অভিযুক্ত সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের দাবি, তারা ‘সংহতি জানাতে গেলে’ সেখানে অবস্থানরতরা ‘উস্কানি দেওয়ায়’ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
Published : 02 Jan 2025, 10:17 PM
ঢাকার কারওয়ানবাজার এলাকার পান্থকুঞ্জ রক্ষায় সেখানে ২১ দিন ধরে অবস্থান চালিয়ে আসা কয়েক যুবকের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা), গ্রিন ভয়েসসহ বেশ কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মীদের বিরুদ্ধে।
তবে অভিযুক্ত সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের দাবি, তারা ‘সংহতি জানাতে গেলে’ সেখানে অবস্থানরতরা ‘উস্কানি দেওয়ায়’ এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত অংশ নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রকল্পের একটি র্যাম্প পান্থকুঞ্জ পার্ক দিয়ে নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে পার্কটির সহস্রাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে অভিযোগ করে পার্কটি রক্ষার দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশের পরিবেশ সচেতন নাগরিক ও বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’। এই প্ল্যাটফর্মের বেশ কয়েকজন তরুণ পার্কটি রক্ষার দাবিতে সেখানে টানা ২১ দিন ধরে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।
রাজধানীর পার্ক ও উদ্যানগুলো সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ফার্মগেটের আনোয়ারা উদ্যানের সামনে সমাবেশ করেন বাপা ও গ্রিন ভয়েসসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
পরে লংমার্চ করে তারা আনোয়ারা উদ্যান থেকে পান্থকুঞ্জ পার্কে গেলে সেখানে অবস্থানকারীদের সঙ্গে ‘বাকবিতন্ডার’ জেরে হামলার ঘটনা ঘটে। যার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
পান্থকুঞ্জে হামলার সূত্রপাত বিষয়ে পরিবেশবিদ পাভেল পার্থ বলেন, “পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষার জন্য ২১ দিন ধরে কয়েকটি ছেলে সেখানে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান নিয়েছে। এই আন্দোলনের সঙ্গে স্থানীয় জনগণ সমর্থন জানিয়ে আসছেন।
“আজ হঠাৎ করে বাপা, গ্রিন ভয়েসসহ কয়েকটি সংগঠনের দেড়শ’র মত লোক পান্থকুঞ্জের ভেতরে ঢুকে যায়। তারা সেখানে সমাবেশ করতে চাইলে অবস্থানরতরা বলেন ‘এখানে সমাবেশ কেন? আপনারা চাইলে সংহতি জানাতে পারেন, কিন্তু সমাবেশ কেন?”
তিনি বলেন, “এ নিয়ে বাকবিতন্ডার জেরে একপর্যায়ে সেখানে অবস্থানরত ছেলেদের কয়েকদফা মারধর করা হয়। এ সময় তাদের বাঁচাতে স্থানীয় এক নারী চা দোকানি এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয়।
“তাদের একটি মাত্র হ্যান্ডমাইক ছিল সেটিও ভাংচুর করা হয়। সেখানে অবস্থানরত ছেলেদের তাঁবুগুলো ছিড়ে ফেলে, প্ল্যাকার্ড ছিড়ে ফেলে। কাটা গাছের গুড়ি দিয়ে বেশকিছু শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়েছিল, সেসবও নষ্ট করে ফেলেছে।
“শেষ পর্যায়ে সবাই বাউন্ডারির বাইরে চলে গেলে সেখানেও একটা ছেলেকে পেয়ে মারধর করা হয়। এতে অন্তত ৭-৮ জন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।”
তবে এই হামলার ঘটনায় পুলিশের সহায়তা না চাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিচার দাবি করছি।”
হামলায় আহত নয়ন সরকার বলেন, “প্রতিদিনকার মতো আমাদের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সেখানে বসে আছি। সাড়ে ১২টার দিকে একটা মিছিল ঢুকল। ধরে নিলাম, তারা সংহতি জানাতে আসছে। কিন্তু এখানে যারা ২১ দিন ধরে আছে তাদেরতো জিজ্ঞাসা করবে।
“তারা এসব না করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করে। তখন আমাদের পক্ষ থেকে একজন হ্যান্ডমাইকে বলেন, ‘আপনারা কি ক্রেডিট নেওয়ার জন্য এসেছেন? গ্রিন ভয়েস ভাড়াটে ভলান্টিয়ার এনে আন্দোলন করে।’ এ নিয়ে বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে তারা উত্তেজিত হয়ে মারতে আসে। ৩০-৩৫ মিনিটে ৫ দফায় আমাদের মারধর করা হয়।”
এতে আমিরুল রাজিব, জাকির, লিমন, আহাদ, ফয়সালসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হওয়ার কথা বলেছেন নয়ন। তিনি বলেন, “তারা বাইরে গিয়ে রাস্তায় নাইমুল হাসানকে পেয়ে সেখানেও তাকে মারধর করেছে।”
এমন অভিযোগের বিষয়ে গ্রিন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক ও বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, “আমরা সকালে আনোয়ারা পার্কে সমাবেশ করে বাপাসহ বিভিন্ন সংগঠন পান্থকুঞ্জে অবস্থানরতদের সংহতি জানাতে যাই।
“আমাদের ইচ্ছা ছিল পার্কে প্রবেশ করে তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে চলে যাবো। তখন ওখান থেকে বলা হয় আমরা কেন গেছি? আমরা দালালি করছি, ভাড়াটিয়া গুণ্ডাবাহিনী নিয়ে গেছি এসব বলা হয়। আমরা নাকি তাদের আন্দোলন হাইজ্যাক করতে গিয়েছি।
“একপর্যায়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করলে গ্রিন ভয়েসের ছেলে মেয়েরা উত্তেজিত হয়ে তাদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ায়। তারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।”
২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর দুপুরের পর পান্থকুঞ্জ পরিদর্শনে যান অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এ সময় আন্দোলনকারীরা পান্থকুঞ্জ পার্কে র্যাম্প নামানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান।
সেদিন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের র্যাম্প পান্থকুঞ্জ পার্ক দিয়ে নামবে কি না, সে বিষয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেছিলেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। একইদিন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শ দেন।