“স্বতন্ত্র প্রার্থীরা স্বতন্ত্র আছে”, বলেন আওয়ামী লীগ নেতা।
Published : 22 Jan 2024, 03:51 PM
জাতীয় পার্টি আবার সংসদের প্রধান বিরোধী দল হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতারা সংসদে স্বতন্ত্র হিসেবেই থাকবেন।
জাতীয় পার্টি সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হলেও রেকর্ড পরিমাণ স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়ের কারণে বিরোধী দলের আসনে কারা বসবেন- এই জিজ্ঞাসার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য এল, যদিও সংসদে বিরোধী দল কারা হবেন, কে বিরোধীদলীয় নেতা হবেন, সেই বিষয়টি স্পিকারের এখতিয়ার।
সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সংসদ সদস্যদের শপথের এক সপ্তাহ পর জাতীয় সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল দল জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল ও দলের সে সময়ের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃতি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এবার শপথের প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের সংদস্যদের শপথের এক সপ্তাহ পরেই বিরোধী দল ও বিরোধী দলীয় নেতা মনোনয়ন দিয়েছিলেন স্পিকার। তবে এবার দুই সপ্তাহেও সিদ্ধান্ত আসেনি
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ১১ আসন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৬২টি আসনে জয়ের পর আলোচনা ঘুরে যায়।
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নে আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোট করে বিরোধী দলের আসনে বসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাদের নেতা বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারেন।
তবে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগ নেতা। আর তারা বিরোধী দলে বসতে কোনো আগ্রহ দেখাননি। জোটবদ্ধ হলে আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে ১০টি অবশ্য তারা পাবেন।
এই বিতর্কের মধ্যেই গত ১৮ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি তাদের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে তাদের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন করে। দলটির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে উপনেতা ও মহাসচিব মজিবুল চুন্নুকে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মনোনীত করার কথা জানানো হয়।
প্রথমে দলটি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানায়, জি এম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে উপনেতা নির্বাচিত করা হয়েছে। পরে অবশ্য সংশোধনী এনে বলা হয়, জি এম কাদের তাদের সংসদীয় দলের নেতা আর আনিসুল হলেন উপনেতা।
পরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিরোধী দলীয় নেতা, উপনেতা এবং চিফ হুইপ এর নাম ঘোষণা করার এখতিয়ার মাননীয় স্পিকারের।"
সাধারণত সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দলই বিরোধী দলে বসে আসছে এতকাল। কেবল ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচন এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনের পর কোনো বিরোধীদলীয় নেতা ছিল না।
প্রথম সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের বাইরে দুটি দলের একজন করে এবং স্বতন্ত্র পাঁচ জন নেতা নির্বাচিত হয়ে এসেছিলেন। ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বাইরে দলীয় একজন এবং স্বতন্ত্র ১০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসেন।
ভারতের সংসদে প্রধান বিরোধী দল হতে হলে কোনো দলের অন্তত ১০ শতাংশ আসনে জিতে আসতে হয়। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
সংসদে বিরোধী দল কারা হবে?- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিরোধী দল কে হওয়া উচিত?”
‘দ্বিতীয় বৃহত্তম দল’- বলেন সেই গণমাধ্যমকর্মী।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “তাহলে ধরে নিন তারাই হচ্ছে।”
জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ছাড় দেওয়া আসনেই নির্বাচিত হয়ে আসছে। তাহলে সংসদে কার্যত আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী হয়ে যাচ্ছে কি না- এই প্রশ্নে কাদের বলেন, “তারা (জাতীয় পার্টি) একটা রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ মানে কী?
“তাদের দল হচ্ছে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ না। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা স্বতন্ত্র আছে। আর দল যদি বলেন, তাহলে বিরোধী দল তো জাতীয় পার্টি।”
বিতর্কের মধ্যেই বিরোধী দলীয় নেতা মনোনীত করল জাতীয় পার্টি
প্রধান বিরোধী দলের আসনে স্বতন্ত্রদের জোট? আইন বলছে ‘সম্ভব’
শপথের এক সপ্তাহ পরও ‘প্রশ্ন’ হয়ে রইল বিরোধী দল