“বাংলা ৩৫ কোটি মানুষের মায়ের ভাষা। অথচ এই ভাষা আজ পর্যন্ত জাতিসংঘের দাপ্তিরক ভাষার স্বীকৃতি পায়নি,” আফসোস করে বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
Published : 21 Feb 2023, 09:23 AM
বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবারও এই বিশ্ব সংস্থার কাছে দাবি জানানোর কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, “বাংলা ৩৫ কোটি মানুষের মায়ের ভাষা। অথচ এই ভাষা আজ পর্যন্ত জাতিসংঘের দাপ্তিরক ভাষার স্বীকৃতি পায়নি। আমরা আবারও জাতিসংঘের কাছে দাবি জানাব, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের পাশাপাশি বাংলাকে যেন জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষায় স্বীকৃতি দেওয়া হয়।”
মঙ্গলবার শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সকালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “বাঙালি জাতির জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি একটি গর্বের দিন। আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় অহংকার পৃথিবীর সবকটি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে।”
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ; ওই রক্তের দামে এসেছিল বাংলার স্বীকৃতি আর তার সিঁড়ি বেয়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা।
বাঙালির সেই আত্মত্যাগের দিন এখন বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষার দিন। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর এক ঘোষণায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।
ভাষাভাষীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলা এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। সে বিবেচনায় বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করে নেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ সরকারও সেই দাবির বিষয়টি জাতিসংঘে নিয়েছে বিভিন্ন সময়ে।
তারপরও কেন তা হয়নি, তার ব্যাখ্যা দুই বছর আগে এক অনুষ্ঠানে দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার প্রক্রিয়া ‘নিজস্ব অর্থায়নের’ শর্তের কারণে থমকে আছে।
২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের কোনো আপত্তি নেই। তবে সেজন্য যে খরচ হবে, তা বাংলাদেশকে বহন করতে হবে। প্রাথমিক আলোচনায় সেজন্য প্রতি বছর ৬০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
“তারা বলেছে, প্রথম পাঁচটি ভাষা হয়েছিল জাতিসংঘ যখন সৃষ্টি হয়, পরবর্তীতে একটি নতুন ভাষা হয়েছে যে আরবি। এরপর প্রায় ১৯ বছর আরবি ভাষাভাষী দেশগুলো এর খরচ বহন করেছে। জাতিসংঘ সবসময় খরচ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকে।”
মোমেন সেদিন বলেছিলেন, জাপানি, হিন্দি ও জার্মান ভাষার জন্যও একই প্রস্তাব করা হয়েছিল। নিজস্ব খরচ বহনের শর্তের কারণে সেগুলোও দাপ্তরিক ভাষা হয়নি।
সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দেওয়ার অঙ্গীকার
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, "আজকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যে শক্তি, এই শক্তিকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। ‘জঙ্গিবাদ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’– এবার এটাই হচ্ছে আমাদের প্রত্যয়, এটাই হচ্ছে আমাদের অঙ্গীকার।"
কাদের বলেন, "যারা একুশের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা একাত্তরের চেতনাকেও বিশ্বাস করে না। একাত্তরের চেতনা আর একুশের চেতনা একই চেতনা। আজকে বিএনপি নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদী, অপশক্তি আবারও মাথা নাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তাদের পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। এই অপশক্তি, আগুন সন্ত্রাস, অগ্নি সন্ত্রাসীদের রুখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
আওয়ামী লীগ কখনো একদলীয় শাসন কায়েম করেনি মন্তব্য করে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “৭৫ এ কৃষক, শ্রমিক নিয়ে আওয়ামী লীগ যে দল গঠন করেছিল, সেটা এক দল নয়। এটা ছিল জাতীয় দল। সব দলের সমন্বয়ে ওটা চলে জাতীয় দল।
“আমি আবারো বিএনপিকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জাতীয় দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগে যোগদানের জন্য বিএনপির চেয়ারম্যান, বাকশালের চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে দরখাস্ত করে সেদিন যোগ দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান দরখাস্ত করে যোগ দিয়েছেন। কাউকে কট্টাক্ষ করার কোনো অধিকার বিএনপির নেই।"
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, "স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও পাকিস্তানি ভাবধারায় বিশ্বাসী জামায়াতকে সাথে নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।"
অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, উপ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবউদ্দিন ফরাজি ও তারানা হালিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।