প্রতিষ্ঠার দুই দশক উদযাপন করতে ‘মুক্ত আলাপ ও গান’ শিরোনামে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র শাখায় অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাতিঘর।
Published : 14 Jul 2024, 01:33 AM
বই পড়ার জন্য পাঠক আসবে পাঠাগারে, এটাই হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের বাস্তবতায় পাঠাগারকেও পাঠকের কাছে যেতে হবে বলে মনে করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি সেই ধারণা থেকে চালু করা হয় বলে নিজের ভাবনার কথা শোনান এই শিক্ষাবিদ।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার বাংলামোটরে ‘বাতিঘর’ এর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র শাখায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, “আমাদের শহরের লাইব্রেরিগুলো চলছে না। কারণ পাঠক হেঁটে গিয়ে বই পড়তে চায় না। আমরা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে যখন বই পড়া কর্মসূচি শুরু করেছিলাম, তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, মানুষের হাতে বই নিয়ে যাব।
“আমরা অনেককে বই পড়াতে পেরেছি। বইকে আরও বেশি পাঠকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য পাঠাগারকেই যেতে হবে পাঠকের দ্বারে।”
প্রতিষ্ঠার দুই দশক উদযাপন করতে ‘মুক্ত আলাপ ও গান’ শিরোনামে অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাতিঘর।
সাহিত্যিক ও বইপ্রেমীদের সম্মিলন জমে ওঠে আড্ডা আর গানে। বিকাল থেকে জড়ো হতে থাকেন বইপড়ুয়ারা। আড্ডায় দেখা যায় তরুণ ও প্রবীণ লেখকদের। শুভেচ্ছা বক্তব্যের ফাঁকে চলে সঙ্গীত পরিবেশন।
অনুষ্ঠানে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, “আমরা কেউ একা একা বড় হতে পারি না। একা একা বড় হতে গেলে কিছু দূর যাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশ তো একটা ভয়ঙ্ককর জায়গা। এখানে কেউ মাথা উঁচু করে দাঁড়ালে তার পেছনে অনেক লোক দাঁড়িয়ে যায়।”
বাতিঘরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আবু সায়ীদ বলেন, “বইয়ের ব্যবসা সম্পর্কে আমি জানি না। কিন্তু যা বই বিক্রি হয়, তাতে বই ব্যবসায়ীরা হাসে কীভাবে, তাও আমি জানি না। তবে বইয়ের ব্যবসা সারা দেশে সম্প্রসারিত হবে বলে আমি আশাবাদী। বাতিঘরের দীপঙ্করকে বলব, তুমি পারবে; এগিয়ে যাও।”
সারা দেশে বই ছড়িয়ে দিতে ২০০টি জায়গায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে বইমেলা আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়ে অবহিত করেন অধ্যাপক আবু সায়ীদ।
বাতিঘরকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, বইয়ের দোকান পরিচালনা করা বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জিং। সেখানে ২০ বছর ধরে বুকশপ পরিচালনা ও প্রকাশনার মাধ্যমে বইপ্রেমীদের আকৃষ্ট করার জন্য বাতিঘরকে অভিনন্দন জানাতে হয়৷
“তবে বাতিঘরকে শুধু ব্যবসায়িক সাফল্য দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না৷ বাতিঘর একটি সামাজিক উদ্যোগ, এটিকে সামাজিক ব্যবসা হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে৷ বাতিঘর জ্ঞানপিপাসু মানুষের আকর্ষণের জায়গা হয়ে থাকুক৷”
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “বাতিঘর বই বিক্রেতা নাকি প্রকাশনা এ নিয়ে দ্বিধা রয়েছে৷ কখনও মনে হয়, বাতিঘরে প্রকাশনা কম গুরুত্ব পাচ্ছে৷
“আসলে প্রকাশক হিসেবে টিকে থাকা খুব চ্যালেঞ্জের৷ সে চ্যালেঞ্জ বাতিঘর একা মোকাবেলা করবে নাকি আরও সব প্রকাশনার সঙ্গে মিলে করবে, তাও দেখার বিষয়৷ কথা হলো, পাঠক যদি থাকে তাহলে লেখকও থাকবে, প্রকাশকও থাকবে৷ ”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, “এই কংক্রিটের শহরে বাতিঘর হল মরুদ্যান৷ একটি চেইন বুকশপ হবে এই ঢাকায়, সেখানে বই পড়ার অভ্যাস ফিরে আসবে, বইয়ের জন্য এত টাকা বিনিয়োগ হবে, এটিই তো ছিল অবিশ্বাস্য৷”
কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহান, আলতাফ পারভেজ, কবি ও প্রাবন্ধিক এজাজ ইউসুফী, ইফতেখারুল ইসলাম, মোহিত কামাল, লেখক কিযী তাহনিন, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, লেখক-অনুবাদক মোজাফফর হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন৷
সময় প্রকাশন এর স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ, অনুপম প্রকাশনী এর স্বত্বাধিকারী মিলন কান্তি নাথ, ভাষাচিত্র প্রকাশক খন্দকার সোহেলও শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন।
প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বলেন, “আমরা যখন প্রকাশনা শিল্পে যুক্ত হই, তখন খুব আক্ষেপ ছিল একটা ভালো বইয়ের দোকানের। শুধু সৃজনশীল বই বিক্রি হবে, এমন বইয়ের দোকানের সংকট এখনও আছে। বাতিঘর শুরু থেকে সকল পরিকল্পনার বিষয়ে প্রকাশকদের সঙ্গে পরামর্শ করেছে। সামনের দিনগুলোতেও বাতিঘরের সাথে আমাদের এই সম্পর্ক অব্যহত থাকবে বলেই আশা করছি।”
বাতিঘর আগামী মাসেই নতুন চমক নিয়ে আসছে বক্তব্যের ফাঁকে জানিয়ে দেন ফরিদ আহমেদ। তবে কী চমক? তা স্পষ্ট করেননি।
বাতিঘর কী চমক নিয়ে আসছে, জানতে চাইলে বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা কলকাতায়ও একটি শাখা করছি। সেটি আগামী মাস থেকে শুরু করার পরিকল্পনা আছে। এটি ফ্রাঞ্জাইজি হিসেবে ওখানকার লোকজনই চালাবে, সেই শাখায় বাংলাদেশি বই পাওয়া যাবে।”
পাঠকের ভালোবাসা নিয়ে দুই দশক পার করে দেওয়া বাতিঘর আগামী দিনেও পাঠকের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করেই এগিয়ে যেতে চায় বলে অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন দীপঙ্কর দাশ।