অনেক বেশী জ্ঞান থাকলেই একজন ব্যক্তি সংস্কৃতিবান, সভ্য বা শিক্ষিত নন, তাহলে কম্পিউটারের চেয়ে বিদ্বান, সংস্কৃতিবান, সভ্য আর কেউ থাকতো না।
Published : 19 Sep 2024, 01:30 AM
উরুগুয়ের লেখক এদুয়ার্দো গালেয়ানোর জন্ম ১৯৪০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। মৃত্যু বরণ করেন ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল। লাতিন আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও ঔপন্যাসিক। তাঁর লেখা একাধিক বই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে বেস্ট সেলারের মর্যাদা অর্জন করেছে। তার Open Veins of Latin America, 1971) বইটি ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হওয়ার পর বহু বছর বেস্ট সেলারের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করে। বর্তমান সাক্ষাৎকারটি MRonline নামক পত্রিকায় ২০০৮ সালে ২৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন হোর্হে মাহফুদ। ইংরেজি থেকে সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন আসাদ মিরণ।
১. অতীত
প্রশ্ন: মানবতাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাসকে একটি মানব পণ্য বা সৃষ্ট ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার মানে এটি হল, ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত নানা ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী, যারা এটিকে প্রণয়ন ও ব্যাখ্যা করেছে, তাদের স্বাধীনতার পণ্য বা প্রকাশ। অন্যদিকে, মানবতাবিরোধীরা একে বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন। সেখানে তারা মনে করেন, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী হচ্ছে ইতিহাসেরই ফল আর তাদের স্বাধীনতা একটি বিভ্রম। আপনি যদি আমাকে এই সম্ভাব্য বর্ণচ্ছটার মাঝে কৃত্রিমভাবে পছন্দগুলিকে সীমিত করার অনুমতি দেন, তবে এখানে আপনি নিজেকে কোথায় রাখবেন?
এদুয়ার্দো গালেয়ানো: আমি আমার জীবনে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, তা থেকে আমার ধারণা হল, আমরা সেই ইতিহাস তৈরী করি যা আমাদের তৈরী করে। আমরা যে ইতিহাস তৈরী করি তা যখন আঁকাবাঁকা হয়ে আসে, অথবা আমাদের যারা শাসন করেন ইতিহাস যদি সেই গুটিকয়েক ব্যক্তির হস্তগত হয়, তখন আমরা ইতিহাসকে দায়ী করি।
প্রশ্ন: এই দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো ধরনের বস্তুবাদী নির্ণয়বাদ বা ধর্মীয় অদৃষ্টবাদের স্থান নেই ....
গালেয়ানো: অদৃষ্ট বা নিয়তিবাদ সান্তনা দেয়, তারা আপনাকে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দেয়, ভাগ্য সেখানে নক্ষত্রে খোদাই করা থাকে। কিন্তু ইতিহাস নিজেই এগিয়ে যায়, তিক্ত হলেও এটিকে আপনার গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প নেই। নিয়তিবাদ মিথ্যা বলে, কারণ স্বাধীনতায় বা মুক্তির জীবন যদি রোমাঞ্চকর না হয়, তবে কেউ এসে আমাকে বুঝিয়ে বলুন, সেই জীবনটা বেঁচে থাকার যোগ্য কিনা। তবে সতর্ক থাকুন: আলোকিত ব্যক্তিরাও কিন্তু মিথ্যা বলে, নির্বাচিত ব্যক্তিরা দাবী করেন, তাদের জাদুর কাঠি দিয়ে বাস্তবতাকে স্পর্শ করে বদলে দেবার ক্ষমতা আছে। আর যদি বাস্তবতা আমাকে না মানে, তবে এটি আমার উপযুক্ত নয়।
প্রশ্ন: যদি আধুনিক বিপ্লবের সময়, অর্থাৎ আকস্মিক ও সহিংস বিপ্লবের সময় চলে যায়, তাহলে কি অগ্রগতি বা প্রতিরোধই আমাদের সময়ে সবচেয়ে ভালো বিকল্প?
গালেয়ানো: কে জানে পৃথিবীতে কতগুলি জগৎ আছে এবং সময়ের মধ্যে কতগুলি বার আছে। কিন্তু ইতিহাস আমাদের পায়ে পায়ে চলে, কখনও কখনও এটি খুব ধীরে ধীরে চলে, আবার কখনও বা তাকে স্থির মনে হয়। যাই হোক না কেন, পরিবর্তন যখন নীচ থেকে আসে, গভীরতম অংশ থেকে আসে, তখন স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদে হোক, সেই পরিবর্তন ঠিকই তার আপন পথ খুঁজে পায়। এখানে নীচ থেকে বলতে আমি পা থেকে বুঝিয়েছি, অনেকটা জিতাররোসা’র গানের মতো। উপর থেকে যা কিছু তৈরী হয়, সেটা কূপ বা কুয়া ছাড়া ভিন্ন কিছু হয় না।
প্রশ্ন: আপনার লেখা “মিররস” বইটি এমনই এক নিবেদন যেটি সৃজনশীল এবং প্রত্নতাত্ত্বিক উভয় দিক তো বটেই একই সাথে বিশাল এক ভৌগলিক পরিসর ও বিস্তৃত সময়কালকেও ধারণ করেছে। ইতিহাসের কোন সময়টাকে আপনি নিষ্ঠুরতা ও অবিচারের জন্য পুরষ্কার পাবার যোগ্য বলে মনে করেন?
গালেয়ানো: সেই চ্যাম্পিয়নশিপে অনেক ফেভারিট আছে।
প্রশ্ন: ঠিক আছে, আরেকটু যদি নির্দিষ্ট করে বলতেন। এমন কোন নিষ্ঠুর পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা কি আপনার হয়েছে যা আপনাকে বিচলিত করেছে?
গালেয়ানো: কয়েক বছর আগে এমন একটি ঘটনা আমার সাথে ঘটেছিল। একটি ট্রাকে করে আমি ছাড়াও স্থানীয় আরও কয়েকজন উচ্চতম পারানার জঙ্গল অতিক্রম করছিলাম। কেউ কোন কথা বলছিলাম না। সবাই একসাথে ট্রাকের পাটাতনের উপর ঠাসাঠাসি করে বসেছিলাম। বার বার সবাই সজোড়ে লাফিয়ে উঠছিলাম। আমার ঠিক পাশেই একজন হত-দরিদ্র নারী, তার কোলে একটি শিশু। শিশুটি জ্বরে পুড়ছিল, অবিরত কাঁদছিল। নারীটি কেবল বলছিলেন, একজন ডাক্তার দরকার, কোথাও কি ডাক্তার পাওয়া যাবে। অবশেষে, আমরা একটি স্থানে পৌঁছালাম। কত ঘন্টা কেটে গেছে তা আমি ঠিক বলতে পারবো না। অনেকক্ষণ হলো, শিশুটির কোন কান্নার শব্দ পাচ্ছিলাম না। আমি সেই নারীকে ট্রাক থেকে নামতে সাহায্য করলাম। শিশুটিকে কোলে তুলে নিলাম। দেখলাম মারা গেছে। যে ঘাতক এই নিষ্ঠুরতার অবতারণা করেছিল, তার নাম শাসন ব্যবস্থা। যার কখনও জেল হয় না, যে কখনও পুরানো ভাঙাচোরা ট্রাকে ঘুরে বেড়ায় না।
প্রশ্ন: এ রকম স্মৃতি নিয়েই আমাদের এখানে থামতে হবে। এগোতে হবে। কেননা, পৃথিবী ঘুরছে। আপনি কি বিশ্বাস করেন, ঔপনিবেশিকতা ও আধুনিকায়নের এত বছর পরেও প্রাক-কলম্বিয়ার অতীত টিকে আছে আর সেটি লাতিন আমেরিকান সত্তা, অনুভূতি, এমনকি চিন্তাভাবনাকেও সংজ্ঞায়িত করার জন্য যথেষ্ট?
গালেয়ানো: কয়েক শতাব্দি ধরে, দেবতারা এসেছেন। কে জানে কীভাবে, সেই অতীত আমেরিকা, আফ্রিকার জঙ্গল, সব জায়গা থেকে তারা এসেছেন। এই দেবতাদের অনেকেই অন্য নামে চলাচল করেন। তারা জাল পাসপোর্ট ব্যবহার করেন, কারণ তাদের ধর্মকে কুসংস্কার বলা হয় এবং গোপনে তাদেরকে নিকুচি করা হয়।
২. বর্তমান
প্রশ্ন: আমরা কি ভোগবাদ এবং আর্থিক সাফল্যের মডেলের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা পুঁজিবাদের সমাপ্তি দেখতে পাচ্ছি, নাকি এটি কেবল আরেকটি সংকট, যা শেষ পর্যন্ত বিদ্যমান সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করবে, একই আধিপত্যবাদী সংস্কৃতি বহাল থাকবে?
গালেয়ানো: আমি প্রায়ই পুঁজিবাদের সমাধিতে যোগদানের আমন্ত্রণ পাই। যাহোক, আমরা বেশ ভালো করেই জানি, এই সিস্টেম - যেটি তার লাভকে বেসরকারীকরণ করে কিন্তু সদয়ভাবে ক্ষতির অংশটি সামাজিকীকরণ করে, আর সেটিও যেন যথেষ্ট নয়, আমাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, কাজটি জনহিতকর - সাত জনমেরও বেশী জীবন তার। পুঁজিবাদ একটি বড় মাত্রায় তার বিকল্প উৎসগুলিকে কলঙ্কিত করে। উদারহরণস্বরূপ, জনগণের নামে আমলাতন্ত্রকে ব্যবহার করে এবং সামাজিক গণতন্ত্রের নামে পুঁজিবাদের চেহারাকে আধুনিকীকরণ করে সমাজতন্ত্র শব্দটির অর্থকে শূন্যে পরিণত করা হয়েছে। আমরা জানি, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা যে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির উদ্ভব করে তা থেকে রক্ষা পেতে সেটিকে বেশ দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা হয়। অন্যদিকে, আমরা যেটি জানিনা সেটি হল, আমরা যে গ্রহে বাস করি তার কত শতাংশ মানুষ এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার চিপায় পড়ে টিকে থাকতে সক্ষম হব? যখন গ্রহটির জল, ভূমি, বায়ু নিঃশেষ হয়ে যাবে, তখন আমরা কোথায় যাব? লুনার ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানী ইতিমধ্যে চাঁদে জমি বিক্রি করা শুরু করেছে। ২০০৮ সালের শেষের দিকে, রাশিয়ান কোটিপতি রোমান আব্রামোভিচ তার হবু পত্নিকে চাঁদের একটি ছোট প্লট উপহার দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন: হয়তো তার অভিপ্রায় ছিল প্রথম কোন পুরুষ হিসেবে স্ত্রীকে চাঁদের একটি টুকরো উপহার দেবার, যা এক ধরনের রোমান্টিক পুঁজিবাদের উদাহরণ। উদাহরণস্বরূপ যদি বলি, আপনি কি বিশ্বাস করেন চীন তার আধিপত্যবাদী অর্থনীতি দিয়ে দ্রুতই এক নতুন সাম্রাজ্য, উপনিবেশবাদী এবং অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের ন্যায় সে-ও আধিপত্যবাদী হয়ে উঠবে?
গালেয়ানো: আমি যদি ভবিষ্যদ্বক্তা হতাম, তাহলে না খেয়ে মারা যেতাম। আমি ফুটবলটাকেও ভালো বুঝিনা। তবে চীনের ব্যপারে আমি যতটুকু বুঝি তা হ’ল: চীন পুরানো কমিউনিস্ট শৈলীতে রাজনৈতিক একনায়কত্বের একটি সফল সংমিশ্রণ অনুশীলন করছে। তার এমন একটি অর্থনীতি আছে যেটি পুঁজিবাদী বিশ্ববাজারের সেবায় কাজ করে। চীন এভাবে ওয়ালমার্টের মতো মার্কিন সংস্থাগুলির কাছে সস্তা কর্মী সরবরাহ করতে পারে, যেখানে সংগঠিত হওয়া নিষিদ্ধ।
প্রশ্ন: যেটির কথা বলতে গেলে, “ব্ল্যাক ফ্রাইডে” উপলক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেইনশপগুলি ক্রেতাদের কাছে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি করে। সাম্প্রতিক সময়ে এ রকম একটি দিনে প্রচন্ড তুষারপাতে ক্রেতারা ওয়ালমার্টের দরজায় ভিড় করে। তারা গেটে অপেক্ষারত কর্মীকে দরজা খোলার ফুসরতটুকু দেয়নি। হুড়মুড় করে তাকে পদদলিত করে ভিতরে প্রবেশ করে। কর্মীটি শেষ পর্যন্ত পিষ্ট হয়ে মারা যায়.......। এতসব অযৌক্তিকতা সত্ত্বেও, আমরা কি ভাবতে পারি মানবতা ব্যক্তি অধিকার এবং সমষ্টিগত বিবেকের উন্নত অবস্থায় নিজেকে খুঁজে পেয়েছে? আমাদের এই সময়ে সবচেয়ে ভালো দিকটি কি?
গালেয়ানো: বিংশ শতাব্দিতে, স্বাধীনতার নামে ন্যায়বিচারকে বলি দেয়া হয়েছে এবং ন্যায়বিচারের নামে স্বাধীনতাকে বলি দেয়া হয়েছে। আমারা এখন একুশ শতকে আছি, এর সবচেয়ে ভালো দিকটা হ’ল এখানে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ আছে। এটি আমাদের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের মেলবন্ধনের জন্য লড়াই করার আমন্ত্রণ জানায়। তারা পরষ্পর গা ঘেঁষাঘেঁষি করে একে-অপরের সাথে বাস করতে চায়।
প্রশ্ন: আমরা কি পনের শতকে মুদ্রণযন্ত্র যে বিপ্লব সাধন করেছিল তার সাথে ইন্টারনেটের আবির্ভাবের তুলনা করতে পারি?
গালেয়ানো: আমার ধারণা নেই, তবে এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ছাপাখানার জন্ম পনের শতকে হয়নি। চীনারা এটি তার দুইশো বছর আগে আবিষ্কার করেছিল। বাস্তবে যে তিনটি উদ্ভাবন রেনেসাঁকে সম্ভব করেছিল, সেগুলির সবটাই ছিল চীনের উদ্ভাবন: ছাপাখানা, কম্পাস আর গানপাউডার। আমি জানিনা আজ শিক্ষার উন্নতি হয়েছে কিনা, তবে আগে আমরা একটি সার্বজনীন ইতিহাস শিখতাম যা ইউরোপে এসে খর্ব হয়ে যায়। ইউরোপের ইতিহাসে মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায় না, চীন সম্পর্কে সেখানে একটি শব্দ নেই, তেমনি ভারত সম্পর্কেও কিছুই নেই। আর আফ্রিকা সম্পর্কে কেবলমাত্র অধ্যাপক টারজান আমাদের যা শিখিয়েছেন সেটাই জেনেছি মাত্র, যদিও তিনি আদৌ সেখানকার ছিলেন না। আমেরিকার অতীত ইতিহাস, প্রাক-কলম্বিয়ান বিশ্ব সম্পর্কে সেখানে কিছু ছোট ছোট লোককাহিনী, কয়েকটি রঙিন পালক....এবং চিয়াও (অভিবাদন)।
প্রশ্ন: যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সবচেয়ে বড় বিপদ কী?
গালেয়ানো: শুধু যোগাযোগ না, সবকিছুতে। মেশিন সাধু জাতীয় কিছু না। তবে আমরা সেগুলির সাথে যা করি তার জন্য মেশিন দায়ী না। অটোমোবাইল যেমন আমাদেরকে চালিত করে, তেমনি কম্পিউটারও আমাদের প্রোগ্রামিং করে। আর সেটার মধ্যেই সবচেয়ে বড় বিপদ নিহিত। ভীতিকর স্বাচ্ছন্দ্যে, আমরা আমাদের যন্ত্রের যন্ত্র হয়ে উঠি।
প্রশ্ন: একজন লেখক ও পাঠক হিসেবে, আজকাল কোন ধরনের পাঠে আপনি বেশী সময় ব্যয় করেন?
গালেয়ানো: আমি সবকিছু পড়ি, শহরের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেয়াল লিখন থেকে যা কিছু নজরে পড়ে তার সবটাই পড়ি।
প্রশ্ন: নিষ্ঠুরতা এবং অবিচার কি এদুয়ার্দো গালেয়ানোর সাহিত্যের সবচেয়ে বড় প্ররোচনা?
গালেয়ানো: না, যদি তাই হতো, তাহলে আমি ইতিমধ্যেই নিরবচ্ছিন্ন বিষন্নতাবোধে অসুস্থ হয়ে পরতাম। ভাগ্যক্রমে, আমি একজন ব্যস্ত মানুষ, আজন্ম কৌতূহলী এবং সর্বদা নদীর তৃতীয় তীরের সন্ধান করি, সেই রহস্যময় জায়গা যেখানে হাস্যরস ও ভয়ের মিলন ঘটে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন আমাদের সময়কালকে আগামী শতাব্দিতে স্মরণ করা হবে?
গালেয়ানো: মনে থাকবে কি? শতাব্দি কি আসবে? ঈশ্বর আপনার কথা শুনুক আর তিনি যদি বধির হন, তাহলে অন্তত শয়তান আপনার কথা শুনুক।
৩. ভবিষ্যৎ
প্রশ্ন: এদুয়ার্দো, আপনি কি বিশ্বাস করেন যে বিশ্ব তার ভৌগলিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিভাজনের ক্ষেত্রে একটি বৃহত্তর ভারসাম্যের দিকে অগ্রসর হবে না-কি, বিপরীতভাবে, আজকে আমরা যাকে শারীরিক ও নৈতিক জুলুম বলে বিবেচনা করি, সেই একই রূপের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর জন্য আমাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে?
গালেয়ানো: আমরা দোষী নই। ভাগ্য একটি চ্যালেঞ্জ, যদিও প্রথম দর্শনে এটি আমাদের কাছে একটি অভিশাপ বলে মনে হতে পারে।
প্রশ্ন: আমাদের বর্তমানের উন্নতি কি মূলত ইউরোপীয় ঐতিহ্যের মানবতাবাদী মূল্যবোধের গভীরে না-কি “প্রান্তীয়” জাতিগুলির হারিয়ে যাওয়া উৎসের পুনর্মূল্যায়নের মাঝে নিহিত রয়েছে?
গালেয়ানো: ইউরোপীয় ঐতিহ্য যথেষ্ট নয়। আমরা আমেরিকানরা অনেক মায়ের সন্তান। হ্যাঁ, ইউরোপ ঠিক আছে। কিন্তু সেখানেও অন্যান্য মায়েরা আছেন। শুধু আমেরিকানরাই না, পৃথিবীর সকল ক্ষুদ্রকায় মানুষ যতটা বিশ্বাস করে তারচেয়েও তাদের সংখ্যা অনেক বেশী। তবে পার্থিব রংধনু তার সমস্ত উজ্জ্বলতায় জ্বলে উঠবে না, যতদিন পর্যন্ত বর্ণবাদ, পুরুষতন্ত্র, সামরিকতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র এবং বাকি সব তন্ত্র দ্বারা এটি বিকৃত করতে থাকবে যা আমাদের বৈচিত্র্যের পরিপূর্ণতাকে অস্বীকার করে। যাইহোক এটা স্পষ্ট করা দরকার যে, ইউরোপীয় ঐতিহ্যের মানবতাবাদী মূল্যবোধগুলি তখন বিকশিত হয়েছিল, যখন ইউরোপ আমেরিকায় আদিবাসীদের নির্মূল করেছিল এবং আফ্রিকায় মানুষের মাংস বিক্রি করেছিল। স্বাধীনতার দার্শনিক জন লক একটি দাস-বাণিজ্যে কোম্পানীর শেয়ার হোল্ডার ছিলেন।
প্রশ্ন: হ্যাঁ, অনেকটা সেই প্রাচীন এথেন্স থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদী গণতেন্ত্রর মতো। কিন্তু তার মানে কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে?
গালেয়ানো: ইতিহাস নিজের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চায় না, এটা সে একটুও পছন্দ করে না, তবে প্রায়শই আমরা একে পুনরাবৃত্তিতে বাধ্য করি। আপনাকে খুব সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ দেই, এমন কিছু রাজনৈতিক দল আছে যারা বামপন্থী কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে এবং ডানপন্থীরা যা করেছে, সেগুলির পুনরাবৃত্তি করে। যখন আমাদেরকে একটি এবং একই জিনিস পছন্দ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, তখন ইতিহাস বিষন্ন হয় এবং গণতন্ত্রকে অসম্মানিত করা হয়।
প্রশ্ন: বর্তমান সমাজে “অ-জৈব” বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা কী? তাদের মধ্যে নিদেনপক্ষে কিছু সংখ্যক কি একটি সঙ্কটপূর্ণ এবং উস্কানিমূলক শক্তি হতে চলেছে?
গালেয়ানো: আমি বিশ্বাস করি লেখা কোন অকেজো আবেগ নয়। কিন্তু জৈব বা অ-জৈব বুদ্ধিজীবী যাই বলুনা না কেন, সাধারণীকরণ করার প্রয়াসকে কখনো বাস্তব জগতের মতো দেখায় না। পৃথিবী গড়তে অনেক কিছুই লাগে। আমার ক্ষেত্রে আপনাকে বলতে পারি, আমি শব্দ নিয়ে কাজ করি। অন্যথায় আমি সম্পূর্ণ অকেজো। লেখাই আমার একমাত্র জিনিস যা আমি কম বা বেশী ভালো পারি। আমার নিজের এবং অন্যদের অভিজ্ঞতার আলোকে মনে হয়, পড়ার কাজটি একটি নিগূঢ়, কখনো কখনো উর্বর ও যোগাযোগের আয়োজন। যদি কেউ এমন কিছু পড়েন যা সত্যিই কষ্টসাধ্য, তা কিন্তু তিনি রেহাই পাবার জন্য পড়েন না। সেই বইগুলি পড়া উচিত যেগুলি আপনার কানের কাছে রাখলে নিঃশ্বাস ফেলে, আপনাকে অষ্পৃশ্য রাখেনা, সে সামান্য হলেও আপনাকে পরিবর্তন করে। সে আপনার মধ্যে এমন কিছু একীভূত করে বা পূর্ণতা দান করে, যা আপনি জানেন না বা কল্পনাও করেননি এবং সে আপনাকে প্রশ্ন করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। তাছাড়া সে আরও কিছু করে, এমনকি, সে কখনো কখনো আপনাকে আমাদের সময়ের অভিধানে ভুক্ত হওয়া বিশ্বাসঘাতক শব্দগুলির প্রকৃত অর্থ আবিষ্কার করতে সহায়তা করতে পারে। একটি সমালোচনামূলক চেতনার সৃষ্টি হয়, এরচেয়ে বেশী আর কী চাই?
প্রশ্ন: কিন্তু সমসাময়িক লেখকরা এই “বুদ্ধিজীব “ শব্দটিকে এড়িয়ে চলেন, কেন?
গালেয়ানো: আমি নিজের জন্য উত্তর দিতে পারি, “লেখকদের” নামে নয়। এটিকে একটি সন্দেহজনক সাধারণীকরণও বলতে পারেন। আমি এমন একটি ভাষায় কথা বলতে এবং নিজেকে প্রকাশ করতে চাই যা সেন্টিপেনসান্টে (অনুভূতি-চিন্তা), খুব সূক্ষ্ণ এই শব্দটি আমার ক্যারিবিয়ান সাগরের কলম্বিয়ান উপকূলের জেলেদের কাছে থেকে শেখা। আর ঠিক সেই কারণেই বুদ্ধিজীবী বলা আমি মোটেও পছন্দ করিনা। আমার মনে হয়, আমি দেহহীন এক মস্তকে পরিণত হয়েছি, আমার যুক্তি এবং আবেগ একে অপরের সাথে বিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে, এ এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি, বলে বোঝাতে পারবো না। কেউ কেউ মনে করেন, বুদ্ধিজীবী হল এমন এক ব্যক্তি যার জানার ক্ষমতা আছে, কিন্তু আমি সেই একজনকে পছন্দ করি যার হৃদয়ঙ্গম করার ক্ষমতা আছে। অনেক বেশী জ্ঞান থাকলেই একজন ব্যক্তি সংস্কৃতিবান, সভ্য বা শিক্ষিত নন, তাহলে কম্পিউটারের চেয়ে বিদ্বান, সংস্কৃতিবান, সভ্য আর কেউ থাকতো না। একজন সংস্কৃতিবান ব্যক্তি হলেন সেই জন যিনি শুনতে জানেন, অন্যের কথা এবং প্রাকৃতিক জগতের হাজার হাজার কন্ঠ শুনতে পান, আমরা মানব জাতি যার অংশ। কথা বলার জন্য, আমি শুনি। আমি আসা-যাওয়া যাত্রার গল্প লিখি, আমি সেই শব্দগুলি তুলে নেই যেগুলি আমি ফিরিয়ে দিতে পারি, তারা যেখান থেকে এসেছে, আমি সেই রীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করি।
প্রশ্ন: আপনি যে কথা বললেন, আপনার গল্প বলার কৌশল কী? মানে, আপনার লেখার রীতি-নীতি কোন ধরনের?
গালেয়ানো: ছকেবাঁধা কোন নিয়ম নেই। আমি নিজেকে লিখতে বাধ্য করি না। কিউবার সান্তিয়াগোতে, এক বৃদ্ধ ড্রাম-বাদক দেবতার মতো বাজাতেন, তিনি আমাকে শিখিয়েছেন: আমাকে বলেছিলেন, “যখন আমার হাত চুলকায়, তখন আমি বাজাই।” কথাটা মনে গেঁথে গিয়েছে। আমার হাত না চুলকালে, আমি লিখি না। ফুটবলের মতোই সাহিত্যে, আনন্দ যখন কর্তব্যে পরিণত হয়, তখন এটি অনেকটা দাস-শ্রমের মতোই হয়ে যায়। বইগুলি আমাকে লেখে, তারা আমার ভিতরে বেড়ে ওঠে এবং আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি, কেননা তারা আমাকে বিশ্বাস করতে দেয় যে আমি লেখক। এখন বলছি আমি কীভাবে লিখি। আমি প্রতিটি পৃষ্ঠা বহুবার লিখি, সেগুলি আবার কেটে ফেলি, নিজেকে সংবরণ করি, আবার লিখি, ছিঁড়ে ফেলি। আমি আবার শুরু করি। আর এ সবই চরম আনন্দের এক অনুভূতি যখন দেখি আমি যা বলতে চাই সেটা একই রকম এবং কখনো কখনো আমার পৃষ্ঠাগুলি, যা বলতে চায় তার সাথে দারুণভাবে মিলে যায়।
প্রশ্ন: উরুগুয়ে এবং আর্জেন্টিনার সামরিক স্বৈরতন্ত্র, নির্বাসনের পরবর্তীতে আপনার লেখা বইগুলি ভিন্ন শৈলীতে রচিত হয়েছে। সম্ভবত সেখানে নির্দিষ্ট একটি বৈশিষ্ট্য গভীরভাবে পরিলক্ষিত হয়: আপনার দৃষ্টি একজন প্রথাবিরোধী বিপ্লবীর মতো, উপরন্তু আপনার ভাষা যেন আগের চেয়ে আরও বেশী সুরেলা হয়ে উঠেছে। আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে, জ্যাঁ পল সার্ত্রে বলেছিলেন, একজন লেখকের প্রকাশভঙ্গি বিশ্ব সম্পর্কে তার ধারণাকে প্রকাশ করে। আপনি কীভাবে আপনার শৈলী সংজ্ঞায়িত করবেন? সেটি কি বিশ্ব সম্পর্কে আপনার উপলব্ধি অথবা আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে? নাকি, শৈলীটি আকস্মিক, এমন একটা রূপ যেটি নান্দকিতার কোন ইতিহাস, কিশোর বয়সের প্রভাব থেকে এসেছে?
গালেয়ানো: আমার রচনাশৈলী বহু বছরের লেখা এবং মুছে ফেলার ফলাফল। হুয়ান রুলফো আমাকে বলতেন, আমাকে সেই পেন্সিলগুলির মধ্যে এমন একটি পেন্সিল দেখাতেন যা আপনি এখন প্রায় দেখতেই পাবেন না: “আমি গ্রাফাইট কার্বনের ডগা দিয়ে লিখি, আমি সেটার বিপরীত প্রান্ত দিয়ে আরও বেশি বেশি লিখি, যেখানে ইরেজার থাকে।” এটাই আমি করি বা করার চেষ্টা করি। আমি সবসময় কম কথায় বেশি বলার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন: অঙ্গীকারাবদ্ধ সাহিত্যের একটি সাধারণ উপাদান, সেই দক্ষিণ আমেরিকার একনায়কত্বের আগের বছরগুলি থেকে সত্তর দশকের বিপ্লবী ইউটোপিয়াস (স্বপ্নরাষ্ট্র) পর্যন্ত, সুখ বলে মনে হয়। এটি ব্যাখ্যা করার জন্য উদাহরণ হিসেবে, আমরা একদিকে পিনোচেটদের কঠোর মুখ, অন্যদিকে চে গুয়েভেরার হাসিমুখের ছবি প্রদর্শন করতে পারি। আপনি কি মনে করেন বিংশ শতাব্দীর সাহিত্যের “দুঃখের নান্দনিকতা” এবং সমাজের রক্ষণশীল শক্তির মধ্যে কোন সংযোগ বিদ্যমান? কোন মাত্রার সুখকে ধ্বংসাত্মক মনে হয়? এপিকিউরিয়ানিজম (ভোগবাদ) যার সম্পর্কে আমেরিগো ভেসপুচ্চি একটি নির্দিষ্ট চিত্রের রেফারেন্স দিয়ে নেটিভ আমেরিকানদের বুঝিয়েছিলেন।
গালেয়ানো: আমাকে কলম্বিয়ার উপকূলে ফিরে যেতে হবে, সেখানে কাউকে সবচেয়ে বাজেভাবে অপমান করতে আমরগাও (একজন তিক্ত মানুষ) শব্দটি ব্যবহার করা হয়। আপনাকে এর চেয়ে খারাপ কিছু আর বলা যায় না। এবং এটা বলার নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে যে, দিন শেষে, পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা হাসির যোগ্য নয়। যদি সমালোচনা সাহিত্য একই সাথে উপভোগ বা উদযাপনের সাহিত্য না হয়, তবে এটি জীবন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং পাঠকদের ঘুম পাড়িয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে তো পাঠকদের ক্ষোভে জ্বলে ওঠার কথা, কিন্তু তার পরিবর্তে তারা শুধু মাথা নাড়ে। প্রায়শই একটি বিষয় দাবী করা হয় যে সাহিত্য মানুষের সাথে কথা বলে, এটি কেবল তাদের সাথে কথা বলে যারা ইতিমধ্যেই প্ররোচিত হয়ে আছে। কোন ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে, এটাকে অনেকটা প্রেম ক্রিয়ার পরিবর্তে হস্তমৈথুনের মতো মনে হয়। যদিও আমার যতটুকু অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেই অনুযায়ী ভালোবাসার কাজটি উত্তম, কেননা এতে অন্তত একজন মানুষকে চেনা যায়। অসঙ্গতি বা দ্বন্দ্ব ইতিহাসকে চালিত করে। এবং সাহিত্য যা সত্যিকার অর্থে সামাজিক পরিবর্তনের শক্তিকে উদ্দীপিত করে তা আমাদের প্রতি রাতে লুকিয়ে থাকা গোপন সূর্যকে খুঁজে পেতে, সমস্ত প্রমাণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হাসির সেই মানবিক কীর্তি দর্শন লাভে সহযোগিতা করে। ইহুদি-খ্রিষ্টান ঐতিহ্য, যতটা বেদনার স্তুতি করে, ততটা সাহায্য করে না। আমার যদি ভুল না হয়, পুরো বাইবেলে একটি হাসির শব্দও শোনা যায় না। পৃথিবীটা কান্নার উপত্যকা, যারা বেশি কষ্ট ভোগ করে তারাই নির্বাচিত হয়ে স্বর্গে আরোহণ করে।
প্রশ্ন: পঞ্চাশ বছরের পৃথিবী সম্পর্কে আপনার কল্পনা কেমন হবে?
গালেয়ানো: আমার এই বয়সে, আমি কল্পনা করি যে পঞ্চাশ বছর পরে আমি আর এখানে থাকব না। দেখতেই পাচ্ছেন, আমার একটি অসাধারণ কল্পনা আছে।
প্রশ্ন: হুয়ান কার্লোস ওনেত্তি একবার বলেছিলেন যে তিনি নিজের জন্য লিখেছেন। যদি তিনি বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়ের মাঝে বেঁচে থাকা একমাত্র দুর্ভাগা ব্যক্তি হয়ে থাকেন তবে কি গালেয়ানো লিখবেন?
গালেয়ানো: একমাত্র জীবিত ব্যক্তি? ওহ! একঘেয়েমিতে মরে যেতাম। তাহলেও বোধহয় আমি লিখতাম, কারণ এটি আমার দোষ, তবে কারও জন্য না লেখাটা নিজের বোনের সাথে নাচার চেয়ে খারাপ। ওনেত্তি একরাতে, কিশোরসুলভ এক গোস্তাকির কারণে আমার উপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল। সে আমাকে বলেছিল, চিঠিগুলি নিজের জন্য লিখেছেন। আমি তাই সেগুলি হুয়ান কার্লোস ওনেত্তি বরাবর গঞ্জালো রামিরেজ স্ট্রিট, মন্টেভিডিও, ইত্যাদি পোস্ট অফিসে গিয়ে পাঠানোর কথা তাকে বলেছিলাম। আর সে রেগে গেল। সে মিথ্যা কথা বলে রাগ করেছিল এবং সেটা সে ভালো করেই জানত। কেউ যখন লেখেন তখন সে অন্যের জন্যই লেখেন।
প্রশ্ন: আপনি যদি এটি আবারও করার অভিজ্ঞতা ও সুযোগ পান তবে কি আপনি সেটা ভিন্নভাবে করার চেষ্টা করবেন? এদুয়ার্দো গালেয়ানো কিসের জন্য অনুশোচনা করেন?
গালেয়ানো: আমার কোন অনুশোচনা নেই। অনিচ্ছাকৃত পরিস্থিতির জন্য আমি কখনোই বিব্রতবোধ করিনা।