মার্কেস তাঁর শেষ উপন্যাসটি ধ্বংস করে ফেলতে চেয়েছিলেন

চল্লিশোর্ধ্ব এক নারীর জীবনের অন্তরঙ্গ গল্প বলেন তিনি, যে-নারী বিবাহের ত্রিশ বছর পর গোপন সম্পর্কের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ও পূর্ণতার অনুসন্ধানে ব্রতী হন।

আলম খোরশেদআলম খোরশেদ
Published : 10 March 2024, 07:48 AM
Updated : 10 March 2024, 07:48 AM

তার মৃত্যুর পরপরই Until August শিরোনামের অসমাপ্ত এক পাণ্ডুলিপির কথা জানা যাচ্ছিল কিন্তু সেটা চূড়ান্ত ছিল না বলে এতদিন প্রকাশিত হয়নি। জীবদ্দশায় মার্কেস স্মৃতিবিলোপের ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে এটি চূড়ান্ত করতে পারেননি, তাই এর প্রকাশ তিনি নিজেই নিষিদ্ধ করে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার সন্তানরা মার্কেসের সেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে প্রকাশ করতে যাচ্ছেন তার অসমাপ্ত উপন্যাসটি। আগামী ১২ মার্চ এটি প্রকাশ উপলক্ষ্যে সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই বইটির প্রকাশ সম্পর্কিত প্রক্রিয়া, উপন্যাসটির কাহিনীচুম্বক এবং চূড়ান্তকরণের ঘটনা নিয়ে আলেক্সান্দ্রা অলটার-এর নিবন্ধ। অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক আলম খোরশেদের অনুবাদে এই নিবন্ধটি এখানে উপস্থাপন করা হলো। বি.স.

..................................

মূল: আলেক্সান্দ্রা অলটার

তর্জমা: আলম খোরশেদ

.................................

জীবনের শেষদিকে, যখন তাঁর স্মৃতি এলোমেলো, গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস এক মাঝবয়সী বিবাহিত নারীর গোপন যৌনজীবন নিয়ে একটি উপন্যাস শেষ করার জন্য সংগ্রাম করছিলেন। তিনি এর কমপক্ষে পাঁচটি খসড়া করেছিলেন, এবং কয়েকবছর ধরে তার পাঠবস্তুর অদলবদল ঘটাচ্ছিলেন; কখনও বাক্য ফেলে দেওয়া, কখনও মার্জিনে মন্তব্য লেখা, বিশেষণ পালটানো, সহকারীর জন্য নির্দেশনা লেখা এইসব করছিলেন। একপর্যায়ে তিনি হাল ছেড়ে দেন এবং একটি চূড়ান্ত ও ধ্বংসাত্মক রায় প্রদান করেন।

“তিনি আমাকে সরাসরি বলেছিলেন পাণ্ডুলিপিটা ধ্বংস করে ফেলতে হবে,” তাঁর ছোট ছেলে গনসালো গার্সিয়া বার্চা বলেন। ২০১৪ সালে গার্সিয়া মার্কেস মারা যাবার পর উপন্যাসটির একাধিক খসড়া, অধ্যায়ের টুকরো, টীকাটিপ্পনী ইত্যাদি ইউনিভার্সিটি অভ টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের Harry Ransom Center এর আর্কাইভে স্তূপ করে রাখা হয়। ৭৬৯টি পৃষ্ঠাজুড়ে বিস্তৃত এই উপন্যাস, মোটের ওপর অপঠিত ও বিস্মৃত অবস্থায় সেখানেই পড়ে থাকে, যতদিন না তাঁর ছেলেরা পিতার ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করার সিদ্ধান্ত নেন।

এখন, মৃত্যুর এক দশক পরে তাঁর শেষ উপন্যাস Until August প্রকাশিত হতে যাচ্ছে এমাসে, বিশ্বের ত্রিশটি দেশে। এর আখ্যান আবর্তিত হয় আনা মাগদালেনা বাচ নামে একজন নারীকে কেন্দ্র করে, যিনি প্রতিবছর আগস্ট মাসে ক্যারিবীয় দ্বীপে তাঁর মায়ের কবর পরিদর্শন করতে যান। স্বামী ও পরিবার থেকে সাময়িক মুক্তিসম এইসব ভাবগম্ভীর তীর্থযাত্রার কালে তিনি প্রতিবারই একজন নতুন প্রেমিকের দেখা পেতেন।

উপন্যাসটি নোবেলজয়ী সাহিত্যিক চূড়ামণি গার্সিয়া মার্কেসের জীবন ও সাহিত্যকর্মে এক অপ্রত্যাশিত যতিচিহ্ন যোগ করে, যা নিঃসন্দেহে একজন লেখকের নির্দেশনার বিপরীতে গিয়ে তাঁর কোনো গ্রন্থ প্রকাশনার ক্ষেত্রে সাহিত্যিক উত্তরসূরি ও প্রকাশকদের গতিবিধি কেমন হওয়া উচিত, সে-বিষয়ে প্রশ্নের ঝড় তুলবে।

সাহিত্যের ইতিহাস এমনসব বিখ্যাত বইয়ের দৃষ্টান্তে আকীর্ণ হয়ে আছে যেগুলোর হয়তো কোনো অস্তিত্বই থাকত না যদি না লেখকদের উত্তরসূরি কিংবা উকিলেরা তাঁদের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করতেন।

ধ্রুপদি লোকশ্রুতি মতে মহাকবি ভার্জিল মৃত্যুশয্যায় তাঁর মহাকাব্য The Aeneid এর পাণ্ডুলিপি ধ্বংস করে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফ্রানৎস কাফকা যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়লে বন্ধু ও উত্তরাধিকারী ম্যাক্স ব্রডকে তাঁর সমস্ত লেখা পুড়িয়ে ফেলতে বলেছিলেন। ব্রড তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন এবং আমাদের উপহার দিয়েছিলেন The Trial, The Castle, Amerika ইত্যাদির মতো তাঁর পরাবাস্তব মাস্টারপিসসমূহ। ভ্লাদিমির নবোকভ পরিবারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর অন্তিম উপন্যাস The Original of Lauraকে নষ্ট করে ফেলতে, কিন্তু লেখকের মৃত্যুর ত্রিশ বছরেরও অধিককাল পর তাঁর ছেলে সেই অসম্পূর্ণ রচনাটি প্রকাশ করেন, নবোকভ যেটির খসড়া করেছিলেন ইন্ডেক্স কার্ডের ওপর।

মৃত্যুর পরে প্রকাশিত কিছু বইয়ের ক্ষেত্রে পাঠবস্তু বিষয়ে লেখকের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট ছিল, যা পাঠক ও পণ্ডিতদের ভাবতে প্ররোচিত করে, বইটি আসলেই কতটা সম্পূর্ণ কিংবা পাণ্ডুলিপি সম্পাদকেরা ঠিক কতটা স্বাধীনতা নিয়েছেন। প্রায়শই উত্তরসূরি কিংবা সাহিত্যসম্পত্তির অধিকারীরা সমালোচিত হয়েছেন লেখকের সাহিত্যিকখ্যাতির শরীর থেকে শেষ বৌদ্ধিক সম্পদটুকুও নিংড়ে নেবার লোভে, তাঁদের অসম্পূর্ণ বা নিম্নমানের রচনা প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যিকের সম্মানহানি করার জন্য।

গার্সিয়া মার্কেসের পুত্রদের কাছে, Until August নিয়ে কী করা যায় সেই প্রশ্নটি আরও জটিল হয়ে ওঠে বইটি সম্পর্কে বাবার পরস্পরবিরোধী মূল্যায়নের কারণে। কিছুকাল তিনি বইটা নিয়ে গভীর অভিনিবেশের সঙ্গে কাজ করেছিলেন, এবং একপর্যায়ে একটি খসড়া তাঁর সাহিত্য-ঘটকের কাছেও পাঠিয়েছিলেন। যখন স্মৃতিভ্রংশের তীব্রতা বেড়ে যায় কেবল তখনই তাঁর মনে হয়েছিল লেখাটি যথেষ্ট ভালো নয়।

২০১২ সাল নাগাদ তিনি এমনকি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদেরও চিনতে পারছিলেন না; তবে অল্প কিছু ব্যতিক্রমের মধ্যে তাঁর স্ত্রী মের্সেদেস বার্চা ছিলেন, ছেলেরা জানান। একটি আলাপ চালিয়ে যেতেও তাঁকে সংগ্রাম করতে হচ্ছিল। মাঝেমধ্যে তিনি তাঁর নিজের কোনো বই হাতে নিয়ে পড়তেন, কিন্তু সেই লেখাকে নিজের বলে চিনতে পারতেন না।

তিনি তাঁর পরিবারের কাছে স্বীকার করেন স্মৃতিরহিত নিজেকে তাঁর একজন শিল্পী হিসেবে নোঙরবিহীন নৌকো বলে মনে হত, যে স্মৃতিই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় সাহিত্যরসের ভান্ডার। স্মৃতি ছাড়া ‘আমাদের আসলে কিছুই নেই,’ তিনি তাঁদের বলেন। সেই ভঙ্গুর মুহূর্তে তিনি তাঁর উপন্যাসের গুণগত মান বিষয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠেন।

“গাবো একটি বইকে মূল্যায়ন করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন,” তাঁর দুই ছেলের বড়জন রদ্রিগো গার্সিয়া বলেন। “তিনি সম্ভবত গল্পের প্লটকেও অনুসরণ করতে পারছিলেন না আর।”

তাঁর মৃত্যুর বহুবছর পর Until August বইটা আবার পড়ে ছেলেদের মনে হয়েছিল বাবা সম্ভবত নিজেকে একটু বেশি নিষ্ঠুরভাবেই বিচার করেছিলেন। “আমাদের যেটুকু মনে ছিল এটাকে এবার তার চেয়ে আরও অনেক বেশি ভালো মনে হয়,” গার্সিয়া বলেন।

তাঁর ছেলেরা স্বীকার করেন বইটি গার্সিয়া মার্কেসের মাস্টারপিস সমূহের তালিকায় পড়ে না, এবং তাঁরা আশঙ্কা করছিলেন কেউকেউ হয়তো এই বইয়ের প্রকাশনাকে তাঁদের বাবার উত্তরাধিকার ভাঙিয়ে আরও কিছু টাকা বানানোর স্বার্থান্বেষী প্রয়াস হিসাবেই দেখবেন।

“আমরা অবশ্যই চিন্তিত ছিলাম আমাদেরকে কেবল লোভী হিসেবেই দেখা হবে ভেবে,” গার্সিয়া বলেন।

Love in the Time of Cholera এবং Hundreds Years of Solitude -যেটি প্রায় পাঁচকোটি কপি বিক্রি হয়েছিল- এর মতো বিপুলায়তন, প্রাচুর্যপূর্ণ জাদুবাস্তব মহাকাব্যিক নিদর্শনের বিপরীতে Until August ছিল বিস্তৃতির দিক থেকে খুবই সাধারণ। আন ম্যাকলিনের অনুবাদে আগামী ১২ই মার্চে এর যে ইংরেজি সংস্করণটি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তার আখ্যানভাগ মাত্র ১০৭ পৃষ্ঠার মধ্যেই ফুরিয়ে যায়।

দুই ভাই ঘোষণা করেন, বইটি গার্সিয়া মার্কেসের সাহিত্যকর্মে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হবে, অংশত একারণে যে, এতে তাঁর একটি নতুন দিক উন্মোচিত হবে। এই প্রথমবারের মতো একজন প্রধান নারীচরিত্রকে কেন্দ্র করে তিনি তাঁর আখ্যান বর্ণনা করেন যেখানে চল্লিশোর্ধ্ব এক নারীর জীবনের অন্তরঙ্গ গল্প বলেন তিনি, যে-নারী বিবাহের ত্রিশ বছর পর গোপন সম্পর্কের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ও পূর্ণতার অনুসন্ধানে ব্রতী হন।

তারপরও কোনোকোনো পাঠক ও সমালোচক গার্সিয়া মার্কেস নিজে যাকে অসম্পূর্ণ মনে করেছিলেন সেরকম একটি কাজকে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে তাঁর সুমহান উত্তরাধিকারের শরীরে একখানি হতাশাজনক পাদটীকা সংযোজনের এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নের চোখেই হয়তো দেখবেন।

Until August এর একটি পাণ্ডুলিপিতে লেখক নানারকম নোট লিখে রেখেছিলেন। তাঁর স্বদেশ কলম্বিয়ায়, যেখানকার টাকায় তাঁর প্রতিকৃতি রয়েছে, এবং যেখানে এই বইটির জন্য প্রত্যাশা তুঙ্গে, সেখানে সাহিত্যজগতের অনেকেই মার্কেসের যেকোনো নতুন লেখার জন্যই উন্মুখ, তা সেটা যত অসম্পূর্ণই হোক। তারপরও কেউ কেউ উপন্যাসটি যে উপায়ে বিপণন করা হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

“তাঁরা আপনাকে এটা পাণ্ডুলিপি আকারে, একটি অসমাপ্ত কাজ হিসেবে বিক্রি করছেন না, তাঁরা এটাকে গার্সিয়া মার্কেসের শেষ উপন্যাস বলে দাবি করছে,” কলম্বিয়ার লেখক ও সাংবাদিক হুয়ান মোসকেরা বলেন। “এটার ওপর যে মহত্ত্ব আরোপ করা হচ্ছে আমি তাতে বিশ্বাসী নই। এটা আসলে যা এটা তা-ই, গার্সিয়া মার্কেসের নাম ও সাহিত্যস্বাক্ষরের বদৌলতে এক বিরাট বাণিজ্যিক মুহূর্ত। “

কলম্বিয়ান ঔপন্যাসিক এক্তোর আবাদ বলেন, তিনি প্রথমদিকে এর প্রকাশনা বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন, কিন্তু এর একটি আগাম কপি পাঠ করার পর মত পালটান। “আমি ভেবেছিলাম এটি বোধহয় একধরনের বাণিজ্যিক সুবিধাবাদিতাই হবে, কিন্তু না, এটা ঠিক তার উল্টো,” আবাদ, যিনি বার্সেলোনায় উপন্যাসটি নিয়ে একটি উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন, তিনি আমাদেরকে ইমেইলে এটা জানান। “যে গুণগুলো গার্সিয়া মার্কেসের সেরা কাজসমূহকে মহৎ করেছে সেগুলোর সবই এতে রয়েছে।” কোনো সন্দেহ নেই যে, গার্সিয়া মার্কেস এটিকে কোনো একসময় প্রকাশযোগ্য মনে করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে মাদ্রিদে জোসে সারামাগোর সঙ্গে একটি জনঅনুষ্ঠানে মার্কেস এটির কিয়দংশ পাঠও করেছিলেন। এর পাণ্ডুলিপির অংশবিশেষ পরে স্পেনের বিখ্যাত পত্রিকা El Pais ও New York Times এ ছাপা হয়েছিল। তিনি এই প্রকল্পটি পরে পাশে সরিয়ে রেখে আত্মজীবনী লিখতে বসে যান এবং Memories of My Melancholic Whores নামে আরও একটি বই প্রকাশ করেন, যার ভাগ্যে মিশ্র সমালোচনা জুটেছিল। তিনি ২০০৩ সালে আবারও এটি লিখতে শুরু করেন জোরেসোরে এবং এর একবছর বাদে তাঁর প্রয়াত এজেন্ট কারমেন বালসেইসকে এর পাণ্ডুলিপি পাঠান।

২০১০ এর গ্রীষ্মে বালসেইস সম্পাদক ক্রিস্তোবাল পেরাকে ফোন করেন, যিনি গার্সিয়া মার্কেসের সঙ্গে তাঁর আত্মস্মৃতিটি নিয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি জানান মার্কেস, তখন তাঁর বয়স ৮০, একটি উপন্যাস শেষ করার চেষ্টা করছেন এবং পেরাকে অনুরোধ করেন তাঁকে সাহায্য করার জন্য। মার্কেস তাঁর চলমান কাজ নিয়ে খুবই গোপনতাপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু কয়েকমাস পরে তিনি এর কয়েকটি অধ্যায় পেরাকে পড়তে দেন এবং তাঁকে তখন খুবই উত্তেজিত দেখাচ্ছিল, পেরা মনে করতে পারেন। এর বছরখানেক পর থেকে তাঁর স্মৃতি প্রতারণা করতে থাকে, তিনি নিজের গল্পের অর্থোদ্ধার করতে হিমসিম খান, যদিও তখনও তিনি পাণ্ডুলিপির মার্জিনে নানারকম নোট লিখে যেতে থাকেন।

“এটা তাঁর জন্য শুশ্রূষার মতো ছিল কেননা তখনও তিনি কাগজ কলম নিয়ে কিছু একটা করতে পারছিলেন,” পেরা বলেন। “কিন্তু এটাকে শেষ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না।”

“আমি যখন তাঁর সঙ্গে মিলে সেই তিনচারটি অধ্যায় পড়লাম তখন প্রথম যে চিন্তাটা আমার মাথায় আসে সেটা হল, আমি চাইব তাঁর পাঠককুল যেন এই আশ্চর্য গল্পটি উপভোগ করতে পারে,” ক্রিস্টোবাল পেরা বলেন, যিনি এই পাণ্ডুলিপিটি সম্পাদনার কাজ করেছিলেন।

পেরা খুব বিনয়ের সঙ্গে গার্সিয়া মার্কেসকে বইটি প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করলে তিনি এর জোর বিরোধিতা করেন। “তিনি বলেছিলেন জীবনের এইপর্যায়ে কোনোকিছুই আর প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই আমার,” পেরা স্মরণ করেন।

৮৭ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুর পর Until August এর একাধিক খসড়া Ransome Center এর মহাফেজখানায় রক্ষিত ছিল।

দু'বছর আগে, গার্সিয়া মার্কেসের পুত্ররা আখ্যানটি আরও একবার নতুন করে পড়ে দেখতে চাইলেন। উপন্যাসটি কোথাও কোথাও বেশ অগোছালো; তাতে কিছু স্ববিরোধ ও পুনরাবৃত্তিও ছিল, কিন্তু সেটিকে অসম্পাদিত হওয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ণই মনে হয়েছিল, তাঁরা বলেন।

ভ্রাতৃযুগল একবার বইটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলার পর, একটা ধাঁধার মুখোমুখি হন। গার্সিয়া কমপক্ষে পাঁচটি সমাপ্তপ্রায় সংস্করণ রেখে গিয়েছিলেন এর। কিন্তু একইসঙ্গে একটি সূত্রও রেখে গিয়েছিলেন তাঁর সবচেয়ে পছন্দের পাণ্ডুলিপিটি বিষয়ে।

“তাঁর রেখে যাওয়া ফোল্ডারগুলোর একটির সম্মুখভাগে ‘Gran OK final’ কথাটি লেখা ছিল,” গার্সিয়া বার্চা বলেন। “সেটি অবশ্য তিনি যখন এটি একেবারেই OK নয় বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার আগের গল্প,” তাঁর ভাই যোগ করেন।

গতবছর পেরাকে উপন্যাসটি সম্পাদনা করার কথা বলা হলে, তিনি ২০০৪ সালের জুলাইয়ের সংস্করণটি নিয়ে কাজ শুরু করেন, যার গায়ে “Gran OK final” কথাটি লেখা ছিল। তিনি অবশ্য অন্যান্য সংস্করণের সাহায্য নেন, এবং গার্সিয়া মার্কেসের সহকারী মনিকা আলোনসোর সংকলিত একটি ডিজিটাল দলিলেরও শরণাপন্ন হন যেটিতে লেখকের বিভিন্ন নোট ও পরিবর্তন বিষয়ক নির্দেশনার উল্লেখ ছিল। পেরাকে প্রায়শই একটি বাক্য কিংবা স্তবকের একাধিক রূপের মুখোমুখি হতে হত; একটি টাইপ করা ও আরেকটি মার্জিনে হাতে লেখা।

পেরা কিছু স্ববিরোধ ও অসংগতি সংশোধনের চেষ্টা করেন; যেমন নায়িকার বয়স, গার্সিয়া মার্কেস তাঁর নায়িকা মাঝবয়সী না-কি বৃদ্ধা, তা নিয়ে দোলাচলে ভুগেছেন এবং তার কোনো এক প্রেমিকের গোঁফ থাকা না থাকা নিয়েও।

বইটির সবচেয়ে সঙ্গত ও যৌক্তিক সংস্করণটি নির্মাণ করতে গিয়ে পেরা ও দুই ভাই একটি নিয়ম নির্ধারণ করেন: তাঁরা এমন একটি শব্দও যোগ করবেন না যা গার্সিয়া মার্কেসের নোটসমূহে কিংবা কোনো-না-কোনো সংস্করণে নেই, তাঁরা বলেন।

গার্সিয়া মার্কেসের অন্য কোনো অপ্রকাশিত রচনার ভাগ্যবিষয়ে তাঁর ছেলেরা বলেন, এটা কোনো বিষয়ই নয়: তেমন আর কোনো লেখার অস্তিত্ব নেই। মার্কেস সারাজীবন ধরে নিয়মিতভাবে তাঁর প্রকাশিত বইয়ের পুরনো সংস্করণ এবং অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপিসমূহ ধ্বংস করেছেন, কেননা তিনি চাননি সেগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো বিচার-বিশ্লেষণ হোক।

Until August প্রকাশের পেছনের অন্যান্য বিবেচনার সঙ্গে সেটাও একটা কারণ ছিল, তাঁরা বলেন।

“বইটা যখন প্রকাশিত হবে, তখন আমরা গাবোর সমস্ত লেখাকেই প্রকাশিতরূপে পাব,” গার্সিয়া বার্চা বলেন। “দেরাজে তখন আর কিছুই বাকি নেই।”