জেমকন পুরস্কার পেলেন তিন সাহিত্যিক

“বেঁচে থাকার যে প্রেরণা, তা এ ধরনের পুরস্কার থেকে পাওয়া যায়," বলেন কবি কামাল চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2023, 11:57 AM
Updated : 5 Jan 2023, 11:57 AM

ঢাকা লিট ফেস্টে কবি কামাল চৌধুরীসহ তিন সাহিত্যিকের হাতে তুলে দেওয়া হল জেমকন সাহিত্য পুরস্কার।

বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। 

এ বছর ‘স্তব্ধতা যারা শিখে গেছে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য জেমকন সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন কবি কামাল চৌধুরী। তিনি সম্মাননার পাশাপাশি পেয়েছেন পাঁচ লাখ টাকার চেক। 

তরুণ শ্রেণিতে ‘ঘুমিয়ে থাকা বাড়ি’ পাণ্ডুলিপির জন্য জেমকন তরুণ কবিতা পুরস্কার পেয়েছেন সাকিব মাহমুদ। আর এই শ্রেণিতে ‘সোনার নাও পবনের বৈঠা’ উপন্যাসের জন্য তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন সাজেদুল ইসলাম। তরুণ এই দুই সাহিত্যিকের প্রত্যেকে পেয়েছেন এক লাখ টাকার চেক।

এছাড়া পুরস্কৃতদের হাতে তুলে দেওয়া হয় চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র। অসুস্থতার জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না সাকিব মাহমুদ।

জেমকন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, জেমকন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আজকের কাগজ ২০০০ সাল থেকে এই পুরস্কারটি প্রদান করে আসছে। শুরুতে এই পুরস্কারের নাম ছিল ‘কাগজ সাহিত্য পুরস্কার’। ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত শুধু তরুণ লেখকদেরই তাদের পাণ্ডুলিপির জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হতো। পাণ্ডুলিপিটি কাগজ প্রকাশন থেকে বই আকারে প্রকাশিত হয়।

২০০৩ সাল থেকে বছরের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থকেও পুরস্কৃত করবার নিয়ম চালু করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে এই পুরস্কারটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’।

বর্তমানে তিনটি বিভাগে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’, যা বছরের একটি সেরা গ্রন্থের জন্য। তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার, যা তরুণ কথাসাহিত্যের প্রথম পাণ্ডুলিপির জন্য। তরুণ কবিতা পুরস্কার, যা তরুণ কবির প্রথম পাণ্ডুলিপির জন্য।

সংসদ সদস্য নাবিল বলেন, “জেমকন সাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্য ৮ লাখ টাকা, তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে তা ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে এবং অন্য দুটি পুরস্কার ১ লাখ টাকা করে।”

এর আগে মামুন হোসাইন, শহীদুল জহির, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সৈয়দ শামসুল জক, সেলিম আল দীন, নির্মলেন্দু গুণ, ওয়াসি আহমেদ, জাকির তালুকদার, আহমাদ মোস্তফা কামাল, হাসান আজিজুল হক, সালমা বাণী, শাহীন আখতার, মাসরুর আরেফিন এই পুরস্কার পেয়েছেন।

পুরস্কারপ্রাপ্তির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কবি কামাল চৌধুরী বলেন, “দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই পুরস্কারের যে ধারাবাহিকতা তারা বজায় রেখেছেন, এটা প্রশংসনীয়৷ আমার বইটি প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী, তাদেরকেও শুভেচ্ছা জানাই।”

যে বইয়ের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন, সেই ‘স্তব্ধতা যারা শিখে গেছে’ বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, “করোনার সময় আমার ছোট ভাই মহসিন চৌধুরীকে হারিয়েছি৷ তাকে উৎসর্গ করেছি বইটি৷ মহামারীর সেই কঠিন সময়ে যখন পাড়া-প্রতিবেশী পাশে থাকেনি; তখন আমার অশ্রু, ক্ষোভ, হাহাকার গ্রন্থটিতে এসেছে।”

এই পুরস্কারে অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা বলতে গিয়ে কবি কামাল বলেন, “আমরা লিখি আমাদের ভালোবাসাকে তুলে ধরার জন্য। বেঁচে থাকার জন্য লিখি। বেঁচে থাকার যে প্রেরণা, তা এ ধরনের পুরস্কার থেকে পাওয়া যায়।”

পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বসিত সাজেদুল ইসলাম, “যে পাণ্ডুলিপিটির জন্য আমি পুরস্কার পেয়েছি, সেখানে মহান কোনও ব্যাপার নেই। খুব তুচ্ছ বিষয়গুলো আমি তুলে আনার জন্য চেষ্টা করেছি।

“উপন্যাসটি পুরস্কারের জন্য লিখিনি, কিন্তু আমি পুরস্কার পেয়েছি। এই পুরস্কার অবশ্যই আমাকে অনুপ্রাণিত করছে এবং আমি কমিটমেন্ট করছি- সারাজীবন সাহিত্যের জন্য আরও বেশি নিবেদিত থাকব।”

বিচারকদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্যে সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, “সব ভালো কথা-সাহিত্যই কবিতা। যারা কথাসাহিত্য চর্চা করেন, তাদেরও কবিতা পড়া উচিৎ।" 

আরেক বিচারক অধ্যাপক সৌদা আখতার বলেন, “বিচারক হিসেবে কাজটি করা খুবই কঠিন- অনেক ভালো পাণ্ডুলিপি থেকে বেছে চূড়ান্ত করা। তবু আমরা যোগ্য সাহিত্যিকের হাতেই পুরস্কার তুলে দিতে পেরেছি।”

কবি শামীম রেজার সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কবি জয় গোস্বামী।