“আন্দোলন করা মূলত গণতান্ত্রিক অধিকার, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটা দেখবে,” বলেন তিনি।
Published : 29 Sep 2024, 08:18 PM
বন্ধ গার্মেন্ট শ্রমিকদের ‘অযৌক্তিক’ ও শ্রম ‘আইনবহির্ভূত’ দাবি পূরণ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালযয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
রোববার বিকালে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে বন্ধ কারখানা খোলার উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “২৪ তারিখের পরে শ্রমিক অসন্তোষ যথেষ্ট কমে গিয়েছে। আমাদের ঘোষণার পরে যে শ্রমিক নেতারা এখানে ছিলেন, যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, উনারা শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন।”
আসিফ মাহমুদ বলেন, “তবে কিছু জায়গা (দাবি) আমি অযৌক্তিকই বলব, কিছু জায়গায় শ্রম আইনের বহির্ভূত কিছু দাবি আছে, যেগুলো আমরা পূরণ করতে পারব না, কারণ এখানে একটা আইন আছে।”
শ্রমিকদের দাবির বাইরেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হচ্ছে দাবি করে এই উপদেষ্টা বলেন, “এর বাইরেও কিছু জায়গায় ক্রিমিনাল অফেন্সের খবর আমরা পেয়েছি। সেক্ষেত্রে আমরা আগেই বলে দিয়েছিলাম, যারা আইন ভঙ্গ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনের ব্যবস্থা নিতে হবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটা নেবে।
“আজকেও (রোববার) কিছু জায়গায় ক্রিমিনাল অফেন্সের সাথে যারা যুক্ত ছিল, তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজকে একটা ঘটনায় তিন জনকে ধরার খবর এখন পর্যন্ত (রোববার বিকাল) পাওয়া গেছে। আন্দোলন করা মূলত গণতান্ত্রিক অধিকার, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটা দেখবে।”
শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিগুলো আমরা নির্দিষ্ট করেছি এবং সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি বলে সংবাদ সম্মেলনে অবহিত করেন আসিফ।
বকেয়া বেতন না দেওয়ার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনারা কত দূর এগিয়েছেন- এমন প্রশ্নে মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, “ইতোমধ্যে ৯৫ ভাগ শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছে। যেগুলো বন্ধের কথা বলছেন, সেখানে তাদের দাবি কী জানেন? আমরা তো দফার মধ্যেই আছি।
“সেখানে বলা হচ্ছে যে, তাদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়নি, সুতরাং তারা অর্ধেক কাজ করবে। অর্থাৎ তারা চার ঘণ্টা কাজ করবে, ১২ হাজার ৫শ টাকায় তারা চার ঘণ্টা কাজ করবে। কিন্তু তারা এগ্রিমেন্টে স্বাক্ষর করেছে, তাদের দাবি অনুযায়ী বেতনের নূন্যতম মুজরি কাঠামোও গঠন করেছি। তারপরও তাদের ওই দাবি, এটা তো অযৌক্তিক।”
সচিব বলেন, “টপ মোস্ট ২০ জনের তালিকা করা হয়েছে, তাদের এখান থেকে ছাঁটাই করতে হবে। ছাঁটাইটা তাদের করতে হবে নাকি যারা দাবি দিচ্ছে তাদের করতে হবে? এগুলো এখন প্রশ্ন।
“আরেকটা বিষয়- তাদের বেতন দেওয়ার বিষয়টার কিন্তু একটা টাইম লাইন আছে, আমরা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত এগ্রিমেন্ট করেছি। এখন যে শ্রমিক নেতারা স্বাক্ষর করেছেন, আজকে তাদের সঙ্গে বসব, উনাদেরও দায়িত্ব আছে। অর্থাৎ এখন যে ৯টা গার্মেন্টে সমস্যা আছে, এই ৯টার মালিকের সঙ্গে আমরা বসেছি। আজকে শ্রমিক নেতাদের সাথে মিলে আমরা এড্রেস করব।”
‘শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের টাকায় আমলাদের কারসাজি’
বিগত সরকারের সময় শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের টাকা যথাযথ ব্যক্তি না পেয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পছন্দের তালিকা অনুযায়ী দেওয়া হত বলে জানতে পারার দাবি করেছেন আসিফ মাহমুদ।
তিনি বলেন, “বিগত সরকারের সময় এই তহবিলের অব্যবস্থাপনা হয়েছে। আমরা এই তহবিলের অর্থ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ভিত্তিতে সঠিকভাবে শ্রমিদের পৌঁছে দিতে চাই। আমরা এই ফান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে ডিজিটালাইজড করার কাজ করছি।”
শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের টাকায় কী অসঙ্গতি পেয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “টাকা দেওয়া হয়নি, এমন না; দেওয়া হয়েছে। এমনও পেয়েছি আমাদেরই কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্দিষ্ট একটা লিস্ট এনে টাকা নিয়ে গেছেন, হয়ত বিগত সময়গুলোতে। এখানে স্বচ্ছতা আনা জরুরি বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। এটাকে ডিজিটালাইজড করলে সমস্যা অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে বলে আমি আশা করছি।”
অস্বচ্ছতা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য আছে কি না, জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, “সেটা আমরা তদন্ত করছি, তদন্ত শেষে বলা যাবে।”
লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে অনেক কাজ আটকে যাওয়ার বিষয়ে দেওয়া স্ট্যাটাস নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমি পোস্ট দিয়েছিলাম মূলত লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে আটকে যাচ্ছি। এ নিয়ে তো আমরা ছাত্রজীবনে পড়াশোনা করে এসেছি।
“এখন যে কোনো কাজ প্রসেস, ফলো করতে একটু সময় লাগে। কিন্তু ইতোপূর্বে বাইরে থেকে আমরা দেখেছি- মিস ম্যানেজমেন্ট বা সদিচ্ছার অভাব বলেন, তখন সময় একটু বেশি লাগত। এখন আমি চেষ্টা করি, খুব দ্রুত সে কাজগুলো করে রাখার জন্য।”
“আগে যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে আন্তর্জাতিক খেলায় বিভিন্ন খেলোয়াড়রা যেত, সেখানে জিও স্বাক্ষর করতে অনেক সময় লাগত। আগের দিনও জিও পাচ্ছে না, আমরা কিন্তু সেটা খুব দ্রুত করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এমনকি ১০ দিন আগেও হয়ে যায় সে কাজগুলো।”
তিনি বলেন, “লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের কারণে জনগণের সঙ্গে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কমিয়ে আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা জনগণের কাতারে থেকেই কাজ করতে চাই।
“একই সাথে আমলাদের নিয়েও একটা ব্যাপার আছে; তাদের সাথেও জনগণের যে দূরত্ব; সেটা কমিয়ে আনব। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে সংস্কার কমিশন হয়েছে।’
নিজের মন্ত্রনালয়ে অস্বচ্ছতা ছিল স্বীকার করে সচিব বলেন, “ফিতা কিন্তু লাল নেই, এখন সাদা ফিতা। আজকের যে ব্যাপারটা সেখানে ‘লাল’ বলেন আর ‘সাদা’ ফিতা বলেন দৌরাত্ম্য কিন্তু ছিল। আমরা ওই জায়গা থেকে কীভাবে বের হব? আমরা আশা করি বের হতে পারব।”
এর আগে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে ২৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা জমা দেয় গ্রামীণফোন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত শ্রম কল্যাণ তহবিলে প্রদত্ত লভ্যাংশের নির্ধারিত অংশের চেক গ্রহণ অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার (সিএইচআরও) সৈয়দা তাহিয়া হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার হাতে অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন।
এ সময় উপদেষ্টা বলেন, “শ্রমিকদের জন্য যে একটি শ্রম কল্যাণ তহবিল আছে, তা অধিকাংশ শ্রমিক-ই জানে না। কীভাবে এই তহবিলে আবেদন করতে হয়, কীভাবে অর্থপ্রাপ্তি হয়; এই সম্পর্কে শ্রমিকদের সুস্পষ্ট ধারণা নেই।
“যে সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এই তহবিলে অর্থ প্রদান করে না, তাদেরও এই তহবিলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সকল প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনার কাজ করা হচ্ছে। আমরা শ্রমিকদের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছি এবং সামনের দিনেও তা অব্যাহত থাকবে।”