ছেলেদের ৫০ শতাংশের বেশি স্কুলে ভর্তি হয় না। মেয়েদের মধ্যে ভর্তির হার ৯৭ শতাংশের বেশি হলেও প্রায় এক তৃতীয়াংশ স্কুলে যায় না।
Published : 09 Dec 2024, 11:56 PM
দেশের সমতল এলাকার আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অর্ধেকই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে বলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের চালানো এক জরিপে উঠে এসেছে।
জরিপের তথ্য বলছেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলেদের ৫০ দশমিক ৫০ শতাংশ স্কুলে ভর্তিই হচ্ছে না। মেয়েদের ৯৭ দশমিক ৩ শতাংশ ভর্তি হলেও তাদের ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ ক্লাসে অনুপস্থিত থাকছে।
সোমবার বিকালে রাজধানীতে এক মতবিনিময় সভায় এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সংকট, কর্মজীবনে প্রবেশ ও গৃহস্থালি কাজে জড়িয়ে পড়ায় এমনটি ঘটছে। ছাত্রীদের বেশিরভাগের স্কুলে ভর্তির কারণ উপবৃত্তি ও শিক্ষাবৃত্তি। তবে তারাও ‘স্কুলমুখী নয়’।
খুলনার কয়রা, রাজশাহীর তানোর, নওগাঁর নিয়মতপুর, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট ও দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় জরিপ চালানো হয়েছে।
এই এলাকাগুলোতে বাগদি (বুনো) এবং সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা, বুনা, মালো, মাহালি, খোন্দো, বেদিয়া, ভূমিজ, কোলে, তুরি, ভীল, কর্মকার, মাহাতো, মুরিয়ার, মুসোহর, পাহান, পাহাড়িয়া, রাই এবং সিং সম্প্রদায় বসবাস করে।
৭৬৫ জন শিক্ষার্থী, ৩১০ জন অভিভাবক, ২৮৭ জন শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সদস্য ও এনজিও প্রতিনিধির মতামত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতা ঘেঁটে তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছে।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ছাত্রীদের স্কুলে অনুপস্থিতির হার সবচেয়ে বেশি নওগাঁর নিয়ামতপুরে ৩৯ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ।
জরিপটি বলছে, নবম শ্রেণিতে ৪৩ শতাংশ, অষ্টম শ্রেণিতে ৫২ দশমিক ২০ শতাংশ বার্ষিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত।
এ গোষ্ঠীগুলোর শিক্ষার্থীদের মাত্র ৩৮ দশমিক ১০ শতাংশ নবম শ্রেণিতে ভর্তি হচ্ছে। আর পঞ্চম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণদের ৬২ দশমিক ৭০ শতাংশ ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হচ্ছে।
এসব এলাকার আদিবাসী ছাত্রীদের ৭৭ দশমিক ২০ শতাংশ মনে করছে, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার পর অভিভাবকরা তাদের শিক্ষাজীবন চালাতে দেবেন না।
৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ অভিভাবক সমতলের আদিবাসী ছাত্রীদের শিক্ষাজীবনে উন্নতিসাধনে কোনো পদক্ষেপ নেন না বলেও জরিপে প্রকাশ পেয়েছে।
জরিপের সুপারিশে বলা হয়েছে, দারিদ্র্য, সাংস্কৃতিক ভিন্নতা, লিঙ্গ বৈষম্য, অবকাঠামোর অভাবে সমতলের আদিবাসী ছাত্রীদের বড় অংশ ঝরে পড়ছে।
তারা বাল্যবিয়ে, গৃহস্থালি দায়িত্ব, ভাষার ভিন্নতা, অনিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধাসহ নানা কারণে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিক্ষাব্যবস্থায় সাংস্কৃতিক অন্তর্ভুক্তির অভাব, শিক্ষকদের অসংবেদনশীলতা ও বুলিংয়ের মত বৈষম্যমূলক আচরণও তাদের স্কুলে আসতে নিরুৎসাহিত করছে।
মত বিনিময়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. ইউনুছ আলী বলেন, “এখানে নারী শিক্ষার্থীরাই নয় আদিবাসী গোষ্ঠীর অন্য শিক্ষার্থীরাও সংকটে রয়েছে।”
এর জন্য ‘রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি না থাকাকে বড় কারণ’ হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি পর্যায়ে আরও বেশি কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি প্রকল্প শুরু হচ্ছে। এতে সমতল এলাকার আদিবাসী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য কিছু করা যায় কি না সে চেষ্টা তারা করবেন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী। এতে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের অধ্যাপক সৈয়দ শাহাদৎ হোসেন, আদিবাসী মুক্তি মোর্চার সভাপতি যোগেন্দ্র নাথ সরেন, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক তপন কুমার দাশ।