Published : 01 May 2025, 10:46 PM
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অভিভাবক শূন্য হওয়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পেয়েছেন অধ্যাপক মো. হযরত আলী।
তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক।
বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পূর্ণকালীন উপাচার্য নিয়োগের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য তিনি রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতনভাতা প্রাপ্য হবেন। বিধি অনুযায়ী পদ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা পাবেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এস কে শরিফুল আলমকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ছয় দিনের মাথায় উপাচার্যের দায়িত্বে কাউকে বসানো হল।
ছাত্রজনতার গণআন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট সরকার পরিবর্তনের পর সেপ্টেম্বরে কুয়েটের উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়েছিলেন অধ্যাপক মাছুদ। এরপর ডিসেম্বরে উপ-উপাচার্য হন শরিফুল আলম।
ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনার পর ৩৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কারের জেরে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি ওঠে। কুয়েট ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার পদত্যাদের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। দাবিদাওয়া নিয়ে শেষপর্যন্ত অনশনে বসেন কুয়েটের কিছু শিক্ষার্থী। এরপর উপাচার্য ও উপউপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়। তাদের অব্যাহতি দিয়ে নিজ নিজ বিভাগে ফিরে যেতে বলা হয়।
ঘটনাক্রম
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৮ ফেব্রুয়ারি। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সেদিন ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
আগের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় উপাচার্যকে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা না আসায় অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার কুয়েট ক্যাম্পাসে যান। তবে দীর্ঘ সময় বুঝিয়েও তিনি অনশন ভাঙাতে পারেননি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যবিরোধী স্লোগান দেন।
এরপর ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পাশাপাশি সব হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে শুরুর কথা বলা হয়।
এদিকে উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তারা। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠন করা কমিটির তিন সদস্য কুয়েট ক্যাম্পাসে যান। ২৩ এপ্রিল রাত ১টায় ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান কুয়েট ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। তার আগে উপাচার্য ও উপ উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির বিষয়ে একটি বার্তা পড়ে শোনান তানজীমউদ্দিন।
সেই ঘোষণার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আনন্দ মিছিল করেন। পরে তারা হলে ফিরে যান।
আরও পড়ুন-