এখন কনভেনশনে স্বাক্ষর করা হলে ঢাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেরিফিকেশনই যথেষ্ট হবে।
Published : 20 May 2024, 08:20 PM
বাংলাদেশে দূতাবাস নেই– এমন দেশে যেতে সনদ সত্যায়নের জন্য দিল্লি যাওয়ার যে ভোগান্তি এতদিন চলছিল, তা লাঘবের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘এপসটিল কনভেনশন-১৯৬১’ নামের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যার ফলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়নের মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় সনদগুলো বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
সাধারণত বিদেশে যাওয়ার সময় শিক্ষা সনদ, বৈবাহিক সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যন্য প্রয়োজনীয় সনদগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন বা সত্যায়ন করে নিতে হয়। ঢাকায় যেসব দেশের দূতাবাস নেই, সেসব দেশের ক্ষেত্রে কাছাকাছি কোনো দেশে থাকা দূতাবাসে গিয়ে এই ভেরিফিকেশনের কাজটি সারতে হয়।
এখন কনভেনশনে স্বাক্ষর করা হলে ঢাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেরিফিকেশনই যথেষ্ট হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, “এপসটিল কনভেনশন-১৯৬১ এ বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ১৯৬১ সালের একটা কনভেনশন আছে, যেখানে ১২৬টি দেশ সদস্য। বাংলাদেশও এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়েছে।”
এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের শিক্ষার্থী বা অন্য কোনো ব্যক্তি বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে ভেরিফিকেশন করতে হয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করে, তারপর সেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সত্যায়িত করে।
“এরপর যে দেশে যাবে, সেই দেশের দূতাবাসে গিয়ে সত্যায়িত করতে হয়। এভাবে আমাদের দেশের সনদ অন্য দেশে কার্যকর হয়। বাংলাদেশে অনেক দেশের দূতাবাস আছে, প্রায় ৯০টির মত দেশের দূতাবাস আছে দিল্লিতে। যেসব দেশের দূতাবাস ঢাকায় নেই, ওইসব দেশের সনদ স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে এখন আমাদের দিল্লিতে যেতে হয়। এটা বিরাট একটা জটিলতা। আমাকেও একবার এই জটিলতায় পড়তে হয়েছিল।”
মাহবুব হোসেন বলেন, “এপসটিল কনভেনশনের যারা সদস্য, তাদের নিয়ম হচ্ছে- সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি ভেরিফাই বা সত্যায়িত করে দেয়, তাহলে দ্বিতীয় দেশে গিয়ে আবার ভেরিফাই করতে হয় না। কনভেনশনের মূল বিষয়টিই হচ্ছে এটা।
“এতোদিন আমরা সদস্য ছিলাম না। সে কারণে আমাদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিয়ষটি উত্থাপানের পর মন্ত্রিসভা খুব ইতিবাচকভাবে বিষয়টি গ্রহণ করে এবং অনুমোদন করে। এই কনভেনশনে স্বাক্ষর হওয়ার ফলে ইউরোপ আমেরিকার দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে আর এসব ভোগান্তি হবে না এবং ব্যয় সাশ্রয়ী হবে।”
ডি-৮ পিটিএর ডিসপিউট সেটেলমেন্ট
‘প্রোটোকল টু দ্য ডি-এইট অন ডিসপিউট সেটেলমেন্ট’ নামের একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বাক্ষর করার বিষয়টি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে।
ওআইসিভুক্ত আটটি দেশ ডেভেলপিং এইট বা ডিএইট নামে পরিচিতি। দেশগুলো হল বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, মিশর, নাইজেরিয়া, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্ক।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই দেশগুলো মধ্যে ২০০৬ সালে পিটিএ বা প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট হয়েছিল। চুক্তির আওতায় ডি-৮ ভূক্ত দেশগুলো নির্দিষ্ট পণ্য ঠিক করে এসব পণ্যের বাণিজ্যে অগ্রাধিকার সুবিধা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল।
“দেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য বা ডিসপিউট তৈরি হয়। কিন্তু সেই মতপার্থক্য কীভাবে সমাধান করা হবে এ বিষয়ে কোনো এগ্রিমেন্ট এতদিন ছিল না। এখন সেই প্রোটোকলের খসড়া তৈরি করে মতপার্থক্য নিষ্পত্তির নিয়ম ঠিক করা হবে।”
খসড়ায় আছে, প্রথমে দুই পক্ষ আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে। এর মাধ্যমে না হলে ডি-৮ গ্রুপের তত্ত্বাবধানে একটা আরবিট্রেশন প্যানেল হবে। সেই প্যানেলে দুই পক্ষে দুইজন সদস্য থাকবেন। আবার দুই পক্ষ মিলে একজন সদস্য যোগ করবে। তিনজন মিলে যে রায় দেবে সেটাই মানতে হবে। এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
‘বিমসটেক এগ্রিমেন্ট অন মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট কোঅপারেশন’
বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ‘এগ্রিমেন্ট অন মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট কোঅপারেশন’ শীর্ষক চুক্তির খসড়াও এদিন অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “বিমসটেক কোস্টাল শিপিং এগ্রিমেন্ট নামের একটি খসড়া আগে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেলো যে, শ্রীলঙ্কা বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্র, কিন্তু শ্রীলঙ্কার জাহাজ চলাচলের বিষয়টি কোস্টালের মধ্যে নেই, সেটা মেরিটাইম বা গভীর সমুদ্রের অংশ। সে কারণে কোস্টাল শিপিং এগ্রিমেন্টে শ্রীলঙ্কাকে অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছিল না।
“এখন নাম পরিবর্তন করা করে রাখা হয়েছে এগ্রিমেন্ট অন মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট কো অপারেশন। এই নামে এখন বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি হবে।”
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে জাহাজ চলাচলের জন্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে হয়। বিমসটেকের এগ্রিমেন্টের ফলে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আর করতে হবে না।
“বিমসটেকের যে সাতটি দেশ আছে, তাদের মধ্যে এখন বাংলাদেশের জাহাজ চলাচল করতে পারবে। সাধারণত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির সময় জাহাজের আকার ধরা হয়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টন। এবারের চুক্তিতে সেটা হবে ২০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি।”