“আমরা আরও প্রত্যাশা করি, জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্যতা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা নিরপেক্ষতা, সততা ও বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখবেন।”
Published : 08 Dec 2023, 11:19 PM
ভোটকে সামনে রেখে বিভিন্ন দিক থেকে ‘রাজনৈতিক চাপে’ থাকার কথা তুলে ধরে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
নভেম্বর মাসের শেষে জাতিসংঘ মহাসচিবের নির্বাহী দপ্তরের শেফ দ্য কেবিনেট আর্ল কুর্টনি রেটর বরাবর ওই চিঠি পাঠালেও তা প্রকাশ পেয়েছে শুক্রবার।
ওই চিঠিতে শান্তিরক্ষা মিশনসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে তিনি লেখেন, “সক্রিয় ও সহযোগিতাপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের প্রত্যাশা হলো, রাজনৈতিক উন্নতি এবং আমাদের জনগণের সামাজিক-অর্থনৈতিক মুক্তির যাত্রায় জাতিসংঘ সহযোগিতা ও সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
“এক্ষেত্রে এবং আমাদের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন দিক থেকে আমরা যে অযৌক্তিক, অযাচিত ও স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক চাপ মোকাবেলা করছি তার প্রেক্ষাপটে আমরা আশা করি, বাংলাদেশ যাতে তার উন্নয়ন যাত্রায় দৃঢ় থাকতে পারে, সেজন্য জাতিসংঘ সচিবালয়, সংস্থাসমূহ ও দেশীয় কার্যালয়সহ জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা গঠনমূলক ও সহযোগিতাপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
নাগরিকদের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার উন্নয়ন ও সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ দৃঢ় বিশ্বাসী উল্লেখ করে মোমেন বলেন, “জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবার জন্য শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ানুগ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রচেষ্টায় জাতিসংঘ বিশ্বস্ত অংশীদার হিসাবে অব্যাহতভাবে কাজ করবে বলে আমরা আশাবাদী।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গণতন্ত্র সমুন্নত রাখা, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয়। বিশ্বে এটা একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্রের ‘ক্রুসেডার’ বর্ণনা করে মোমেন লেখেন, “ভোট, খাবার ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিতের জন্য তিনি অনেক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছেন।
“১৫ বছরের শাসনামলে হাজার হাজার নির্বাচন তিনি করেছেন; উপ-নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন, আঞ্চলিক নির্বাচন, মেয়র নির্বাচন এবং অতি অল্প সংখ্যক ছাড়া এর সবগুলো অবাধ ও নিরপেক্ষ ছিল।”
মোমেন বলেন, “অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তিনি (শেখ হাসিনা) দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কিন্তু বিক্ষোভের নামে বিরোধী দলগুলো সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তিতে আগুন দিচ্ছে, জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারার যে কার্যক্রম চালাচ্ছে তা কোনোভাবে তিনি সহ্য করবেন না। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের সঙ্গে যে কোনো ধরনের পরবর্তী আলোচনার বিষয়ে আমরা প্রস্তুত আছি।”
মোমেনের ওই চিঠি যাওয়ার কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে সহিংসতার ঘটনায় একটি বিবৃতি দিয়েছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়।
২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সহিংসতার সময় সাংবাদিকদের উপর হামলায় ‘ক্ষমতাসীনরাও জড়িত ছিল’ এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয় ওই বিবৃতিতে।
ওই বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়ে মোমেন ওই সময় বলেছিলেন, “অনেকগুলো বর্ণনা ত্রুটিপূর্ণ, অসম্পূর্ণ। আসল ঘটনা থেকে বিবর্জিত।”
জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে ‘বস্তুনিষ্ঠতা’ বজায় রাখার প্রত্যাশা জানিয়ে সদর দপ্তরে পাঠানো চিঠিতে মোমেন লেখেন, “আমরা আরও প্রত্যাশা করি, জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্যতা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা নিরপেক্ষতা, সততা ও বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখবেন।
“যদি তাদের প্রতিবেদনগুলো মিথ্যা ও বস্তুনিষ্ঠতাহীন হয় এবং বাস্তব তথ্যের নিরিখে না হয়, তাহলে তারা বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে পারেন। আর তা হবে জাতিসংঘের জন্য অশুভসংকেত।”