সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে স্বতন্ত্রদের অবস্থান স্পষ্ট হবে রোববারের পর। দল বা জোটওয়ারি তালিকার বিষয়ে ইসিতে মতামত দিতে হবে পরদিনের মধ্যে।
Published : 27 Jan 2024, 07:53 AM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে আগামী মঙ্গলবার; তার আগে প্রধান হুইপ ও পাঁচ হুইপ নিয়োগ দেওয়া হলেও বিরোধী দলীয় নেতা এখনও অনুমোদন হয়নি।
এবারের ভোটে যে রেকর্ড ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তারা জোট বা কোনো দলে যোগ দিচ্ছেন কি না তাও স্পষ্ট হয়নি।
তবে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টনে দলে বা জোটভুক্ত হওয়ার বিষয়টি তাদেরকে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩টি, জাতীয় পার্টি ১১টি, জাসদ ১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি, কল্যাণ পার্টি ১টি এবং স্বতন্ত্ররা ৬২টি আসন পেয়েছে।
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত নারী আসন আওয়ামী লীগ পাবে ৩৮টি, জাতীয় পার্টি পাবে ২টি, আর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা পাবেন ১০টি আসন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের রোববার গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বতন্ত্ররা দল বা জোটভুক্ত হচ্ছেন কি না তা জানা যাবে সেদিনই।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, “দ্বাদশ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী পাঁচটি দল ও ৬২ জন সংসদ সদস্যকে দল ও জোটভুক্ত হওয়ার বিষয়ে মতামত জানাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তা কমিশনকে জানাতে হবে। এরপরই সংরক্ষিত নারী আসনের ভোটের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা রাজনৈতিক দলে বা জোটে যোগদান করতে চাইলে তা ৩১ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে মঙ্গলবার দলগুলোর কাছে চিঠি পাঠায় ইসি।
সেখানে বলা হয়, “কোনো নির্দলীয় সংসদ সদস্য আপনার দলে বা জোটে যোগদান করেছেন কি না, অথবা সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে অন্য কোনো দলের সঙ্গে আপনার দলে জোট গঠিত হয়েছে কি না; তা ৩১ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে হবে।”
ইতোমধ্যে জোটওয়ারি তালিকাভুক্ত করতে জাসদ চিঠি দিয়েছে ইসিতে।
অতিরিক্ত সচিব অশোক জানান, বৃহস্পতিবার জাসদের নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্যকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত করার জন্য জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু চিঠি দেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্বতন্ত্ররা দল বা জোটভুক্ত না হলে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।
স্বতন্ত্ররা যা বলছেন
এবার রেকর্ড ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। বাকিদের মধ্যে দুজন সরাসরি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তাদের একজন মোহাম্মদ সিদ্দিকুল আলম জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে নীলফামারী-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বাজিমাত করেছেন। নৌকার ছাড় পেয়েও আসনটিতে জিততে পারেননি জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান।
জানতে চাইলে সিদ্দিকুল আলম বলেন, “আমি জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছি, এখনও স্বতন্ত্র আছি। নির্বাচিত হওয়ার পর দল আমাকে ডাকেনি, আমিও যোগাযোগ করিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ দিয়েছেন, সেখানে তিনি যে নির্দেশনা দেবেন, সেটাই আমরা স্বতন্ত্ররা মেনে নেব।”
স্বতন্ত্রদের জোট করার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি বলে ভাষ্য এ সংসদ সদস্যের।
সিদ্দিকুল বলেন, “বিষয়টি ইসিকেও জানাতে হবে। সময়ও রয়েছে। (প্রধানমন্ত্রীর) দিক-নির্দেশনার পর আলোচনায় বসে একটা সিদ্ধান্ত হবে আশা করি।”
সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে নৌকাকে হারিয়ে জয় পান ধর্মভিত্তিক সংগঠন আঞ্জুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি মোহাম্মদ হুছাম উদ্দিন চৌধুরী। সরকার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ফুলতলীর এই পীরের কাছে ১৪ হাজার ভোটে হারেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ।
হুছামুদ্দীন চৌধুরীর ইচ্ছে, কোনো জোট বা দলে যোগ না দিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে ভূমিকা রাখার।
তিনি বলেন, “রোববার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হবে আমাদের। আমিও গণভবনে আমন্ত্রণে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। তিনি কী দিক-নির্দেশনা দেন, দেখি। আমি তো কোনো দলের হয়ে নির্বাচন করিনি, তাই স্বতন্ত্র। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা অতীতে যেভাবে ভূমিকা রেখেছে আমিও তাই রাখতে চাই।”
স্বতন্ত্র হয়ে জেতা আরেকজন সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
একরামুজ্জামানের অবস্থান জানার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো সাড়া মেলেনি।
এর বাইরে স্বতন্ত্র হয়ে জেতা আওয়ামী লীগের ৫৯ জন তাদের দলীয় প্রধানের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন।
দিনাজপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. জাকারিয়া বলেন, “আমি বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এখন সংসদ সদস্য। আমার তো অন্য দলে বা স্বতন্ত্র থাকার সুযোগ নেই। আমি আওয়ামী লীগের।
“এখন ২৮ জানুয়ারি আপার (প্রধানমন্ত্রী) সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি, তিনি যে দিক-নির্দেশনা দেবেন, সেভাবেই আমরা কাজ করব।”
অপেক্ষা জাতীয় পার্টিরও
দ্বাদশ সংসদে প্রধান বিরোধী দল কারা হবে সেই প্রশ্নের মধ্যেই ১১টি আসন পাওয়া জাতীয় পার্টি গত ১৮ জানুয়ারি তাদের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে মনোনীত করে।
সেদিন দলের সংসদীয় সভায় কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে বিরোধী দলের উপনেতা ও মহাসচিব মজিবুল চুন্নুকে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মনোনীত করা হয়।
এসব মনোনয়নের সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।
নিয়ম অনুযায়ী, জাতীয় পর্টির সংসদীয় দলের এই মনোনয়নের চিঠি পাওয়ার পর স্পিকার তাতে সম্মতি দিলে তবেই বিষয়টি কার্যকর হবে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “দ্বাদশ সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা অনুমোদনের এখতিয়ার স্পিকারের। এখনও আমরা স্পিকারের সিদ্বান্ত জানি না। আশা করি, অধিবেশনের আগেই সিদ্ধান্ত আসবে।”
জাতীয় পার্টিতে কোনো স্বতন্ত্র সদস্য কেউ যুক্ত হচ্ছে কি না তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
দল থেকে বহিষ্কৃত নীলফামারী-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যকে দলে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে কি না বা এ ধরনের ভাবনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে চুন্নু বলেন, “বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে জিতে এসেছে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সিদ্দিকুল আলম যোগাযোগ করেনি, এখনও এ বিষয়ে দল থেকেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।”
পুরনো খবর
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ
বিতর্কের মধ্যেই বিরোধী দলীয় নেতা মনোনীত করল জাতীয় পার্টি
শপথের এক সপ্তাহ পরও ‘প্রশ্ন’ হয়ে রইল বিরোধী দল
বিরোধী দল তো জাতীয় পার্টি: কাদের
শপথ নিলেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা
‘স্বতন্ত্র’ বিজয়ীদের নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী