“অপপ্রচার দুই দেশের বন্ধুত্বের জন্যই হুমকি।”
Published : 06 Dec 2024, 01:29 AM
বাংলাদেশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংঘঠিত ‘গণহত্যার‘বিষয়টি ভারতকে স্বীকার করে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সমালোচনাও করেন তিনি। বলেন, “অপপ্রচার দুই দেশের বন্ধুত্বের জন্যই হুমকি। আমরা আশা করি, তাদের সুমতি হবে।”
ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ সংলাপের বিষয়ে জানাতেই সাংবাদিকের সামনে আসেন মাহফুজ আলম।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পরদিন ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রধান উপদেষ্টা।
সংলাপে সমাপনী বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, “বহির্বিশ্বে কেউ কেউ আমাদের উসকানির সূত্রপাত করে। তাদের দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হয়রানি, ব্যবস্থার অভাব আমাদের ক্ষোভ সৃষ্টি করে এবং উসকানির জন্ম দেয়। এই দুটি বিষয় থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে।
“ঘটনাকে স্বীকৃতি দেব তবে উসকানির শিকার হব না। এটা কিভাবে করতে পারি, সেটা শিখতে হবে।”
বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, কবি ও রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহার, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজেদুর রহমান, বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) মহাসচিব মাহফুজুল হক, ইসলামি বক্তা ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমদুল্লাহ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব আবদুল মালেকসহ কয়েকজন আলেম অংশ নেন।
অন্যদের মধ্যে রমনার সেন্ট মেরিজ ক্যাথেড্রালের ফাদার অলভার্ট রোজারিও, বাংলাদেশ বুডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, রমনা হরিচাঁদ মন্দিরের সহ-সম্পাদক অবিনাশ মিত্র, গারো পুরোহিত জনসন ম্যুরি কামালসহ হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একাধিক নেতারা সংলাপে অংশ নেন।
পরে সংলাপের বিষয়ে ব্রিফ করেন উপদেষ্টা মাহফুজ। এ দিনের সংলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে ও বিপক্ষে যেসব শক্তি রয়েছে, তাদের একটা বার্তা সরকার দিতে চেয়েছে। সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ সম্প্রদায়গত দিক থেকে একটা পয়েন্টে আছে, এক জায়গায় মিলিত হয়েছে।
“জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যেকোনও ষড়যন্ত্র রুখতে সরকার সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। হঠকারী কাজ এ সরকার আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না; বরং আমার জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাব।”
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে বৈরিতা চলছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলে একাধিক বিবৃতি দিয়েছে নয়া দিল্লি।
এ অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে মাহফুজ সাংবাদিকের উদ্দেশে বলেন, “আমরা বলি না যে, নিপীড়ন হয় না, অলআউট বলাটা অসত্য। কিন্তু হয়ে থাকলে সেটার বিপরীতে সরকারের নেওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনারা প্রচার করবেন।
“বাংলাদেশের যেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে, সত্যটা তুলে ধরবেন। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।”
সুনামগঞ্জের ঘটনায় সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে বলে তুলে ধরেন উপদেষ্টা মাহফুজ। সেটা সংবাদমাধ্যমকে প্রচার করার অনুরোধ করেন তিনি। বলেন, “তাহলে তারা আস্থা পাবে যে, এ দেশটা তাদের, এ দেশটা সকলের।
“প্রধান উপদেষ্টা শেষমেশ বলেছেন, সম্প্রীতি দরকার। সেটার সঙ্গে ভয় যেন জড়িয়ে না যায়। বরং নাগরিকেরা যে নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে, সবার মধ্যে মেলবন্ধন যেন খুব স্বাভাবিকভাবে হয়। শুধু আমরা ঠেকায় পড়ছি তাই হিন্দু-বৌদ্ধদের ডাকছি, তা যেন না হয়।”
মাহফুজ বলেন, “জুলাই-গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যে পথে রওনা দিয়েছি, এ পথে যেন অনেক দূর যেতে পারি; বাংলাদেশের সকল দল, মত, পথ ও ধর্মের মানুষ একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে যেন বিশ্বমঞ্চে দাঁড় করাতে পারি।
“এ জন্য ধর্মীয় নেতাদের সমর্থন চেয়েছি। তারা অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। আমরা আশা করি বাংলাদেশ যে গতিতে এগোচ্ছে এবং বাংলাদেশে যে জাতীয় ঐক্য হচ্ছে, এটা ভবিষ্যতে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।”
আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সম্প্রীত সম্মেলনের প্রস্তাবের বিষয়ে সরকারের ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা একটা প্রস্তাব। এটা উপদেষ্টা পরিষদ খতিয়ে দেখবে। দেশ ও জনগণের ভালোর জন্য যেকোনও উদ্যোগ নিতে রাজি আছি।”
তিনি বলেন, “ভারতীয় আগ্রাসনের চেয়েও বড় বিষয় হল আমরা নিজেদের শক্তি কতটুকু বৃদ্ধি করতে পারলাম! আমাদের নিজেদের ভেতরে কতটুকু সংহতি আছে; কতটুকু প্রস্তুতি আছে!”
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে গণহত্যা হয়েছে তার স্বীকৃতি ভারতকে দিতে হবে।”
দেশবিরোধী অপপ্রচার রোধে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকার কাজ করবে তুলে ধরে মাহফুজ বলেন, “আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা করেছি। আশা করছি দ্রুত কিছু ফলপ্রসূ পদক্ষেপ দেখতে পাবেন।”
সামনে বৃহত্তর পরিসরে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও প্রধান উপদেষ্টা সংলাপ করবেন বলে জানান মাহফুজ।
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, “৯ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এর মধ্যে সাত বা আটটি দেশের দূতাবাস রয়েছে। তারা আমাদের রপ্তানির বড় উৎস।”