এক মামলায় জামিন বাড়ল ইউনূসের, আরেক মামলায় শুনানি দুপুরে

শ্রম আপিল আদালতে কারখানা অধিদপ্তরের মামলায় হাজিরা দিয়ে পুরান ঢাকায় জজ আদালতে পৌঁছবেন ইউনূস।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2024, 06:42 AM
Updated : 3 March 2024, 06:42 AM

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় দণ্ডিত নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছে শ্রম আপিল ট্রাইবুনাল।

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের টাকা আত্মসাতের মামলাতেও আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছেন কোম্পানির চেয়ারম্যান ইউনূস। রোববার দুপুরে মহানগর দায়রা জজ আদালতে সেই জামিন আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।  

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চার কর্মকর্তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে গত ২৮ জানুয়ারি তাদের জামিন বহাল রাখে শ্রম আপিল ট্রাইবুনাল। মামলার পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত তাদের জামিন দেওয়া হয়।

সেই জামিনের মেয়াদ শেষে রোববার আদালতে হাজির হয়ে নতুন করে জামিন আবেদন করেন ইউনূস। ট্রাইবুনালের বিচারক এম এ আউয়াল শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন। 

ইউনূসের আইনজীবীরা এদিন তার স্থায়ী জামিনের আবেদন করলেও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী তার বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন মঞ্জুর করলেও ইউনূসকে কতদিনের জন্য জামিন দেওয়া হয়েছে, তা জানা যাবে লিখিত আদেশ হাতে পাওয়ার পর ।

এদিকে রোববার সকালেই আত্মসাতের মামলায় ইউনূসের পক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।

মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন দুপুরে ওই জামিন আবেদন শুনবেন বলে ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, শ্রম আপিল আদালতে করখানা অধিদপ্তরের মামলায় হাজিরা দিয়ে পুরান ঢাকায় জজ আদালতে পৌঁছবেন ইউনূস। তার উপস্থিতিতে জামিন শুনানি হবে।

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলাটি দায়ের করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান।

শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।

গত ১ জানুয়ারি ওই মামলার রায়ে চার জনকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা। তবে আপিলের শর্তে সেদিনই সাজাপ্রাপ্তদের এক মাসের জামিন দেওয়ায় কাউকে কারাগারে যেতে হয়নি।

দণ্ডিত বাকি তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অন্য মামলাটি দায়ের করেছে দুদক।

২০২৩ সালের শুরুতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি অডিট প্রতিবেদন পাঠিয়ে দুদককে অনুসন্ধানের অনুরোধ করা হয়। অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুদকের উপ পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান ওই বছরের ৩০ মে ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এরপর সাত মাসের বেশি সময় তদন্ত চালিয়ে আরো একজনের নাম যুক্ত করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র তৈরি করেন তিনি। গত ২৯ জানুয়ারি ওই অভিযোগপত্র অনুমোদন করে দুদক।

এরপর ১ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়লে বিচারক ৩ মার্চ আসামিদের উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রগ্রহণ এবং মামলা আমলে নেওয়ার শুনানির তারিখ রাখে।

ইউনূস ছাড়া এ মামলার অপর আসামিরা হলেন– গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান,  প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম এবং গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ইউনূস ও নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকম বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে ১০৮তম বোর্ডে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ব্যাংকে হিসাব খোলা হয় এক দিন আগেই।

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট চুক্তি হয় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল।

এজাহারে বলা হয়, সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টেও ৮ মে খেলা ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। ‘ভুয়া’ সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকমের ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় স্থানান্তর করা হয় ২০২২ সালের ১০ মে।

পরে ২২ জুন অনুষ্ঠিত ১০৯তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাডভোকেট ফি হিসাবে অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়।

অন্যদিকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নামে ডাচ বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের হিসাব থেকে তিন দফায় মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়।

দুদক বলছে, কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের না জানিয়ে ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ ২০২২ সালের মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সিবিএ নেতা মো. কামরুজ্জামান, মাইনুল ইসলাম ও ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে ৩ কোটি টাকা করে স্থানান্তর করা হয়।

একইভাবে আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে ৪ কোটি টাকা ও দি সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে ৫ কোটি টাকা এবং আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ ও আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীর স্ট্যান্ডার্ড টাচার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখায় যৌথ হিসাবে ৬ কোটি স্থানান্তর করা হয়, যা তাদের ‘প্রাপ্য ছিল না’ বলে দুদকের ভাষ্য।

দুদকের রেকর্ডপত্র অনুযায়ী, অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টের শর্ত লঙ্ঘন করে ‘অসৎ উদ্দেশে জালিয়াতির আশ্রয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে উক্ত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।’

এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ এনেছে দুদক।