এসব জমির মূল্য ৫৫৯ কোটি টাকার মত।
Published : 27 Apr 2025, 07:59 PM
আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে থাকা এক হাজার ১৪ বিঘা জমি জব্দ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেয়।
আদালতের এ আদেশের কথা সংবাদমাধ্যমে জানান দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রায় ৫৫৯ কোটি টাকা মূল্যের এসব জমি জব্দের আবেদনটি করেন দুদকের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক।
যুক্তি হিসেবে আবেদনে বলা হয়, সাইফুল আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্থান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান নিষ্পত্তির আগে এসব সম্পদ হস্তান্তর হয়ে গেলে তা উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ২৩ এপ্রিল এস আলম এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে থাকা ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় ১৬০ একর জমি জব্দের আদেশ দেয় আদালত। এর ছয় দিন আগে (১৭ এপ্রিল) আসে ১৩৬০টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ওই সরকারের কাছ থেকে সুবিধা পাওয়া ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ‘অর্থ পাচারসহ দুর্নীতির’ অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক, যার মধ্যে অন্যতম এস আলম গ্রুপ।
চট্টগ্রামভিত্তিক এ গ্রুপের চেয়ারম্যান এস আলমের বিরুদ্ধে ব্যাংক খাতে অনিয়ম, টাকা পাচার, আয়কর ফাঁকির অভিযোগ তদন্ত শুরু করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় এস আলমের বিরুদ্ধে জোরজবরদস্তি করে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। পরে তিনি ও তার ব্যবসায়ী গোষ্ঠী শরিয়াহভিত্তিক আরও কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেন।
এসব ব্যাংক থেকে বিপুল অর্থ নামে ও নাম সর্বস্ব কোম্পানি খুলে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এমন প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের ২৯ অগাস্ট এস আলমসহ ৭ আলোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মালিকানা হস্তান্তর স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরকে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এক দিন বাদে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট বলে, এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য পেয়েছে তারা।
এরপর গত বছরের ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি অবরুদ্ধ করা হয় এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি আসে ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার পাঁচশো টাকা মূল্যের ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের আদেশ।
১২ ফেব্রুয়ারি দেওয়া হয় ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের আট হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়।
১০ মার্চ এস আলমের এক হাজার ছয় বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত ৯ এপ্রিল দেওয়া হয় তার ৯০ বিঘা জমি জব্দের আদেশ। একইদিন তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে থাকা ৩৭৪টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করা হয়।
আরও পড়ুন-
এবার এস আলমের ২৬১৯ কোটি টাকা অবরুদ্ধের আদেশ
এস আলম পরিবারের আরও ২,৯৭০ শতাংশ জমি জব্দের আদেশ
এস আলমের ১৫৯ একর জমি জব্দের আদেশ
শীর্ষ খেলাপি এখন বেক্সিমকো, এস আলম: ৫ ব্যাংকে ১০ গ্রুপেরই ৫২০০০ কোটি আটকে