নতুন এ বিধিমালার আলোকেই আগামীতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
Published : 09 Apr 2025, 01:06 AM
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ‘সিদ্ধান্ত অনুযায়ী’ ৯৩ শতাংশ সহকারী শিক্ষক পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের বিধান রেখে নতুন নিয়োগ বিধিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে।
অর্থাৎ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ৮০ শতাংশ নারী ও পোষ্য কোটা আর ‘থাকছে না’।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে এ নিয়োগ বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নতুন এ বিধিমালার আলোকেই আগামীতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয় অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আকতার খান মঙ্গলবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা বিন্যাস নিয়ে আপিল বিভাগের একটি রায় আছে। ওই রায় অনুযায়ী প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। সে রায়কে ইনকর্পোরেট করে শিক্ষক নিয়োগে নতুন বিধিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
সর্বশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ২০১৯ সালে করা বিধিমালায় সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদ ৬০ শতাংশ নারী ও ২০ শতাংশ পোষ্য প্রার্থীদের দ্বারা পূরণ করার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমানে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম ও প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান বা সাবেক শিক্ষকের অবিবাহিত সন্তান, বিধবা স্ত্রী বা বিপত্নীক স্বামী বা তালাক পাওয়া মেয়ে পোষ্য কোটার সুবিধা পাবেন বলে বলা হয়েছিল ওই বিধিমালায়। সে অনুযায়ী সর্বশেষ নিয়োগ প্রক্রিয়া চলেছে।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে যে ৮০ শতাংশ কোটা উঠে যাচ্ছে সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
গত ৮ ডিসেম্বর খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “প্রাথমিকে ৯৩ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে, থাকছে না কোনো পোষ্য কোটা।”
২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ পদে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা ছিল।
ওই বছর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারীরা। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদ দেওয়া ছিল তাদের মূল দাবি।
শেষ পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কোটা বাতিলের অনুশাসন দেন। পরে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে তখনো ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল ছিল।
এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৫ জুন হাই কোর্ট সেই পরিপত্র বাতিল করে কোটা পুনর্বহালের রায় দিলে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়, যা সহিংস রূপ নেয়।
পরে গত বছরের ২১ জুলাই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তা বাতিল করে কোটার নতুন বিন্যাস ঠিক করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আর পরবর্তীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
পরে ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান।