড়ির ভেতরে থাকা পাঁচজনের মৃত্যু হয়; আহত হন দুইজন।
দুর্ঘটনার পরপরই ওই ক্রেনের অপারেটর পালিয়ে যান।
গাড়ির ওপর পড়া গার্ডারটি সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বন্দর থেকে আরেকটি ক্রেন এনে সরানো হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, যে ক্রেন দিয়ে গার্ডার তোলা হচ্ছিল সেটি কোবেলকো-৭০৮০ মডেলের। ওই ক্রেনটি ৮০ টন পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উত্তরা এলাকায় বিআরটিএর উড়াল সড়ক হচ্ছে বর্তমান সড়কের মাঝ বরাবর। আর প্রাইভেটকারটি যাচ্ছিল রাস্তার একপাশ দিয়ে। সোমবার বিআরটি একটি গার্ডার তোলার সময় এক পাশে কাত হয়ে যায় সেটি। গার্ডারটি একপাশে কাত হয়ে একটি প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে।
অতিরিক্ত ওজনের কারণে ক্রেনটি কাত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে ডটকমকে বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে ক্রেনটি একদিনে হেলে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
“এই ক্রেন দিয়ে আরও গার্ডার তোলা হয়েছে। তার মানে গার্ডারের ওজন তোলার ক্ষমতা ওই ক্রেনের আছে। কোনো মেকানিক্যাল ফল্টের কারণে ক্রেনটা কাত হয়েছে গেছে। ক্রেনটা চলে চেইনের ওপর, চেইন থেকে স্লিপ করতে পারে।”
দুর্ঘটনার পর গার্ডার সরানোসহ ক্রেনটি উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।
গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় এ উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের দুটি অংশ।
মূল প্রকল্প গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত যেটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। আর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অংশ উত্তরা হাউজ বিল্ডিং হতে টঙ্গী চেরাগ আলী মার্কেট পর্যন্ত।
গাজীপুর ও টঙ্গী থেকে ঢাকায় যাওয়া ও আসার পথে যানজট কমাতে হাতে নেওয়া আলোচিত এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০১২ সালে।
এতে সাড়ে কিলোমিটার এলিভেটেড ফ্লাইওভার ও সেতু থাকবে যার মধ্যে সাড়ে তিন কিলোমিটার হবে ৬ লেনের সড়ক এবং ১ কিলোমিটার হবে ২ লেনের।
এ সড়কে অবস্থিত টঙ্গী সেতু হবে ১০ লেনের এবং ওঠানামার জন্য ছয়টি এলিভেটেড স্টেশন থাকবে।