খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকেও অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।
Published : 24 Oct 2024, 05:43 PM
সতের বছর আগে জরুরি অবস্থার সময় দায়ের করা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার এ মামলার বাকি ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ আদালতের বিচারক আবু তাহের।
অভিযুক্ত ১২ জন হলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আলী, প্রয়াত মন্ত্রী কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের স্ত্রী জাহানারা আনছার, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন ও এ কে এম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌসচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য এ কে রশিদ উদ্দিন আহমেদ, গ্যাটকোর তৎকালীন পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, সৈয়দ তানভির আহমেদ ও সৈয়দ গালিব আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এ এস এম শাহাদত হোসেন ও বন্দরের সাবেক পরিচালক (পরিবহন) এ এম সানোয়ার হোসেন।
বৃহস্পতিবার ছিল গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন। খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী এদিন হাজিরা দাখিল করেন। এরপর অভিযোগ গঠন শুনানি শুরু হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, হান্নান ভূইয়া, জাকির হোসেন ভূইয়া অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন। অন্যদিকে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তিনজনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন। বাকি ১২ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
আদালতে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “১৭ বছর আগে মামলা হলেও এতদিন আদালত অভিযোগ গঠন করতে পারেনি। যদি অভিযোগ গঠনের মত কোনো উপাদান এখানে থাকত, তাহলে শেখ হাসিনা সরকার আগেই বিচার করত। কারণ তিনি বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপিকে মাইনাস করার চেষ্টা করেছিল। তবে আদালত আইনানুগভাবে সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে আমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন।”
আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, “মিথ্যা-বানোয়াট মামলায় অব্যাহতি পাওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। ১/১১ এর রাজনৈতিক কুশীলবরা বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে এই বানোয়াট মামলা করেছিল।”
দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, এ মামলায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। এরমধ্যে ১০ জন মারা গেছেন। বাকি ১৫ জনের মধ্যে দুইজন পলাতক রয়েছেন।
“আজকে ১৫ জনের বিষয়ে চার্জ গঠন শুনানি ছিল। প্রসিকিশন থেকে আমরা চার্জশিটের বক্তব্য উপস্থাপন করেছি। আসামিপক্ষ বক্তব্য খণ্ডানোর চেষ্টা করেছে। বিজ্ঞ আদালত সবার কথা শুনেছেন এবং শুনে আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তৎকালীন কেবিনেটে থাকা খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদকে অভ্যাহতি দিয়েছেন। এছাড়া বাকি ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালত চার্জ গঠন করেছেন।”
২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে সেখানে আসামি করা হয়।
মামলা হওয়ার পরদিন খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় জরুরি ক্ষমতা আইনে। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
এ মামলার আসামি ২৫ জনের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানসহ ৯ জন জন মারা গেছেন। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় তার নামও বাদ দেওয়া হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি কোম্পানি গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুরে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন।