রোমান কবি ওরাস সর্বজনীন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার কণ্ঠস্বর

সোহরাব সুমনসোহরাব সুমন
Published : 1 June 2022, 02:57 PM
Updated : 1 June 2022, 02:57 PM


ওরাসের কবিতায় বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রসঙ্গের ব্যবহার দেখেত পাওয়া যায়। এসেবর মধ্যে রয়েছে আগুস্তুসের রাজত্ব সংক্রান্ত বিষয়াদি। গৃহযুদ্ধ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত, ওরাস একটি ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং সর্বজনীন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার কণ্ঠস্বর বহন করেন। ওড ও এপড তথা ওয়দে (ᾠδή) ও এপিদোস (epōidós) এই উভয় পদ দ্বারা বিভিন্ন ছন্দে রচিত তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত কবিতাকে বোঝায়। ওরাসের এপিদোস আয়াম্বিক ছন্দপ্রবণ এবং এর রয়েছে একটি ব্যঙ্গাত্মক স্বর, অপর দিকে তার ওয়দেসমূহে বিভিন্ন প্রকার গীতিধর্মী ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে।

কাব্যবৃত্তি শুরুর আগে, ওরাস ব্রুতুসের বাহিনীতে যোগ দেন এবং ফিলিপ্পিতে আক্তাভিয়ান ফৌজের বিরুদ্ধে লড়েন। ৪১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ত্রিউমভিরদের কাছ থেকে সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার পর তিনি রোমে ফিরে আসেন। ৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি ভার্জিলের মাধ্যমে পৃষ্ঠপোষক ম্যাসেইনাসের সাক্ষাৎ লাভ করেন। ম্যাসেইনাস ছিলেন অক্তাভিয়ানের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী, আর এই হিসেবে ভার্জিলের সঙ্গে ওরাসেরও, ছিল রোমের সবচেয়ে ক্ষমতাধর পৃষ্টপোষক।

এপিদোস ১, ম্যাসেইনাসকে সম্বোধন করে, আন্তোনি ও ক্লেওপাত্রার বিরুদ্ধে অক্তাভিয়ানের সামরিক অভিযানে যোগ দেয়া তার পৃষ্টপোষকের সহগমনে ওরাসের অভিপ্রায়ের কথা ব্যক্ত করে, আকতিউম যুদ্ধে যে অভিযান চূড়ান্ত পরিণতিতে পৌঁছে। এটা জানা যায় না যে বাস্তবে ম্যাসেইনাস ও ওরাস এই দুজনের কে সশরীরে যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন। এপিদোস ৯ এবং ওয়দে ১.৩৭ আকতিউমে অক্তাভিয়ানের বিজয়ও উদযাপন করে।

এপিদোস— ১

আপনি যাবেন লিবুরনীয় রণতরীতে চড়ে
ওদের উঁচু উঁচু দুর্গকূট জাহাজের ভীড়ে,
ম্যাসেইনাস বন্ধু আমার, আছেন প্রস্তুত
কায়জারের সব বিপদে শরিক হতে।
কিন্তু আমি করবটা কি? আমার জীবন ততক্ষণ মধুর
আপনি বেঁচে থাকলে, কিন্তু তিক্ত অন্যথায়
আমার কি সাজে বসে থাকা আপনার নির্দেশের আশায়,
যদিও সুখকর নয় যদি না আপনিও তা করেন উপভোগ,
অথবা করব কি অনুসরণ এই ক্লেশের, যা আমি করব ভোগ
তেমন মন নিয়ে যেমন সাহসী লোকেদের থাকে?
আমি তা করব ভোগ, এবং যদি অনুসরণ করি আপনাকে
গিরি শৈলশিরা আর আতিথ্যবিমুখ কাক্কাসোস জুড়ে অথবা
পশ্চিম সমুদ্রের সবচেয়ে দূরতম জলরাশি দিকে সারাটা পথ, আমি
নির্ভীক মনে এটাই করব।
করবেন জিজ্ঞেস কীভাবে আপনার শ্রম করব লাঘব সঙ্গে থেকে?
যখন নিজেই আমি সমরবিমুখ এবং ক্ষীণবল?
আমি সঙ্গে রবো আপনার সহচর হয়ে এবং রবো নির্ভীক,
যদিও দূরে যে রয় তার বেশি ভয় হয়।
অবিকল পাখি যেভাবে থাকে বসে পালকহীন ছানার পাশে
ভয়ে থাকে পিছলে চলা সাপ না নিকটে আসে
আরো বেশি ভয় হয় যখন ছানারা সব একলা থাকে, যদিও
তখন থাকলে কাছে, নিজেও কোনো আসত না কাজে।
স্বেচ্ছায় এরকমই হবে এবং প্রতিটি যুদ্ধে
আশা নিয়ে লড়ব আপনারই পক্ষে,
আমার পশুপাল বাড়াবো এটা দেখাতে নয় যে
লাঙ্গল কাতরে ওঠে অসংখ্য বলদের টানে,
অথবা সরাতে হবে আমার পশুপাল ক্যালাব্রিয়া থেকে
লুকানিয়ান চারণভূমিগুলোতে খরার আগেই,
অথবা পাবার জন্যে নয় একটি নজরকাড়া ভিলা তুসকুলুমায়
ছুঁয়ে থাকবে যা সিরীয় প্রাচীর।
যথেষ্ট এবং তারচেয়ে অধিক জনাব আপনার উদারতা
আমাকে করেছে সমৃদ্ধ: গড়ব না ভাণ্ডার সম্পদের
দুনিয়াতে আমি কৃপণ ক্রেমাশের মতন,
দেবো না উড়িয়ে ওদের ঢিলে কটিবন্ধের উড়নচণ্ডি হয়ে।

এপিদোস— ৯
যখন আমি, উল্লাস ভরে কায়জারের বিজয়ে,
করব পান ক্যাইকুবান মজুদ ওয়াইন উৎসবের ভোজের
সঙ্গে আপনার— কেননা তা তুষ্ট করে জোগাকে— আপনার অভিজাত
বাড়িতে
সৌভাগ্যবান ম্যাসেইনাস, যেভাবে কোনো লাইয়ের (লীরা)
মিশে যায় এর সঙ্গীতে বাঁশীর সুরের সাথে,
মিলিত হতে থাকবে ফ্রীজায়েনের সঙ্গে দোরীয়?
ঠিক যেমন, সম্প্রতি, যখন পুত্র
নেপতুনুসের পালালেন, পোড়া সব জাহাজের পিছু নিয়ে গভীরে,
নগরকে শাসানোর পর শৃঙ্খল সহযোগে, ওই একই লোকেদের
মুক্ত করে অবিশ্বস্ত দাসেদের থেকে তিনি বনে যান বন্ধু।
ওই রোমান সৈনিক (হায়!)— যদিও করবে অস্বিকার ভাবিপ্রজন্ম তা—
পরিণত হয়ে ক্রীতদাস এক নারীর,
কুজকাওয়াজে হন অগ্রসর অস্ত্র আর প্রতিরক্ষা চৌকি সমেত
এবং করেন মান্য নির্দেশ সমূহ বলি পড়া খোজাদের।
সূর্য প্রত্যক্ষদর্শী সমূহ মশারীর (কলঙ্কজনক)
সামরিক ওই নিশান সবের মাঝে।
সূর্যের দিকে দু'হাজার গলবাসী ফেরালে
তাদের হ্রেষারত ঘোড়া, যখন ওরা সুর তুলছিল "কায়জার!রবে"
শত্রু জাহাজ সকল, বামে মোড় নিয়ে
লুকায় পোতাশ্রয়ে।
অভিনন্দন, বিজয়! আপনি কি করছেন সুরক্ষিত
আপনার স্বর্ণাভ রথ এবং অস্পর্শিত ষাঁড়?
অভিনন্দন, বিজয়! কোনো সেনানায়কই রাখেনি এই যোগ্যতা
ওই ইউগুরতীয় যুদ্ধ হতে আপনি এনেছেন ঘরে
এমন কি আফ্রিকানোস পর্যন্ত, যার সাহসীকতায়
করেছিলেন উৎসর্গ কার্তিজ একটি কীর্তিস্তম্ভ স্বরূপ।
শত্রু তাড়িত হয়ে স্থল ও সাগরে, বদলে নেয় তার
রক্তবর্ণ অঙ্গরাখা বাদামী কোনো একটির সঙ্গে।
হয় সে মতলব আঁটে ভাসবার বাতাসের প্রতিকূলে
ক্রীতির (ক্রীট) দিকে শত নগর থেকে স্বতন্ত্র,
অথবা সে খোঁজে ওই সীরতেস নাকাল দখিনা বাতাসে,
অথবা সে নীত হয় কোনো অনিশ্চিত সাগরের মাঝে।
বালক, নিয়ে এসো সবচেয়ে বড় পাত্রগুলো এখানে আমার কাছে
এবং কিছুটা কিয়ান সুরা অথবা লেসবসীয়,
অথবা মিশিয়ে দাও আমাদের খানিকটা কেইকুবান
করতে সমিত সকলের সমুদ্রপীড়া।
এ তো স্বস্তি দায়ক দেখা নিষ্কৃতি উদ্বেগ আর ত্রাস হতে
পেরিয়ে কায়জারের কাজকারবার প্রিয় বাক্কুসে।


ওয়দে— ১.৩৭

এখন নিশ্চিত পানোৎসব হবে, এখন বিশ্ব
চলবে নিশ্চিত মুক্ত পায়ে, এখন তা দীর্ঘ অতীত
সময় হলো শোভিত করবার যত দেব শয্যা
সঙ্গে স্যালিয়ান ভোজ, বন্ধুরা আমার।
তার আগে, হয়নি তো ঠিক বের করে আনা
ওই কেইকুবান সুরা যত পৈত্রিক ভাল্ডার খুলে, যখন রাণী
করছেন উন্মাদ ষড়যন্ত্র এই ক্যাপিতোল ধ্বংসের
এবং মৃত্যু আমাদের শাসনের সঙ্গে নিয়ে
তার একদল কুৎসিত লোক
দূষিত ব্যাধিতে, সে ছিল পাগল
নেহাৎ যে কোনোকিছুর আশায় এবং
ছিল সৌভাগ্যের মাতাল। কিন্তু বড়জোড় একটি জাহাজ
নিরাপদ হয়ে আগুন থেকে শীতল করে তার অতিকোপনতা
এবং কায়জার নিয়েছিলেন কেড়ে তার চিন্তাশক্তি,
বুদ্ধিভ্রষ্টা নারী ম্যারিওটীয় সুরায়, ফিরে যান
যথার্থ শঙ্কায়; কায়জার যিনি এসেছিলেন ধেয়ে ইতালির থেকে
করতে হামলা তাকে দাঁড়গুলোসহ, একটি বাজের মতো
ছুটে যান মৃদুগামী কপোতের পিছু অথবা কোনো ক্ষিপ্র শিকারী
যেমন করে অনুসরণ একটি খরগোসের তিসাল্লিয়ার ওই
তুষারিত প্রান্তরে, যাতে তিনি দিতে পারেন পৌঁছে
ওই প্রাণঘাতী দানবীকে শেকলের মাঝে। রাণী
সচেষ্ট হন মরতে অধিকতর মহানভাবে, নয়, নারীসুলভ,
পিছু হটে তলোয়ার হতে, সে যায়নি ফিরে
তার দ্রুতগামী রণতরীতে লুকাতে তটে।
সে সাহস ভরে, তবু, তাকান তার ধ্বস্ত প্রাসাদে
প্রশান্ত মুখে, এবং করেন স্পর্শ
বিষাক্ত সর্প, তাই শরীর তার
শুষে নেয় কৃষ্ণ গরল।
আরও স্পর্ধিত অবজ্ঞায় এক ইচ্ছে মৃত্যুতে,
বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে নির্দয় লিবুরনীয় পোত যত
নিয়ে যেতে তাকে, যে রাজ্ঞী তখন নেই আর,
কিন্তু কখনই হননি নতজানু, ওই লোক-দেখানো বিজয়ে।


উল্লেখপঞ্জী

১. আন্তোনি ও ক্লেওপাত্রার ভারী যুদ্ধজাহাজ সমূহের বিপরীতে, ওজনে হালকা ও গতিশীলতার কারণে, আক্তিউমে অক্তাভিয়ান লিবুরনীয় জাহাজগুলো বেছে নেন। সম্পর্কযুক্ত প্রসঙ্গ, ওয়দে ১.৩৭।
২. গ্রীষ্মকালে চারণের জন্য পশুপালগুলোকে ক্যালাব্রিয়া থেকে লুকানিয়ার সর্বোচ্চ টিলা সমূহে সরিয়ে নেয়া হয়। ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের ভিলা সমূহের জন্য তুসকুলুমা ছিল খুব জনপ্রিয় একটি জায়গা। শোনা যায় ছোট্ট এই নগরীটি কিরকি ও ওদিসেউসের (Ὀδυσεύς) সর্বকনিষ্ঠ পুত্র তিলেগোনোস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. ক্যাইকুবান ছিল দক্ষিণ ল্যাতিউমের বিখ্যাত ওয়াইন।
৪. ৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নাউলোচোতে পরাজিত সেক্সতুস পোম্পেই নিজেকে নেপচুনপুত্র বলে উল্লেখ করেন।
৫. রোমান সামরিক প্রেক্ষাপট অনুসারে মশারীর জাল লজ্জাজনক বলে বিবেচিত হত, কারণ এগুলো প্রাচ্য বিলাসিতার প্রতিনিধিত্ব করত যার জন্য সুপরিচিত ছিল মিশর। "কায়জার!" দ্বারা অক্তাভিয়ানকে বোঝানো হয়েছে।
৬. ম্যারিউস ছিলেন রোমান সেনানায়ক যিনি ইউগুরতা জয় করেন; স্কিপিওন আফ্রিকানুস দ্বিতীয় পিউনকি যুদ্ধে আন্নীবালের বিরুদ্ধে জয়ী হন।
৭. সালী হলো মরতিউসের (মার্সের) যাজক, এরা এদের ভোজের জন্য বিখ্যাত ছিল।
৮. এখানে কালসাপের কামড়ে ক্লেওপাত্রার মৃত্যুর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
তথ্য সহায়: Horace, Epodes 1 and 9 (41–30 B.C.), Ode 1.37 (30 B.C., Latin, verse)