ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার বিষয়ে ঢাকায় এক আলোচনায় সভায় নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় বিচার প্রক্রিয়ায় জড়িত দুই বিশেষজ্ঞ।
Published : 10 Jan 2025, 02:06 AM
যেকোনো দেশে পালাবদলের প্রেক্ষাপটে জাতীয় সমঝোতা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অপরাধের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছেন আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় এসব প্রক্রিয়ায় জড়িত দুই বিশেষজ্ঞ।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার বিষয়ক এক আলোচনায় নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন তারা।
এ দুজন হলেন- দক্ষিণ আফ্রিকার মানবাধিকার আইনজীবী ইয়াসমিন সুকা এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে আইনজীবী, ম্যাজিস্ট্রেট, তদন্তকারী বিচারক ও প্রসিকিউটর হিসাবে কাজ করা কার্লোস ক্যাস্ট্রেসানা ফার্নান্দেজ।
বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট ও সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস স্টাডিজের যৌথ আয়োজনে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রেক্ষিতে সত্য, ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও প্রতিকার: আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার তুলনামূলক অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এ আলোচনায় অংশ নেন তারা।
দক্ষিণ আফ্রিকা, সিয়েরা লিওন ও শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ইয়াসমিন সুকা বলেন, “একটি বড় শিক্ষা হচ্ছে, আপনি ন্যায়বিচার ছাড়া সমঝোতা বা জাতীয় ঐক্য পাবেন না। এই প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা প্রধান উপাদান।
“অপরাধের জবাবদিহিতার বিষয় যখন আমরা বলছি, তখন আমাদরদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, এটা অনেক দেশে খুবই কঠিন।”
অপরদিকে আর্জেন্টিনা, গুয়াতেমালা ও কলম্বিয়ায় কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কার্লোস ক্যাস্ট্রেসানা বলেন, নতুন পরিস্থিতিতে সবার বিচার করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়তে পারে। সেজন্য বিচার এমনভাবে করতে হবে, যাতে একটা টার্নিং পয়েন্ট (সন্ধিক্ষণ) হিসেবে দেখানো যায়।
“আপনি এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু করতে পারেন- যাতে আপনি দেখাতে পারেন আপনি অতীতকে পুরোপুরি ঠিক করতে পারবেন না, তবে আপনি আইনশৃঙ্খলা ফেরানো এবং এমন ভবিষ্যতে না ঘটার প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেন। আপনি সবাইকে শাস্তি দিতে পারবেন না। তবে সবাই বুঝবে যে আপনি কিছু বড়ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পেরেছেন।“
ইয়াসমিন সুকা দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন এবং সিয়েরা লিওনের ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের সদস্য ছিলেন।
তিনি শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ তদন্তের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের প্যানেল অব এক্সপার্টস অন অ্যাকাউন্টেবিলিটি এর সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ সুদানের মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘ কমিশনের চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আর ড. কার্লোস ক্যাস্ট্রেসানা ফার্নান্দেজ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আইনজীবী, ম্যাজিস্ট্রেট, তদন্তকারী বিচারক ও প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করছেন। তিনি গুয়াতেমালায় আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে কাজ করেছেন।
বর্তমানে তিনি দক্ষিণ সুদানের জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার এবং কলম্বিয়ার স্পেশাল জুরিসডিকশন ফর পিস এর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ইয়াসমিন সুকা বলেছেন, অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করাটা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যা নিয়ে সমাজকে লড়াই চালাতে হয়।
”আমার দেশে (দক্ষিণ আফ্রিকা) রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ১৫ বছর ২০০ বেশি মামলা আদালতের মাধ্যমে সুরাহা করতে চেয়েছি। এর উদ্দেশ্য ছিল ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো যাতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচার পান।”
ক্রান্তিকালের ন্যায়বিচারের চারটি মূল স্তম্ভ থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সত্যটা জানার অধিকার, বিচারের অধিকার, প্রতিকারের অধিকার এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হওয়ার নিশ্চয়তা।
“অর্থাৎ আপনি যদি প্রথম তিনটি ঠিক করতে পারেন, নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কার করেন, খারাপ লোকের মূলোৎপাটন করেন- তাহলে বলা যাবে আপনি পুনরাবৃত্তি রোধের গ্যারান্টি দিতে পারলেন।”
দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কারণে বিচার নিশ্চিতে বেগ পাওয়ার কথা তুলে ধরেন ইয়াসমিন সুকা।
তিনি বলেন, “আমার নিজের দেশসহ অনেক জায়গায় দেখেছি, দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক এলিটরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। যেমন, আমার দেশে বিচার ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ।
“আমরা আশা করতে পারি না, বিচার বিভাগ ভয় বা পক্ষপাতের ঊর্ধ্বে উঠে স্বাধীনভাবে কাজ করবে। যেখানে প্রসিকিউশন ও তদন্ত ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানও। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও আলোচনা চলেছিল, যে প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল, অপরাধ ও সহিংসতার অংশ ছিল। এই পৃথিবীর বহু দেশেই উঠেছে।”
এমন ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা খুব চ্যালেঞ্জিং হলেও অসম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যদি ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন দেশজ ও আন্তর্জাতিক দুই ধরনের বিচার প্রক্রিয়াকে কাজে লাগাতে পারে।”
ইয়াসমিন সুকা বলেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রমাণের অভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাক্ষ্য সংগ্রহ ও বজায় রাখার বিষয়ে প্রসিকিউটরদের প্রশিক্ষণও গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো দুর্নীতিবাজ ও অধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচার করা যায় না। এই ধরনের ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক আদালত ব্যবহার করা যেতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকায় কেউ যুক্তি দিচ্ছিল, প্রথমে আপনাকে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তারপর আপনি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন। বর্ণবাদী শাসকসহ অনেকে যুক্তি দিচ্ছিল, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বিরোধ মেটানো হচ্ছে ন্যায়বিচারের পূর্বশর্ত। আর ভিকটিমদের উদ্বেগ ছিল প্রতিকার, জবাবদিহিতা এবং অপরাধীদের বিচারে বিষয়ে।”
সবার বিচার করতে গেলে পুরো ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে, এমন অবস্থান থেকে নতুন ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমরা সুযোগ দিয়েছি, একটা সময়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় এসে জনসম্মুখে এসে অপরাধের বিষয় বলার। তারা যদি প্রমাণ করতে পারে, তারা রাষ্ট্রের নির্দেশনায় অপরাধ সংঘটন করেছে, তাহলে তারা ক্ষমা পাবে এবং জেলে যেতে হবে না।”
ইয়াসমিন সুকা বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রুথ কমিশন বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদলের নির্দেশক হয়ে যায়। কেননা, এটাই বিশ্বে প্রথম শুনানির ব্যবস্থা করে। এক্ষেত্রে কেবল ব্যক্তির অধিকার দেখা নয়, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও দেখা হয়েছিল। এর মাধ্যমে উঠে এসেছিল, কোন পরিস্থিতিতে এসব অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।
‘ভিকটিমরা হাল না ছেড়ে বিচার নিশ্চিত করেছে’
আর্জেন্টিনা ও চিলির দুই স্বৈরশাসকের বিচার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে ভিকটিম, তাদের পরিবার ও মানবাধিকারকর্মীদের অনড় অবস্থান কীভাবে ভূমিকা রেখেছিল, আলোচনা অনুষ্ঠানে তা তুলে ধরেন কার্লোস ক্যাস্ট্রেসানা ফার্নান্দেজ।
তিনি বলেন, অনেকক্ষেত্রে অপরাধীরা নিজেদের দায়মুক্তিও নিয়ে নেয়। কেননা, তারা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের জন্য দায়মুক্তি নেয়।
কার্লোস ক্যাস্ট্রেসানা বলেন, আর্জেন্টিনায় ৩০ হাজার মানুষ গুম হয়। যখন রাউল আলফনসিন ক্ষমতায় এসে সামরিক জান্তাকে বিচারের আওতায় আনে, বিচারের সময় দুটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়। এরপর দুটি ক্ষমার আইন এবং এরপর রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয় আসে। যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পরও জর্জ রাফায়েল ভিয়েলাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
“কিন্তু ভিকটিম পক্ষ বিচারের আশা ছেড়ে দেয়নি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ভিকটিমরা বিচারের দাবি করে গেছে।”
তিনি বলেন, এরপর ১৯৮৪ বিচারের আন্তর্জাতিক এখতিয়ার ব্যবহার করে তাকে স্পেনে পুনরায় বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার পরিস্থিতিও পরিবর্তন হয় এবং ক্ষমার আইন পরিবর্তন করে তাকে আবার বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এরপর তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং পরে কারাগারে থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
বিচারকের দায়িত্ব পালন করা এই আইনজীবী বলেন, চিলিতে সরাসরি বিচারের দিকে না গিয়ে ট্রুথ কমিশনের মাধ্যমে ক্রান্তিকালীন প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ কারণে জেনারেল পিনোশে সফল স্বৈরশাসক হয়ে ওঠেন এবং অপরাধ করেও আজীবনের জন্য দায়মুক্তি পেয়ে যান।
“তিনি ১৭ বছরের স্বৈরশাসন চালান। তার ক্ষমতা গ্রহণের পরের দিনগুলোতে তিন হাজার মানুষ নিহত হয়, এক হাজার ২০০ মানুষ গুম হয়। ১৯৮৮ সালে গণভোটে হেরে যান তিনি। এর মধ্যে নিজের অপরাধের দায়মুক্তি নিজেই নিয়ে নেন। সংসদের মাধ্যমে আজীবনের জন্য দায়মুক্তি নেন, যাতে জীবনের কোনো সময়েই তার বিচার যেন না হয় “
তিনি বলেন, “আর্জেন্টিনার মত চিলিতেও ভিকটিমরা বিচার দাবিতে হাল ছাড়েনি। এরপর স্পেনের আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগের মধ্যে ছিল গণহত্যা, সন্ত্রাস ও নির্যাতন।
“চিলির মানবাধিকারকর্মীরা ২০০টি গুমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনে। ৩০ হাজারের বেশি নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। স্পেনের পাশাপাশি ব্রিটিশ আদালতেও ওই তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু ব্রিটিশ হাই কোর্ট পিনোশেকে দায়মুক্তি দেয়। কেননা, রাষ্ট্রপ্রধানের দায়মুক্তি থাকার কারণে আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিচার করা যাবে না। এরপর হাউজ লর্ডসে এটা অভিযোগ আনা হয়। আমরা জোর দিতে থাকি।”
ওই সময়ের ঘটনার বর্ণনা করে তিনি বলেন, কিন্তু স্প্যানিশ ট্রাইব্যুনাল রায় দেয় এটা আন্তর্জাতিক এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে এবং এখন রাষ্ট্রপ্রধান না হওয়ায় তিনি দায়মুক্তির আওতায় পড়েন না। আর নির্যাতন হলে আন্তর্জাতিক আইনে তা দায়মুক্তির আওতায় পড়তে পারে না।
কার্লোস ক্যাস্ট্রেসানা ফার্নান্দেজ বলেন, এরপর হাউজ অব লর্ডসে মানবাধিকারকর্মীদের লড়াইয়ের পর রায় নিজেদের পক্ষে পান এবং তাকে স্পেনে প্রত্যর্পণের আদেশ হয়।
“১৯৮৮ সালের পরে নির্যাতনের বিচার করা হবে, এমন শর্তে ১৯৯৯ সালে তাকে স্পেনে পাঠানোর রায় দেয় হাউজ অব লর্ডস।”
ক্রান্তিকাল পার হওয়ার ধারাবাহিকতায় চিলির সংসদে তার দায়মুক্তি বাতিল হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিচারের অনেক উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তার বিচার হয়নি। তবে এটার মাধ্যমে একটা বাঁক বদলের সূচনা হয়েছিল, পিনোশেও আন্তর্জাতিকভাবে বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন।”
আর্জেন্টিনা, গুয়াতেলা ও কলম্বিয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ”কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনি যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেখানে বিচার করতে পারবেন না। আপনাকে অন্যান্য জায়গায় বিচার করার আওতায় নিতে হবে। কেননা, এটা অনেক আগে থেকে প্রতিষ্ঠিত যে, আন্তর্জাতিক অপরাধীদের আন্তর্জাতিক পরিসরে বিচার করা যায়।”
১৯৭৬ সালে স্বাক্ষরিত ইন্টারন্যাশনাল কভেনান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের অধীনে গণহত্যা, নির্যাতন, গুমের মত অপরাধের আন্তর্জাতিক বিচারের সুযোগ নিশ্চিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, এর আওতায় দেশগুলো নাগরিককে সুরক্ষা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হওয়ার বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে এটা ঘটে গেলে তার প্রতিকারের জন্য তদন্ত, বিচার, শাস্তি ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে।
“ক্রান্তিকালীন পর্যায়ে এগুলো করা খুবই কঠিন। কেননা বিচারব্যবস্থা, নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও প্রসিকিউটরিয়াল অথরিটি এবং কারা ব্যবস্থা সাধারণত সমস্যার অংশ থাকে, সমাধানের নয়। এক্ষেত্রে আপনাকে ভিন্ন রকম পথ বের করতে হয়।”
ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে মুখ্য উদ্দেশ্য হিসেবে ‘বিরোধ থেকে সহাবস্থানে যাওয়া এবং এর মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করাকে’ দেখান কার্লোস ক্যাস্ট্রেসানা।
তিনি বলেন, বিচার অতীতের ভুলগুলোকে সংশোধন করে দিতে পারে না। তবে বিচারের মধ্য দিয়ে অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত হয় এবং এটাও প্রমাণ করে যে প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে কাজ করতে হবে। সংঘাত থেকে সহাবস্থানের পথে উত্তরণ এবং আইনের শাসন ফিরিয়ে আনাটা জরুরি।
আলোচনার সঞ্চালক ব্লাস্টের সম্মাননীয় নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, বাংলাদেশ একটি সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যখন ন্যায়বিচার ও বিভেদ ঘুচিয়ে এক সাথে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রায়শই, আদালতগুলি অতিরিক্ত চাপে পড়ে এবং এটি দেখা যায় যে নাগরিক সমাজ কীভাবে অন্তর্বর্তীকালীন বিচার নিশ্চিত করতে সহায়তা করতে পারে।
ব্লাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল বারী আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।