রণজিৎ অধিকারীর তিনটি কবিতা

ভয়ানক অর্থহীন অথচ খুব সাবলীলভাবে সেঁটে আছে জগতের সঙ্গে।

রণজিৎ অধিকারীরণজিৎ অধিকারী
Published : 8 June 2023, 03:20 PM
Updated : 8 June 2023, 03:20 PM

কম্পন

খুব সূক্ষ্ম একটা কম্পন,

কোনাচে পাতার ডোগা যেভাবে হঠাৎই কেঁপে ওঠে,

তারপর ডাল হয়ে গুঁড়ির ভেতর দিয়ে মাটিতে নেমে যায় যেন তারের ভেতর দিয়ে কম্পন এসে লাগল

তোমার হাতে ...

মাঝরাতে ঘুম ভেঙে হঠাৎ শূন্য হয়ে গেছ তুমি,

তুমি তখন একটা বড়ো ফাটলের মাঝখানে আর পৃথিবী

চুপ!

নৈঃশব্দের একটা সমুদ্রে তুমি ভাসছ,

ভাবো, তোমার চোখ নেই, কান নেই, ধ্বনি উচ্চারণেরও ক্ষমতা নেই,...

শুধু একটা কম্পন, খুব সূক্ষ্ম,

পাতার ডোগা —বাতাস নেই এমন দীর্ঘ দুপুরে যেভাবে কেঁপে ওঠে, সেইভাবে কেঁপে ধীরেধীরে পৃথিবীর গুঁড়ি বেয়ে তোমার হাতে এসে লাগল প্রথম তারপর এগোল বুকের দিকে ...

নিঃশব্দ একটা পৃথিবী। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে হঠাৎই ...

এটাই পৃথিবী

ওর ভেতরে থেকে দেখো আর যতটা পারো

দূর থেকে ছুঁয়ে থাকো।

আলোগুলো এখনো তেমনই আছে,

এটাই পৃথিবী, যেখানে কোনোকিছুই অবান্তর হয় না।

সেই ফিরে ফিরে আসছে সপ্তদশ শতকের বিষাদ,

একইভাবে তুমিও বুক চেপে শুয়েছ

পৃথিবীর পিঠের ওপর যেন কত খ্রিস্ট পূর্বাব্দের ভঙ্গি!

এখনো শব্দগুলো বজায় রেখেছে তাদের পুরোনো অর্থ,

তুমি কখনো শব্দের ভেতরে ঢুকে পড়ো, কখনো

বস্তুর ভেতরে ঢুকে দেখো, আলোর ভেতর থেকে ...

কিন্তু যতটা পারো দূর থেকে ছুঁয়ে থাকো।

বাস্তব  

ওই যে ঝুলে থাকা একটা জায়গা,

ভয়ানক অর্থহীন অথচ খুব সাবলীলভাবে সেঁটে আছে জগতের সঙ্গে।

খুব ঝলমলে এমনকি যখন তুমি ওর ভেতরে দাঁড়িয়ে

জ্বলতে থাকো, এবং প্রাণপণে চাও কেউ

তোমাকে বের করে আনুক ওখান থেকে।

কিন্তু আর্তধ্বনিগুলো আটকে যায় ওর পরিধির ভেতরের দেওয়ালে, শুষে নেয় বিশুদ্ধ আলোগুলোও;

পরিবর্তে অন্য একটা আলো ওর ভেতরে— যা

সবকিছুকে স্পষ্ট করে তোলে।

ওই যে ঝুলে আছে জায়গাটা,

যেন কোথাও থেকে এনে যথাযথ আরোপ করা হয়েছে, এবং

কোনো মতামত না নিয়েই তোমাকে ওখানে

                                              পুরে ফেলা হবে।