ওয়ার্নার হেরজগ: দৃষ্টির গভীরতা

ইমন রায়ইমন রায়
Published : 1 March 2023, 01:08 PM
Updated : 1 March 2023, 01:08 PM

দৃষ্টির গভীরতা

অনুবাদ- ইমন রায়

অনুবাদকের কথা- বহুমাত্রিক, জনরাঁভেদী, অনুসন্ধিৎসু, কাব্যিক ইত্যাদি সমস্ত অভিধা যেসব চলচ্চিত্রকারের জন্য সমার্থক হয়, তাদের মধ্যে জার্মান চলচ্চিত্রকার ওয়ার্নার হেরজগ অন্যতম। “জার্মান নিউ ওয়েভ” ঘরানার অন্যতম পুরোধা হেরজগ ১৯৪২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জার্মানির বাভারিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও জার্মান সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৬২ সালে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হেরাক্লিস তৈরির মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে নিজের প্রোডাকশন হাউজ থেকে সাইনস্‌ অফ লাইফ তৈরি করেন যা সে বছরের বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায়। “এগুইরে, দ্য র‍্যাথ অফ গড,” “ফিৎজকারাল্ডো,” “দ্য এনিগমা অফ ক্যাসপার হাউজার,” “ভয়েৎজেক” ইত্যাদি চলচ্চিত্র তাঁকে দিয়েছে বৈশ্বিক পরিচিতি। এগুলোর মধ্যে “ফিৎজকারাল্ডো”-এর জন্য তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার জিতেছিলেন। আবার “দ্য এনিগমা অফ ক্যাসপার হাউজার” তাঁকে এনে দিয়েছিলো কান চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি পুরস্কার।

পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বিবিধ বিচিত্র বিষয় নিয়ে তৈরি করেছেন বহু প্রামাণ্যচিত্র। এগুলোর মধ্যে “লেসনস্‌ অফ ডার্কনেস,” “মাই বেস্ট ফিয়েন্ড,” “গ্রিজলি ম্যান,” “এনকাউন্টারস অ্যাট দ্য এন্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড,” “কেইভ অফ ফরগটেন ড্রিমস” এবং “ইনটু দ্য অ্যাবিস” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনিই একমাত্র পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা যিনি পৃথিবীর সকল মহাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। সত্যের সন্ধানে তিনি চষে বেরিয়েছেন আমাজন জঙ্গল থেকে অ্যান্টার্কটিকা অবধি। প্রখ্যাত ফরাসি চলচ্চিত্রকার ফ্রাসোয়াঁ ত্রুফো তাঁকে “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবিত চলচ্চিত্র পরিচালক” হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। 

চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন “দ্য মান্দালোরিয়ান” ও “জ্যাক রিচার”-এর মত হলিউডের ছবিতে। নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন নন-ফিকশন বই যেমন- অফ ওয়াকিং ইন আইস (১৯৮০) ও কনক্যুয়েস্ট অফ দ্য ইউজলেস: রিফ্লেকশনস্‌ ফ্রম দ্য মেকিং অফ ফিৎজকারাল্ডো (২০০৯)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ২৯ বছর যাবত ফিলিপিন্সের দ্বীপে একাকী যুদ্ধ করে যাওয়া জাপানের সৈনিক হিরু ওনোদাকে উপজীব্য করে লিখেছেন তাঁর প্রথম এবং একমাত্র উপন্যাস “দ্য টোয়াইলাইট ওয়ার্ল্ড।“ ওয়ার্নার হেরজগের নিবাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসে। অধুনা বিলুপ্ত ব্রিটিশ ম্যাগাজিন থার্ড ওয়ে-র ২০১২ সালের মে সংখ্যায় প্রকাশিত নিচের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন হু স্প্যানার।    

আপনি বলেছেন যে আপনার এগুইরে, দ্য র‍্যাথ অফ গড  থেকে কেইভ অফ ফরগটেন ড্রিমস  পর্যন্ত বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের জন্য একটি যুতসই টাইটেল হতে পারত “ইনটু দ্য অ্যাবিস।” এটি আমাকে ভয়েৎজেক-এর একটি লাইন মনে করিয়ে দিলো: “সকল মানুষই একটি গহ্বর। ভেতরের দিকে তাকালে আপনার মাথা ঝিমঝিম করতে পারে।“

 না- যাই হোক, এটি সুদূরপ্রসারী নয়। একজন প্রযোজক চলচ্চিত্রটিকে ‘দ্য রেড কেমারো’ বলতে চেয়েছেন, কিন্তু আমার মনে হয়েছে আমরা গাড়ি বিক্রয়কর্মী নই এবং আমি বলেছিলাম: না, এর সাথে মানুষের আত্মার অতল গভীরে তাকিয়ে দেখার সম্পর্ক রয়েছে। এটি একটি গহ্বরের দিকে তাকিয়ে থাকার মত।

আমি যখন সেই টাইটেল প্রথম শুনেছিলাম তখন এটি আমাকে বাইবেলের একটি পংক্তি মনে করিয়ে দিয়েছিলো: ‘সবকিছুর ঊর্ধ্বে হৃদয় ছলনাপূর্ণ এবং বেপরোয়াভাবে দুর্বৃত্ত: কে তা জানতে পারে?’

আমার পেশা তো এ সম্পর্কেই। এরকম একটি চলচ্চিত্র তৈরি করতে গেলে— অথবা অভিনেতাদের পরিচালনা করায় ভালো হতে গেলে আপনাকে মানুষের হৃদয়কে জানতে হবে।

এটি বাইবেলের একটি আকর্ষণীয় উক্তি, কারণ দুর্বৃত্তপনা কেন আছে? স্রষ্টা কেন এ ধরনের মানুষ সৃষ্টি করেন? পোপ বেনেডিক্ট, যাকে আমি গভীর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন একজন ব্যক্তি হিসেবে পছন্দ করি, আমি মনে করি তিনি হলেন কয়েক শতক যাবত প্যাপাল সি-এর (রোমের বিশপ হিসেবে পোপের নেতৃত্বাধীন রোমান ক্যাথলিক চার্চের সরকার) সবচেয়ে গভীর চর্চাকারী চিন্তক— আউশভিৎসে তাঁর বক্তৃতায় বারবার বলেছেন: ঈশ্বর কেন এমন একটি জিনিস অনুমোদন করলেন? ঈশ্বর তখন কোথায় ছিলেন? একজন পোপের পক্ষে এটি জিজ্ঞাসা করা সত্যিই একটি সাহসী ব্যাপার।

আমাকে খুব, খুব অল্প সংখ্যক চিন্তাশীল লোকদের একজন বলে মনে হয় যারা [পোপ বেনেডিক্টের] পক্ষ নেয়।

আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না, তাই না? নাকি করেন?

না। আচ্ছা, ১৪ কিংবা ১৫ বছর বয়সে আমার একটি গভীর ধর্মীয় পর্যায় ছিলো। আমি ক্যাথলিক হয়েছিলাম—আর, আদতে, ক্যাথলিক চার্চের মত অনুসারে আপনি পরিত্যাগ করতে পারেন না। আপনি সবসময়ই ব্যাপ্টাইজড, কারণ ব্যাপ্টিজম আপনার আত্মার ওপর একটি অমোচনীয় দাগ। তবে, আমার দিক থেকে, আমি চার্চের সদস্য নই এবং আমি ধার্মিক নই।

ইন টু দ্য অ্যাবিস এবং তারপর আপনার অন্যান্য কয়েকটি চলচ্চিত্র দেখে আমার এই ধারণা হয়েছে যে আপনি মানব হৃদয়ের অজ্ঞানতা এবং আমাদের পারস্পরিক অবোধ্যতা নিয়ে খুব চিন্তিত -

হ্যাঁ।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের দুর্বৃত্তপনা এবং ছলনা নিয়ে ভাবিত নন, যদিও ইন টু দ্য অ্যাবিস  এর বিষয় হিসেবে খুনগুলো সত্যিকার অর্থে ভয়াবহ, এগুলোর জন্য সাব্যস্ত দুই ব্যক্তি অবিশ্বাস্যভাবে জোর দিয়ে বলেছে যে তারা সেগুলো করেনি। আপনি গহ্বরের দিকে তাকিয়ে আছেন এবং এটি দুর্বোধ্য, বোধহয়, কিন্তু এটি যে বিশেষত অন্ধকার তার কোনো অর্থ নেই।

আচ্ছা, গহ্বর সত্যিকার অর্থে অন্ধকার নয়। যে অপরাধটি এক অর্থে চলচ্চিত্রের গল্পের প্রধান চরিত্র, সেটি একদমই অনর্থক এবং এর নঞর্থকতা অত্যন্ত হতবিহ্বলতাপূর্ণ এবং অত্যন্ত বিরক্তিকর। আপনি অন্ধকারের দিকে তাকাচ্ছেন না, আপনি শূন্যগর্ভের দিকে তাকাচ্ছেন।

আমি মনে করি মাইকেল পেরি, যার সাথে চিত্রধারণের আট দিন পর যাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো, সম্ভবত আমার দেখা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যক্তি তিনি।

সাক্ষাৎকারে সে বেশ যুক্ত ছিলো, তাই নয় কি?

তাকে কোনো হারিয়ে যাওয়া বাচ্চার মত দেখায়। তার সহ-বিবাদী জেসন বার্কেট, যে বিরাটাকার ও ভীতি উদ্রেককারী এবং যাকে সত্যিকার অর্থে রাগান্বিত দেখায়, সে তার মত এত ভয়ানক ছিলো না।

আপনি বলতে পারেন ঠিক কেন পেরির সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় আপনি— এবং আপনার তিন পর্বের টিভি সিরিজ ডেথ রো -এর লোকেরাও স্যুট পরেছিলো?

 আমি কোনো আনুষ্ঠানিক কারণে এটি পরিনি— ক্যামেরার পেছনে আমি সবসময় অদৃশ্য। না, এটি একজন মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে উদ্ভূত, যিনি শীঘ্রই মারা যাচ্ছেন। সবসময় আমার মৌলিক আচরণ ছিলো যে অপরাধগুলো বীভৎস কিন্তু সংঘটকরা দানব নয়, তারা সবসময়ই মানুষ, এবং মানুষ হিসেবে তাদের আমি শ্রদ্ধা করি।

জ্যঁ-বেদেল বোকাসার মত লোক, যখন তিনি মৃত্যুদণ্ডের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তার সাক্ষাৎকার নিতে গেলে আপনি কি স্যুট পরতেন? অথবা এমনকি এডলফ্‌ আইখম্যান?

হ্যাঁ। সকল ক্ষেত্রে, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই।

আমি কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য ওকালতি করবো না। আমার জন্য এটি অনাপেক্ষিক নীতির প্রশ্ন: কোনো অবস্থায়, যেকোনো কারণেই হোক, একটি রাষ্ট্রের কাউকে হত্যা করার সক্ষমতা থাকা উচিত নয়। যুদ্ধ-বিগ্রহ ব্যতীত আমি ১০০ ভাগ শান্তিবাদী নই।

 পোপ দ্বিতীয় জন পল “মৃত্যুর সংস্কৃতি” নিয়ে কথা বলেছিলেন, যার অর্থ হচ্ছে যেরকম গণহত্যা জার্মানিতে আমরা দেখেছি, সর্বোচ্চ দণ্ড, আত্মহত্যা, গর্ভপাত— তিনি উপলব্ধি করতেন, সৃষ্টির অর্থ এই নয় যে গর্ভপাত নিত্যদিনের একটি ঘটনা হওয়া উচিত। আর আমি এই যুক্তিকে খুবই জোরলো মনে করি, যদিও আমি বুঝি যে নারীদের [একটি পছন্দ] থাকা উচিত।

আপনি অন্য কোথাও বলেছেন যে আপনার কাছে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধের ব্যাপারটি কোনো যুক্তি নয় বরং একটি গল্প: নাৎসি বর্বরতার গল্প। যুদ্ধ এবং তার পরিণাম কীভাবে আপনাকে, আপনার চরিত্রকে এবং কল্পনাকে রূপ দিয়েছে?

খোদ যুদ্ধ আমার শৈশবে অনুপস্থিত ছিলো এবং আমি ধ্বংসস্তূপের মাঝে বড় হইনি। আমার মা টাইরোলিয়ান পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন যেখানে কোনো যুদ্ধ হয়নি— একটি গুলিও ছোঁড়া হয়নি, কোনো বোমাবর্ষণ হয়নি, কিছুই না।

তবে যুদ্ধ আমাকে একভাবে তৈরি করেছে, যেভাবে আমি এমন এক পৃথিবীতে বেড়ে উঠেছিলাম যেখানে বাবারা ছিলেন না—হয় যুদ্ধে তাদের প্রাণ গেছে নয়ত তারা বন্দি ছিলেন। সেখানে (আমি দরকারি সাবধানতা নিয়েই এটি বলি) নৈরাজ্য ছিলো শব্দটির সর্বোত্তম অর্থ নিয়েই। বাবারা ছিলেন না, ছিলো না কোনো স্পষ্ট নিয়ম। আমাদের নিজেদের নিয়ম আমাদেরকেই তৈরি করতে হয়েছিলো।

আর, যদি আরও যোগ করি, উদাহরণস্বরূপ, আমাদের প্রবহমান পানি ছিলো না। কুয়া থেকে বালতি ভরে পানি টেনে আনতে হত— যেটি পানির মূল্য বুঝার একটি দারুণ পন্থা।

 লাল রঙের কেমারোর প্রসঙ্গে ফিরে যাই, আমাদের মেকি ভোগের সংস্কৃতি শুধুমাত্র একটি আকাঙ্ক্ষিত গাড়ি পাওয়ার জন্য তরুণদের খুন করতে প্ররোচিত করতে সাহায্য করেছে, তাই না?  

আচ্ছা, এটি খুব আগ্রহোদ্দীপক ধারণা। হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলেছেন।

যেখানে আপনি আগে বলেছিলেন যে চরম দারিদ্র্য সত্ত্বেও আপনার একটি দারুণ শৈশব ছিলো। আজকের দিনে পশ্চিমে বেড়ে ওঠা শিশুদের জন্য আপনি কি দুঃখ অনুভর করেন?

দুঃখিত নই, কিন্তু…আমার নিজের তিন সন্তান কখনো প্রাচুর্যে অংশ নেয়নি। তারা কখনো খাবার ফেলে দেয়নি। এটি আমার কাছে একদমই অচিন্তনীয় কারণ শিশু বয়সে আমি খুব ক্ষুধার্ত ছিলাম। জার্মানিতে কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেস্টুরেন্টে মানুষকে খাবার ফেলে দিতে দেখলে কষ্ট পাই।

আপনি প্রায়ই মহাবিশ্বের সৌন্দর্য ও ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলেছেন। আপনি এটিই বুঝাতে চান নাকি আপনি উস্কানি দিচ্ছেন তা আপনার হিউমারের এমন এক দুষ্টুমিপূর্ণ অর্থ থাকার কারণে অনেক সময় বলা মুশকিল।

তবে আপনি খেয়াল করলে দেখবেন যে মহাবিশ্বে কোনো সম্প্রীতি নেই। এটি খুব বৈরি, খুব অগোছালো, খুব বিশৃঙ্খল— এমনকি ঝুঁকি নেওয়ার কথা চিন্তা করাও অশোভনীয়। যদি আপনি নিরীহ, সুবিন্যস্ত, পূর্ণ সম্প্রীতিময় কিছু আশা করেন তাহলে বিশ্ব আদতে এভাবে সৃষ্টি হয়নি।      

আপনি কি মনে করেন যে মানুষ বাকি সৃষ্টিরই একটি অংশ? আমরাও কি সুন্দর এবং ভয়াবহ?

অবশ্যই আমরা এই সৃষ্টির অংশ এবং অবশ্যই আমরা, এক অর্থে, অন্য যা কিছু দেখি তার মতই ভুলভাবে ধারণকৃত।

আর তারপরও অন্য লেখক ও পরিচালকদের নাম নেওয়া সহজ যাদের কাজ মানবীয় নোংরামিতে পূর্ণ, তবে স্ত্রশেক-এ (১৯৭৭) বেশ্যালয়ের দুই দালাল ব্যতীত আপনার ছবিগুলোতে কোনো সত্যিকারের খারাপ লোকের কথা চিন্তা করা দুরূহ।

হ্যাঁ, এটি হয়ত ঠিক। অবশ্যই, আমি ইনটু দ্য অ্যাবিস-এ মাইকেল পেরিকে স্পষ্টভাবে বলি: “আপনার শৈশব ছিলো জটিল, তবে এটি আপনাকে দায়মুক্ত করে না এবং এর অর্থ এই নয় যে আপনাকে আমার ভালো লাগতে হবে।“ আর সেটি অস্বাভাবিক, কারণ স্বভাবত আমি আমার ছবির মুখ্য চরিত্রদের পছন্দ করি— তারা সবসময় আমার হৃদয়ের কাছের মানুষ।

অনেক মানুষ মন্তব্য করেছে যে আপনার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্রগুলো অনেক সময় একইভাবে প্রান্তিক অথবা অদ্ভূতুড়ে মানুষদের নিয়ে, অথবা ‘পাগল’ ও ‘দানব’—

আচ্ছা, সেটি ভাষ্যকারদের সমস্যা।

কিন্তু আপনি বলেছেন— এবং আমি জানি না আপনি শুধুই উস্কানি দিচ্ছিলেন কিনা— যে, উল্টোভাবে, আপনি এসমস্ত মানুষকে, এমনকি এগুইরেকে, স্বাভাবিক হিসেবে দেখেন, এবং তাদের চারপাশের লোকেরা—

অদ্ভূত। এবং বাউণ্ডুলে এবং…

তবে ইন টু দ্য অ্যাবিস-এ আপনি সবার সাথে সম্মানজনক আচরণ করেন, এবং এক অর্থে ছবির সবচেয়ে নজরকাড়া লোকগুলো হচ্ছে যাজক, পুলিশ এবং প্রাক্তন জল্লাদ, যারা সকলেই ‘স্বাভাবিক’ সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে।

হ্যাঁ, কিন্তু, আপনি দেখবেনইন টু দ্য অ্যাবিস  হচ্ছে এক অর্থে আমি স্বভাবত যেভাবে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করি তার ব্যতিক্রম। একটি প্রামাণ্যচিত্রে আমি স্টাইলাইজ করবো, আমি উদ্ভাবন করবো, আমি এমন উপকরণ নিয়ে আসবো যা সম্পূর্ণই কবিতা কিংবা সায়েন্স ফিকশন। কেইভ অফ ফরগটেন ড্রিমস-এর মত শেষের অধ্যায়টি তেজস্ক্রিয় মিউট্যান্ট শ্বেত কুমিরকে নিয়ে। আমি দর্শককে আমার সাথে কল্পনা ও কবিতার এক জগতে নিয়ে যেতে চাই এবং এটি সম্পূর্ণরূপে বন্য। কিন্তু আট দিন পর যে লোক মারা যাবে তার সামনে বসে আপনি সেটি করবেন না। সেখানে কোনো শ্বেত কুমির থাকবে না। তাই, এক অর্থে আমি মনে করি এই ছবিটি একটু ভিন্ন।

হেরজগ অন হেরজগ-এ আপনি বলেন যে আপনার প্রামাণ্যচিত্রগুলোতে এমন জিনিস আছে যেগুলো আপনি তৈরি করেন— লেসনস্‌ অফ ডার্কনেস-এ শুরুতে একটি উক্তি আছে যা দিয়ে আপনি প্যাসকেলকে নির্দেশ করেন, এবং পিলগ্রিমেজ-এর শুরুতে একটি আছে যা আপনি থমাস এ কেম্পিসের ওপর আরোপ করেন—

হ্যাঁ! সুন্দর, সুন্দর—

হ্যাঁ, কিন্তু দুটোই আপনি তৈরি করেছেন।

কারণ থমাস এ কেম্পিস কিংবা প্যাসকেল কেউই এটি আরও ভালোভাবে বলতে পারতেন না।

অতএব, আপনি জালিয়াতি করে আনন্দ পান— আর তা সত্ত্বেও ফিৎজকারাল্ডো-তে (১৯৮২) আপনি যখন পেরুর রেইন ফরেস্টের গভীরে ৩৪০ টনের একটি জাহাজকে একটি খাড়া পাহাড়ের ওপর দিয়ে টেনে নেওয়ার একটি গল্প বলতে চেয়েছিলেন তখন আপনি আসলেই সেটি করেছিলেন।

এটি কোনো অসঙ্গতি নয়।

আপনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন?

একটি প্রামাণ্যচিত্রে আমি সত্যের একটি গভীরতর স্তরে পৌঁছানোর জন্য আমি উদ্ভাবক হবো এবং আমি কল্পনার আশ্রয় নেবো। ফিৎজকারাল্ডো-তে আমি একটি সত্যিকারের নৌকাকে একটি সত্যিকারের পাহাড়ের ওপর তুলেছিলাম, কিন্তু এটি বাস্তবতার স্বার্থে নয়। আমি বাস্তবতায় আগ্রহী নই। আমি একটি বাস্তব ঘটনাকে বিশুদ্ধ কল্পনায়, গীতিনাট্যময় কিছুতে রূপান্তরিত করি। আমি এমন চলচ্চিত্র পছন্দ করি যেখানে দর্শকরা তাদের নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে, তবে কোনো খুঁতখুঁতে, আমলাতান্ত্রিক উপায়ে নয়। এটি ‘হিসাব রক্ষকের সত্য নয়’; এটি এমন কিছু যা একটি বিরাট উপমা সৃষ্টির জন্য আমরা চলচ্চিত্রে দেখতে পছন্দ করি – ওহ, হ্যাঁ! একটি সত্যিকারের জাহাজ এবং এটি একটি পাহাড়ের ওপর চলছে!

কিন্তু শেষ লাইনে দর্শক যদি স্ক্রিনে প্যাসকেলের একটি উদ্ধৃতি দেখে তাহলে এমন কিছু সত্যি সত্যি প্যাসকেলের কথাই হতে হবে, এমন নয় কি? মানুষ যখন আবিষ্কার করে যে আপনি এটি তৈরি করেছেন তখন কি আপনার ওপর তাদের আস্থা ধ্বংস হয় না?  

আমাকে উদ্ধৃত করতে দিন। লেসনস্‌ অফ ডার্কনেস-এর শুরুতে বলা হয়: “সৃষ্টির মতই বিশাল জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে নক্ষত্রমণ্ডিত মহাবিশ্বের পতন ঘটবে।“ এর নিচে বলা আছে, ‘ব্লেইস প্যাসকেল।‘ প্রথম দৃশ্যটি যখন স্ক্রিনে আসে তখন আপনি ইতোমধ্যে উজ্জীবিত, আপনি উচ্চতম কোনো কিছুতে স্থানান্তরিত হন—এবং সেখান থেকে আমি কখনো আপনাকে নামতে দেই না। আর সেটিই হচ্ছে কারণ, এবং যদি দরকার হয় তাহলে আমি যেকোনো কিছু উদ্ভাবন করি—

আমি এখনো বুঝতে পারি না আপনি কেন সেই প্রারম্ভিক বক্তব্যটিতে নিজেকে নির্দেশ করতে পারেন না।

প্যাসকেল বলায় একটি বিশেষ আনন্দ আছে, কারণ এটি প্রায় প্যাসকেলের মত শোনায়— এবং তিনি এটি এর চেয়ে ভালো বলতে পারতেন না।

আমার মাঝে উদ্ভাবনের আনন্দ আছে। আমার মাঝে গল্প বলার আনন্দ আছে— যে কারণে আমি চলচ্চিত্র তৈরি করি। এটি কাউকে প্রতারিত করা কিংবা বিপথে চালিত করার জন্য নয় (এবং এ কারণে আমি বিশেষ ঘোষণা করি, ‘আমি এটি তৈরি করেছি’); এটি আসলে আপনাকে আপনার অস্তিত্বের ঊর্ধ্বে গিয়ে মহাজাগতিক কিছু, উচ্চতম কিছু, ভয়াবহ কিছু, দারুণ সৌন্দর্যময় কিছুর জগতে যেতে সহায়তা করার জন্য।

আপনি গল্প বলেছেন কীভাবে ১৯৭৪ সালে আপনাকে যখন জানানো হয়েছিলো যে আপনার গুরু [মহান জার্মান চলচ্চিত্র ইতিহাসবিদ] লোট্টে আইসনার বড় রকমের স্ট্রোক করেছেন এবং তিনি মারা যাবার আগে আপনার অবশ্যই তাঁকে দেখতে যেতে হবে তখন আপনি ‘এক গুচ্ছ কাপড় তুলে নিলেন’ এবং পায়ে হেঁটে মিউনিখ থেকে প্যারিসে যাত্রা শুরু করলেন! আপনি বলেছেন, আপনি জানতেন যে আপনি সেখানে পৌঁছানোর আগে তিনি মারা যাবেন না। এখন, এটি কোনো কিছুতে বিশ্বাসের একটি প্রকাশ—

এর জন্য ক্যাথলিক চার্চের একটি দারুণ পরিভাষা আছে: Heilsgewissheit, পরিত্রাণের নিশ্চয়তা।

 কিন্তু, আপনি যেহেতু বিশ্বাসী নন, আপনি কীসের প্রতি বিশ্বাস প্রকাশ করছিলেন?

 কিছুটা নিজের মধ্যে, এই যে আমি হেঁটে হেঁটে মৃত্যুকে অগ্রাহ্য করবো— আমার প্রকাশিতঅফ ওয়াকিং ইন আইস  বইতে আমি বলেছি: ‘আমি যখন হাঁটি তখন একটি বাইসন হাঁটে। আমি যখন থামি তখন একটি পাহাড় থেমে যায়।‘ এবং আমি আসি, আমি প্রয়োজনীয় বোঝা এবং প্রয়োজনীয় সংকল্প এবং তীর্থযাত্রীর প্রয়োজনীয় বিশ্বাস এবং মৃত্যুর প্রয়োজনীয় অবজ্ঞাকে সাথে নিয়ে আসি, এবং আমি জানতাম তিনি বেঁচে থাকবেন। আরো নয় বছর তিনি বেঁচেছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি অবশেষে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: ‘তুমি কি আমার ওপর থেকে এই মন্ত্র সরিয়ে নিতে পারো?” তাকে বলেছিলাম, “হ্যাঁ, এটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।“ – এবং তারপর তিনি মারা গিয়েছিলেন, তারপর তিনি সত্যিই মারা গিয়েছিলেন!

আপনি কি সত্যিই বিশ্বাস করেছিলেন যে আপনার প্যারিসে হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে পারত?

খুব বেশি ভাবনা ছিলো না, আমি শুধু বেরিয়ে পড়েছিলাম এবং আমি জানতাম আমাকে এটি করতে হত এবং তিনি মারা যেতেন না কারণ আমি আসছিলাম। কিন্তু আমি উড়োজাহাজে আসছিলাম না; আমি তাঁর দিকে ঠুক ঠুক করে লাখ লাখ কদম নিয়ে আসছিলাম।

আপনি অবশ্যই খুব আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকবেন, কারণ আপনি এমনকি পথিমধ্যে ট্রয়েস ক্যাথিড্রাল দেখতে গিয়েছিলেন।

হ্যাঁ, অদ্ভূত ব্যাপার হচ্ছে, আমার [তাঁর সাথে] কোনো সংযোগ ছিলো না, আমি জানতাম না তিনি তখনো জীবিত ছিলেন কিনা। আমি একটি সরল রেখায় হেঁটেছিলাম—আমি একটি কম্পাস রিডিং নিয়েছিলাম এবং আমি সোজা বনের মধ্যে, পাহাড় ও নদীর ওপর দিয়ে হেঁটেছিলাম— তবে, শেষের দিকে, ট্রয়েসের গথিক ক্যাথিড্রাল যাওয়ার জন্য ঘুরপথে ২০-৩০ মাইল যাওয়ার সুযোগ নিজেকে দিয়েছিলাম, কারণ আমি মধ্যযুগীয় লেখক ক্রেতিয়েন ডি ট্রয়েসের একজন বিরাট অনুরাগী। এটি ছিলো খুবই, খুবই প্রগাঢ় অভিজ্ঞতা।

আপনার ১৯৯৯ সালের তথাকথিত মিনেসোটা ঘোষণায় আপনি বলেন: হাঁটা হচ্ছে গুণ—

এবং পর্যটন হচ্ছে পাপ।

আপনি যখন কিশোর ছিলেন তখন থেকেই অনেক দূরের পথ হেঁটে যাচ্ছেন। আপনি কি অল্প করে বলতে পারেন কীভাবে এটি পৃথিবী নিয়ে আপনার দৃষ্টিকে পরিবর্তিত করেছে?

এর উত্তর দেওয়া সহজ নয়। আমি শুধু পূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে জানি— এটি আমাকে একটি প্রবচনে বলতে হবে: যারা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করে, পৃথিবী কেবল তাদের কাছেই নিজেকে উন্মোচিত করে।       

এটি তাই। আর কোনো ব্যাখ্যা নয়। পৃথিবী নিয়ে আমার বোঝাপড়া, আমার পৃথিবীকে পড়া… পৃথিবী নিজেকে ঘোষণা করেছে, এটি নিজেকে প্রদর্শিত করেছে। আর এজন্যই আমি চলচ্চিত্রকারদের বলি: হাজার মাইল হাঁটো। তিন বছরের ফিল্ম স্কুলের চেয়ে এর মূল্য অনেক বেশি।

আমার মনে হয় আপনার চলচ্চিত্রে প্রচুর আকস্মিকতা আছে, এবং ইন টু দ্য অ্যাবিস-এ একটি অসাধারণ মূহূর্ত আছে যখন আপনি ‘ডেথ হাউজ’-এ যাজককে বলেন, ‘একটি কাঠবিড়ালীর সাথে মুখোমুখি হওয়ার কথা বলুন‘ এবং তিনি চমকে গেলেন।

খ্রিস্টীয় বিশ্বাসে নরকের মত এমন একটি জিনিস আছে তা ভুলে গিয়ে তিনি ঈশ্বরের সৃষ্টির মহত্ত্ব এবং ঈশ্বরের ক্ষমা এবং সবার জন্য স্বর্গের ব্যাপারে কথা বলছিলেন— এবং তিনি ছিলেন মেকি টেলিভিশন প্রচারকের মত এবং আমি বুঝেছিলাম তাঁকে আমার এ থেকে বের করে আনতে হতো। তাই, যখন তিনি বললেন যে অনেক সময় গলফ কোর্সে তিনি দেখেন একটি কাঠবিড়ালী অথবা একটি হরিণ তাঁর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম: ‘একটি কাঠবিড়ালীর সাথে মুখোমুখি হওয়ার কথা বলুন!‘ এবং শুধুমাত্র মানুষের হৃদয়কে জানতে পারার মাধ্যমে আমি সেরকম একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি, কারণ এটি তাকে ছিন্নভিন্ন করে। কেন, তা আমি ব্যাখ্যা করতে পারি না, তবে এটি হয়। তিনি হঠাৎ আন্তরিক হয়ে যান। তিনি একজন গভীর মানুষে পরিণত হন।

আপনার কাজের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ সিক্যুয়েন্সগুলোর একটি হচ্ছে স্ত্রশেক-এর শেষে নৃত্যরত মুরগি। ডিভিডিতে আপনার ভাষ্যে আপনি বলেছেন যে চলচ্চিত্রে এটি ধারণ করা এক প্রকার আশীর্বাদ।          

হ্যাঁ। অনেক সময় আমি এটি না ভেবে পারি না যে আমি ঈশ্বরের কৃপার স্পর্শ পেয়েছি— যদিও আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। হয়ত এটি আমার ধর্মীয় পর্যায়ের একটি দূর প্রতিধ্বনি।

তারপরও মিনেসোটা ঘোষণায় আপনি বলেন: ‘আমাদের কৃতজ্ঞ হতে হবে যে মহাবিশ্ব কোনো হাসি জানে না।‘ হৃদয়হীন মহাবিশ্ব এবং কোনো কিছুর মধ্যে কি একটি দ্বন্দ্ব নেই, সেটি যা-ই হোক, যা এত সব উপহার দিয়ে চলেছে?

হ্যাঁ, মহাবিশ্ব সত্ত্বেও, সৃষ্টি সত্ত্বেও এটি হতে পারে। আপনাকে জবরদস্তি করে এর থেকে অর্থ বের করে আনতে হবে, আপনাকে জবরদস্তি করে এর থেকে ন্যূনতম পরিমাণ মর্যাদা বের করে আনতে হবে, ন্যূনতম পরিমাণ আনন্দ, ন্যূনতম কৃপা নিজের ওপর নিতে হবে।  

কিন্তু ওই ‘কৃপা’কে এর থেকে জবরদস্তি করে আনা হয়, এটি কি প্রদত্ত নয়?

এটি আমাকে তা দেয় না। আপনাকে মহাবিশ্ব থেকে জবরদস্তি করে সেটি নিতে হবে!

আপনার অনেকটা সময় আমাদেরকে দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ…

বাইবেল সম্বন্ধে আমাদের আরও কথা বলা উচিত ছিলো। আমার কাছে এটি অত্যন্ত প্রশান্তিময়, সত্যিকারের স্বস্তি মনে হয় যে আমরা শুধু চলচ্চিত্র সম্বন্ধে নয়, বরং মহাবিশ্ব সম্বন্ধে, সৃষ্টি সম্বন্ধে এবং যেকোনো ব্যাপারে কথা বলছি। আসলে এটা ধর্মই। আমরা কিছু ভালো জায়গা, কিছু মৌলিক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি যেগুলো আমাকে তাড়িয়ে ফিরেছে।     

 

পরিশিষ্ট:

এগুইরে, দ্য র‍্যাথ অফ গড। ক্লাউস কিনস্কি অভিনীত এবং ওয়ার্নার হেরজগ পরিচালিত ১৯৭২ সালের চলচ্চিত্র।

কেইভ অফ ফরগটেন ড্রিমস। ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের গুহায় আঁকা প্রাগৈতিহাসিক চিত্রকর্ম নিয়ে ২০১০ সালে ওয়ার্নার হেরজগ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র।

জ্যঁ-বেদেল বোকাসা। মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের এই স্বেচ্ছাচারী সম্রাটকে নিয়ে ১৯৯০ সালে ওয়ার্নার হেরজগ ‘ইকোস ফ্রম এ সম্বার এম্পায়ার ’ নির্মাণ করেছিলেন। হেরজগ বলেছিলেন সে মানুষখেকো ছিলো এবং ‘নিরো কিংবা ক্যালিগুলা, হিটলার কিংবা সাদ্দাম হোসেনের মাঝে যে ধরনের মানবীয় অন্ধকার দেখা যায় তার প্রতিনিধিত্ব করত বলে মনে হয়’ (হেরজগ অন হেরজগ)। কারাগারে থাকা অবস্থায় বোকাসার সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুমতি থাকলেও সাক্ষাৎকার নেওয়ার পূর্বেই হেরজগকে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো। বোকাসাকে পরবর্তীতে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়েছিলো এবং ক্ষমা প্রদান করা হয়েছিলো।

এডলফ্‌ আইখম্যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হলোকাস্টের অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী। ১৯৬১ সালে জেরুজালেমে তার বিচার করা হয়েছিলো এবং পরের বছর তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিলো।