এর আগে হারুনের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছিল আদালত।
Published : 24 Apr 2025, 04:32 PM
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা-ডিবির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাহাঙ্গীর হোসেনের ঢাকার একটি ফ্ল্যাট ও ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা কমিশনের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, জাহাঙ্গীরের নামে থাকা এই তিনটি প্লট ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত। আর ১ হাজার ৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে।
এদিন জাহাঙ্গীরের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির’ মাধ্যমে ডিএমপি ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার ও নিকট আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে ‘শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের’ অভিযোগ আছে।
দুদক বলেছে, হারুনের ঘনিষ্ঠদের অন্যতম জাহাঙ্গীর হোসেন এবাং তার নামে-বেনামে দেশে বিদেশে অনেক সম্পদ রয়েছে, যা হারুনের বেনামি সম্পদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর তার সম্পদ ‘বিক্রি বা হস্তান্তরের’ চেষ্টা করছেন। তাই সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া প্রয়োজন মনে করে সংস্থাটি।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন একই আদালত।
একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।
পাশাপাশি তার ভাই এ বি এম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।
তার আগে গত ১৭ ডিসেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলোচিত হারুন অর রশিদ, তার স্ত্রী ও হারুনের ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
হারুনের বিরুদ্ধে ১৭ কোটি ৫১ লাখ ১৭ হাজার ৮০৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় হারুনের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে তার স্ত্রী শিরিন আক্তারকে। তার বিরুদ্ধে ১০ কোটি ৭৬ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
শিরিন আক্তার প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের পরিচালক, যিনি ২০০৭ সাল হতে সন্তানসহ স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।
আরেক মামলায় হারুনের ছোট ভাই এবিএম শাহরিয়ায়ের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬০৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হছে।
প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।
এরপর গত ১৮ আগস্ট হারুনের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
গত ২৪ অক্টোবর ডিবি হারুনসহ তার স্ত্রী ও শ্বশুরসহ ১২ জনকে তলব করেছিল দুদক।
এর হারুন ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।
এছাড়া হারুন ও স্ত্রীর দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা কারণে আলোচিত হারুনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে নামে-বেনামে রাজধানীতে দুই ডজন বাড়ি, অর্ধ-শতাধিক ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিক হওয়ার অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও জেদ্দাসহ বিভিন্ন জায়গায় অঢেল সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক।
এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়ে।
২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিএমপির ডিবি প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন হারুন অর রশীদ।
গণআন্দোলনে সরকার পতনের চার দিন আগে গত ৩১ জুলাই তাকে সেখান থেকে সরিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সরকার পতনের পর থেকেই তার হদিস মিলছে না।
ডিবিতে দায়িত্ব পালনকালে হারুন তার কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্নজনকে ভাত খাওয়াতেন। সেসব ছবি নিজের ফেইসবুকে শেয়ার করতেন, যা নিয়ে বেশ আলোচনা ছিল।
সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে কয়েকদিন রাখেন হারুন। তাদের অ্যাপায়ন করার একটি ছবি আবার আলোচনা তৈরি করে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার থাকাকালে ২০১১ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে ধাওয়া দিয়ে পিটিয়ে আলোচিত হন হারুন।
পরে ডিএমপির লালবাগ বিভাগে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের পর গাজীপুরের পুলিশ সুপার হন তিনি। সেখানে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের মধ্যে ২০১৮ সালের মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় বিএনপি তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলে।
এরপর ওই বছরের অগাস্টের শুরুতে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়।
নারায়ণগঞ্জে ১১ মাসের দায়িত্বে হকার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তিনি যেমন প্রশংসিত হন, তেমনি এ জেলার অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ‘টক্করে’ গিয়ে আলোচনার জন্ম দেন।
২০১৯ সালে পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার এম এ হাশেমের ছেলে আমবার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজের স্ত্রী ও সন্তানকে আটক করেও আলোচনায় আসেন তিনি। পরে তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আনা হয়।
ডিআইজি হিসেবে ২০২২ সালের ১১ মে পদন্নোতি পাওয়ার পর একই বছর ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে ডিবির দায়িত্ব পান। এর আগে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
পুরনো খবর:
অবৈধ সম্পদ: সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
হারুন ও পরিবারের সদস্যদের ডেকেছে দুদক
হারুন ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব চেয়েছে সিআইসি
হারুন ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা