ট্রেনের তিনটি কোচ পুড়ে প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
Published : 19 Dec 2023, 11:28 PM
মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দেওয়া আগুনে চারজনের প্রাণহাণির পাশাপাশি রেলের তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা। কারা ওই ট্রেনে আগুন দিল, তা খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয়েছে দুটি তদন্ত কমিটি।
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি মঙ্গলবার ভোরে বিএনপির হরতাল শুরুর আগে আগে ঢাকায় ঢোকার সময় একটি বগিতে আগুন দেওয়া হয়, পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আরও দুটি বগিতে।
আগুনে ওই তিনটি কোচ পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি একটি কামরা থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
রেলের যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশন্স) এ এম সালাহ উদ্দীন বলেন, ইন্দোনেশিয়ার পিটি ইনকার তৈরি এই কোচগুলো ২০১৯ সালে রেলে যুক্ত হয়। কোচগুলো পুড়ে যাওয়ায় প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনা তদন্তে রেলওয়ের বিভাগীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে দুটো তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘটনার প্রায় ১২ ঘণ্টা পরও পোড়া বগিগুলো থেকে ধোঁয়া উঠছিল। খাবার-দাবার, প্লাস্টিক আর ফাইবার পোড়া কটু গন্ধ ভাসছিল চারদিকে।
ট্রেনের জ ও ঝ বগির প্রায় সবগুলো জানালা ছিল ভাঙা। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) কর্মী মো. ইমরানের ধারণা, বগিতে আগুন লাগার পর প্রাণ বাঁচাতে জানালা ভেঙেই বহু মানুষ হয়ত বেরিয়েছে।
পুড়ে যাওয়ার পর তেজগাঁও থেকে টেনে এনে কমলাপুর স্টেশনের ওয়াশপিটে রাখা হয়েছে বগি তিনটি। ভেতরের আসন, ইলেকট্রিক ওয়্যারিং, ফিউজ বক্স, ফ্যান, বাতিসহ যাত্রীদের জিনিসপত্রও পুড়ে গেছে।
ট্রেনটির ‘জ’ ও ‘ঝ’ বগি দুটো পুড়ে গেছে পুরোপুরি । আর ‘ছ’ বগির আসনগুলো আধপোড়া অবস্থায় দেখা যায়।
বগির ভেতরে এখানে সেখানে স্তূপ হয়ে আছে যাত্রীদের ব্যবহৃত কাপড়-চোপড়, চালের বস্তা ফেটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে পোড়া চাল। কলার কাঁদি নিয়ে উঠেছিলেন কেউ। সেই কলা আগুনে সেদ্ধ হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
শিশুদের স্কুল ব্যাগ, পানির বোতল, বই-খাতা, হাতব্যাগ, চাবির গোছা পড়ে রয়েছে পোড়া-আধপোড়া আসনগুলোর ওপর। হোমিও চিকিৎসকের ওষুধ ভর্তি বাক্স, হোমিওপ্যাথির বই পড়ে আছে একটি আসনের ওপর। কেউ হয়ত সব্জি নিয়ে যাচ্ছিলেন শহরের বাসায়, সবই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
পুড়ে যাওয়া ট্রেন পরিদর্শনে এসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ডা. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এ ধরনের কাজ করা কোনো রাজনীতি নয়। রাজনীতি তো মানুষের জন্য। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাজনীতি, মানুষকে মারার জন্য নয়। দেশের সম্পদ বিনষ্ট করার জন্য রাজনীতি নয়।
“এই যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যায়ে রেলের এই সম্পদগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল। সব নষ্ট হয়ে গেল। ক্রমান্বয়ে এরকম সহিংসতা দিয়ে কী আমরা পিছিয়ে যাব? রাজনীতি কী আমাদের পিছিয়ে দেবে? যারা এই কাজটি করেছেন, তাদের মাধ্যমে এদেশের গণমানুষ কিছুই অর্জন করবে না। মানুষ শুধু প্রাণ হারাবে।”