“আমাদের মধ্য থেকেও যদি কেউ এ কাজগুলো করে, তাদেরকেও বয়কট করা হোক, কোনো সমস্যা নাই,” বলেন তিনি।
Published : 16 Aug 2024, 01:19 PM
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়ক জড়িত থাকলে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “বয়স্ক অনেককে কান ধরে উঠবস করানো, বিবস্ত্র করা, অসংখ্য মানুষের ফোন চেক করা, নারীদের গায়ে হাত তোলা, সাংবাদিকদের উপরে হামলাসহ বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার।
“যে জায়গাগুলোতে আসলে স্টুডেন্টদের কিছু পার্টিসিপেশন ছিল, আমরা জানি না তারা কোন মতাদর্শ ধারণ করে। আমরা তাদেরকে ডিফাইনও করতে পারব না। কিন্তু আমরা খুঁজছি আমাদের কোনো সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়ক জড়িত আছে কি না। আমরা খুঁজে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যদি কোনো সিঙ্গেল একজন সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়ককে এর সঙ্গে জড়িত পাই, তৎক্ষণাৎ তাকে আমাদের কমিটি থেকে বহিষ্কার করব।”
স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে।
তার পরিবারের ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও সেদিন ঘাতকের গুলি থেকে রেহাই পায়নি।
বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্মরণে আগের রাত বুধবার বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে শহীদ বেদীতে মোমবাতি প্রজ্বালন করে শ্রদ্ধা জানান শতাধিক মানুষ।
বিকাল থেকেই সব হত্যার বিচারের দাবিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সমানে অবস্থান নেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী।
এক পর্যায়ে একদল যুবককে লাঠি নিয়ে এসে রোকেয়া প্রাচীসহ উপস্থিত কয়েকজনের উপর হামলা করে। রোকেয়া প্রাচীকে মারতে মারতে ৩২ থেকে বের করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
পরদিন বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার জন্য বা আওয়ামী লীগ পরিচয়ে কেউ এলে তাকে মারধর করা হয়।
এদিন শ্রদ্ধা জানাতে আসা অন্তত ৩০ জনকে একটি কলেজে ‘আটকে’ রেখেছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। পরে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা।
সারজিস বলেন, “আওয়ামী শাসনামলে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু থেকে শুধু করে সব ধরনের র বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়েছে। এবং অতিরঞ্জিত অনেক ঘটনা নিজের মন মতো করে বানিয়ে ইতিহাস সাজানো হয়েছে। কিন্তু শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে তাজউদ্দিন আহমদকে সেই সম্মান দেওয়া হয়নি- যেটি তারা প্রাপ্য।
“বাংলাদেশ নিয়ে কথা বললে যাদের অবদান একদম অনস্বীকার্য, যে যতটুকু সম্মান পাওয়ার যোগ্য- তাকে ততটুকু সম্মান দিতে হবে। কিন্তু একটা গণঅভ্যুত্থানের পরও যখন আপনি আপনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসাগুলো বাস্তবায়নের চিন্তা করেন, এগুলো আমরা আমাদের জায়গা থেকে কখনোই সমর্থন করি না।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস বলেন, “আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জনগণকে তাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ প্রতিবাদটুকু করা উচিত; যারা এগুলা করবে- তাদেরকে বয়কট করার জন্য জনগণ প্রস্তুত। আমাদের মধ্য থেকেও যদি কেউ এ কাজগুলো করে, তাদেরকেও বয়কট কার হোক, কোনো সমস্যা নাই।”
বৃহস্পতিবার এক কর্মসূচিতে তিনি হুঁশিয়ার করেছিলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ‘প্রতিবিপ্লবের’ চেষ্টা করা হলে আওয়ামী লীগের কোনো ‘অস্তিত্ব থাকবে না’।
প্রতিবিপ্লব ঠেকাতে সংগঠনটির ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি ছিল সেদিন। সেদিন সারজিস আলমসহ কয়েকজন সমন্বয়ক শাহবাগে ছিলেন বলে জানান তিনি।
সারজিস বলেন, “এখন যদি প্রতিবিপ্লব হয়, ছাত্রজনতার যে বিপ্লব- সেটির বিপক্ষে গিয়ে একটি চক্রান্তের ফলে হবে; এটা আমরা হতে দিতে পারি না। তবে কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা কিছু অফিসার এসে অনুরোধ করে- এখানে যদি আমরা কর্মসূচি করি তাহলে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। তাদের কথা শুনে আমরা সাথে সাথে জাদুঘরের সামনে চলে এসেছি।”
প্রয়াণ দিবসে বঙ্গবন্ধুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শ্রদ্ধা জানাতে পারতো কি না এবং যারা শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছে, ছাত্রসমাজ তাদেরকে কেন সুরক্ষা দিল না-এমন প্রশ্নে সারজিস বলেন, “দায় দিতে হলে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে দিতে হবে। কারণ এ দায় একদিনে নয়, বরং ১৬ বছরে তৈরি হয়েছে। তখন সবাই চুপ ছিল।
“১৬ বছর পরে যে জনবিস্ফোরণ ঘটেছে, এরপর সবাই সবার জায়গা থেকে যতকিছু বলার বলছে। এই গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের যেসব নেতাদের উপরে অত্যাচার হয়েছে- ধরে নিলাম তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, মামলা হয়েছে- এটার জন্য কি আমরা এখন শোক পালন করব? যদি এটার জন্য না করি- ১৫ অগাস্ট ১৯৭৫ এর জন্য আমরা শোক পালন করব না; তখন যখন এ ঘটনাগুলো ঘটে- পুরো বাংলাদেশে মিষ্টি বিতরণ হয়েছিল। কারণ ৭২ থেকে ৭৫ এর ঘটনা যদি দেখেন, তখন স্বৈরাচারের চরম একটি মাত্রা ছিল। রাষ্ট্রিয়ভাবে এ শোকটি পালন করা উচিত না।”