Published : 04 Dec 2020, 11:37 AM
ছবি: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
যাঁদের অবদানে বাংলা গান আধুনিক এবং উন্নত হয়েছে, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাঁদের একজন। তিনি জন্মেছিলেন রবীন্দ্রনাথের দু বছর পরে, ১৮৬৩ সালে। তাঁর পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন নাম-করা গায়ক। তিনি গাইতেন উচ্চাঙ্গ সংগীত, বিশেষ করে খেয়াল। রোজ ভোরবেলা তিনি রেওয়াজ করতেন। আর বালক দ্বিজেন্দ্রলাল তা আগ্রহভরে শুনতেন। সেই সাংগীতিক পরিবেশে তিনি মানুষ হন। রবীন্দ্রনাথের মতো তাঁরও রক্তে ছিলো সংগীতের জিন। আরও মিল ছিলো দুজনের। কিন্তু একটা জায়গাতে আদৌ মিল ছিলো না। দ্বিজেন্দ্রলাল স্কুল-পালানো ছাত্র ছিলেন না রবীন্দ্রনাথের মতো। অল্পবয়সে তিনি একে-একে স্কুল-কলেজের পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হন। ১৮৮৪ সালে, একুশ বছর বয়সে, তিনি ইংরেজিতে এমএ পাশ করেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। তারপর ঐ বছরই স্কলারশিপ নিয়ে বিলেতে যান উচ্চশিক্ষার জন্যে। দু বছর পরে কৃষিবিদ্যায় ডিপ্লোমা এবং রয়্যাল এগ্রিকালচারাল সোসায়েটির মেম্বারশিপ ও ফেলোশিপ নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
কৃষিবিদ্যা শিখে এলেও, তিনি চাষাবাদ করেননি। কারণ তিনি সোজা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছিলেন। কাজে লেগেছিলো তাঁর আর-একটা বিদ্যা, যা তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন—সে হলো বিলেতী সংগীত। তিনি যখন বিলেতে যান, তখন প্রথম দিকে পশ্চিমা গান পছন্দ করতেন না। টিকিট কেটে তিনি লন্ডনের বিখ্যাত অ্যালবার্ট হলে গান শুনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু গান শুনে তিনি হতাশ হয়ে বেরিয়ে আসেন। অবশ্য তারপর ধীরে ধীরে এ গান তাঁর ভালো লাগে। তখন টাকা দিয়ে স্কটিশ, আইরিশ এবং ইংলিশ গান শেখেন গানের শিক্ষকের কাছে। সেসব গান তাঁর এতো ভালো লেগেছিলো যে, দেশে এসে সে গানগুলোর প্রায় তিরিশটি বাংলায় অনুবাদ করেন। এবং তাদের মূল সুর বজায় রাখেন। সে গানগুলো কেমন হয়েছিলো জানা যায় না। তারপর তিনি বাংলা গানে ফিরে যান। তবে তাতে তখন বিলেতী সুরের প্রভাব লক্ষ করা যায়। এ ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর আশ্চর্য মিল চোখে পড়ে।
রবীন্দ্রনাথ বিলেত থেকে দেশে ফিরে কয়েকটা স্কটিশ এবং আইরিশ ফোক সং-এর ওপর ভিত্তি করে বাংলা গান রচনা করেছিলেন। কিন্তু এর থেকে আরও গভীর প্রভাব পড়েছিলো এসব গানের চলনে—বাল্মীকিপ্রতিভা, কালমৃগয়া এবং মায়ার খেলায় যা লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে বাল্মীকিপ্রতিভায়। যেমনটা আগেই বলেছি, দ্বিজেন্দ্রলালও ইংরেজি সুরে প্রভাবিত বাংলা গান লিখেছিলেন। তাঁর গানে সরাসরি ইংরেজি সুরের না হলেও, ইংরেজি গানের চলন এবং গতিময়তার প্রভাব পড়েছিলো ঢের বেশি। এবং এই প্রভাব তাঁর গানকে প্রাণময় করে তুলেছিলো। সে জন্যে সাধারণ বাংলা গানের মতো তাঁর গানের সুর এক স্বর থেকে অন্য স্বরে গড়িয়ে যায় না, বরং কেটে কেটে, ধাক্কা দিয়ে যায়।
দ্বিজেন্দ্রলাল নানা ধরনের প্রায় পাঁচ শো গান রচনা করেছিলেন। এসবের বেশির ভাগ গান শুনলেই এগুলো যে তাঁর রচনা, তা বেশ চোখে পড়ে। ধরা যাক, তাঁর দেশাত্মবোধক গান। রবীন্দ্রনাথের দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে তুলনা করলে এদের পার্থক্য সহজেই লক্ষ করা যায়। রবীন্দ্রনাথের দেশাত্মবোধক গান গুরুগম্ভীর, ভক্তিরসে সিক্ত। অপর পক্ষে, দ্বিজেন্দ্রলালের দেশাত্মবোধক গান চটুল নয়, বরং গতিশীল এবং প্রাণময়তায় পরিপূর্ণ। স্বরবিন্যাসের দিক দিয়ে দ্রুত ওঠা-নামায় ভরা।
দুজনের হাসির গানেও এই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গান কেবল সংখ্যার দিক দিয়ে বেশি নয়, তিনি বাংলা হাসির গানের রাজা। রবীন্দ্রনাথের হাসির গান অতিমার্জিত, বিদগ্ধজনের ঠোঁটের কোণে সে গান একটুখানি হাসির রেখা এঁকে দেবে। আবার, নজরুল ইসলামের হাসির গান মোটেই সূক্ষ্ম নয়, বরং এক কথায় বললে বলা যায়: সেগুলো স্থূল, সাধারণজনের উপযোগী। দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গানের বিষয়বস্তু, সুর এবং প্রকাশভঙ্গি এমন যে, তা শুনে লোকেরা অট্টহাসি হাসতো। এ ধরনের গানের মধ্যে 'বুড়োবুড়ি সুখেই ছিল', 'নন্দলাল', 'তোমায় ভালোবাসি বলে', 'আমরা বিলাত-ফের্তা ক ভাই', 'হিন্দুধর্ম' ইত্যাদি গান অসামান্য। সত্যি বলতে কী, তাঁর হাসির গান মাত্রই অসামান্য। হাসির গানের আদর্শ তিনি দেখে এসেছিলেন ইংল্যান্ডের মাটিতে। তারই অনুকরণে তিনি তাঁর হাসির গানগুলো রচনা করেছিলেন।
ছবি: উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী কার্তিকেয়চন্দ্র রায়
দেশে ফিরে আসার পর রক্ষণশীল সমাজের লোকেরা তাঁকে গোবর খেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করার বিধান দিয়েছিলেন। সেকালে কালাপানি পার হলে অর্থাৎ সমুদ্র পাড়ি দিলে জাত যেতো। সমাজের সবাই মিলে তাকে একঘরে করতো। সেই কুসংস্কার অনুযায়ী তাঁকেও প্রায়শ্চিত্ত করা জন্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সংস্কারমুক্ত দ্বিজেন্দ্রলাল তা অগ্রাহ্য করেছিলেন। উল্টো, তিনি 'একঘরে' নামক প্রহসন লিখে সে বিধানকে ব্যঙ্গ করেন। পরে তিনি হিন্দু রীতিনীতি ও আচার-ব্যবহারকে ব্যঙ্গ করে 'হিন্দুধর্ম' নামে একটি হাসির গান রচনা করেন। ১৯১০ সালে তিনি নিজে গানটি রেকর্ডে গেয়েছিলেন। (ইয়ুটিউবে গানটি শোনা যায়।)
ইংল্যান্ডে থাকার সময়ে দ্বিজেন্দ্রলাল এক নারীর প্রেমে পড়েছিলেন। দেশে ফেরার এক বছর পরে তখনকার কলকাতার বিখ্যাত হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার প্রতাপচন্দ্র মজুমদারের কন্যা সুরবালা দেবীকে বিয়ে করেন। বিয়ে করার পর তিনি সত্যিকার অর্থে স্ত্রীর প্রেমে পড়েন। তাঁর বহু গানেই স্ত্রীর প্রতি তাঁর গভীর প্রণয়ের ছবি ধরা দিয়েছে। স্ত্রীর জবানিতে রচিত 'আমি সারা সকালটি বসে বসে এই সাধের মালাটি গেঁথেছি' গানটি থেকে তাঁর প্রতি স্ত্রীর প্রেমের আন্তরিকতা অনুভব করা যায়। আর-একটি প্রেমের গানের একটুখানি উল্লেখ না-করে পারছি না:
আমার সারাটি চিত্ত প্রণয়ে বিকশি
ওগো তোমার বিরহে উঠিছে উচ্ছ্বসি
কবে তুমি আসি অধর পরশি
মোর পানে চেয়ে হাসিবে?
দু্র্ভাগ্যের বিষয়, তাঁর সঙ্গে মাত্র ষোলো বছর ঘর করা পর ১৯০৩ সালে তাঁর গর্ভবতী স্ত্রী হঠাৎ করে রক্তক্ষরণে মারা যান। তখন দ্বিজেন্দ্রলালের বয়স মাত্র চল্লিশ বছর। রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন কবির বয়স যখন মাত্র একচল্লিশ বছর। অতঃপর একাকীত্বের যে-আমৃত্যু বিরহ দেখা দেয়, সেই বেদনা রবীন্দ্রনাথ কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তাঁর পৃথিবীর পরিধি ছিলো অনেক বিস্তৃত। কর্মময় জীবনে নিজের বেদনাকে সংযত করে তিনি তাঁর সৃজনশীলতার মধ্য দিয়ে তাকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, সর্বজনীন করে নিয়েছিলেন। অপর পক্ষে, দ্বিজেন্দ্রলাল স্ত্রীর মৃত্যুর অভিঘাতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। সত্যিকার অর্থে তিনি নিঃসঙ্গতায় কাতর হয়ে পড়েছিলেন। সেই অবস্থায় তাঁর সুরের আসক্তি সুরাসক্তিতে পরিণত হয়। অংশত হয়তো সে কারণে তিনি মারা গিয়েছিলেন মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে। স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন তিনি। চাকরি-জীবনেও তিনি দারুণ অশান্তিতে ভুগেছিলেন।
এই অশান্তির কারণ: একেবার তিনি বঙ্গের গবর্নরের অযৌক্তিক নির্দেশ মেনে নিতে অস্বীকার করেন। সেটাকে কর্তৃপক্ষ তাঁর বেয়াদপি বলে গণ্য করেছিলো। তার ফলে চাকরি যায়নি বটে, কিন্তু তাঁকে সেকালের রীতি অনুযায়ী শাস্তি পেতে হয়। সে শাস্তি হলো তাঁকে বারবার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বদলির। বেশির ভাগ জায়গাও হতো কলকাতা থেকে দূরে।
এক মাত্র বিহারের ভাগলপুর ও মুংগেরে তিনি এক নাগাড়ে পাঁচ বছর কাজ করেছিলেন। তখন কেবল যে সদ্যবিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে বদলির ঝামেলা পোহাতে হয়নি, তাই নয়, তাঁর গানের জন্যেও সময়টা ছিলো খুবই অনুকূল। এ সময়ে তিনি তাঁর আত্মীয় এবং নাম-করা গায়ক সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের কাছে গান শেখার অফুরন্ত সুযোগ পান। দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর পিতার কাছে খেয়াল শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন বিলেত যাওয়ার আগে পর্যন্ত। কিন্তু দেশে ফিরে তিনি পিতাকে পাননি। তিনি মারা গিয়েছিলেন ১৮৮৫ সালে। পেয়েছিলেন সুরেন্দ্রনাথকে। সুরেন্দ্রনাথ বিশেষ করে গাইতেন টপ-খেয়াল। টপ-খেয়ালের বৈশিষ্ট্য তার তানে। এতে টপ্পার দ্রুত তান খেয়ালের অপেক্ষাকৃত মন্থর তানে প্রাণ সঞ্চার করতো।
নানা ধরনের গান লিখেছিলেন তিনি—টপ্পা অঙ্গের গান, কাব্যগীতি, স্বদেশী গান, প্রেমের গান, হাসির গানের জন্যে তিনি বিখ্যাত। তাঁর শ্যামাসংগীতের সংখ্যা কম হলেও, সে গানগুলো সুশ্রাব্য। যাঁরা গানের সমঝদার, তাঁদের কাছে বিশেষ করে তাঁর টপ্পা অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর স্বদেশী গান এবং হাসির গান সম্পর্কেও এ কথা প্রযোজ্য। এসব গানের মধ্যে অনেকগুলোই নাটকের অভিনয়ের কল্যাণে জনপ্রিয়তা লাভের সুযোগ পেয়েছিলো। কিন্তু তাঁর দুর্ভাগ্য এই যে, যেখানে জনপ্রিয়তার কেন্দ্র, সেই উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত কলকাতা নগরী থেকে তিনি চাকরির সুবাদে অনেক দূরে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তুলনা করলে তাঁর প্রতিকূল অবস্থানের কথা বোঝা যাবে। রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় বাস করতেন বলে সভাসমিতি এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে নানা ভূমিকা পালন করতে পারতেন। কিন্তু দ্বিজেন্দ্রলালের পক্ষে এ সুযোগ ছিলো না। স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের পর যখন সেই বিরল সুযোগ এলো, তখনও নিজের ঢাক তাঁর নিজেকেই বহন করতে হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের মতো তিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা পাননি। তাঁর কোনো অনুসারী ছিলো না।
ছবি: পুত্র কন্যাসহ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
আদি ব্রাহ্মসমাজ তথা ঠাকুরবাড়ি থেকে গান ছড়িয়ে পড়ার যতো পথ ছিলো, দ্বিজেন্দ্রলাল কেন, অন্য কোনো গীতিকারের ততো পথ খোলা ছিলো না। যেমন, গান ছড়িয়ে দেওয়ার একটা প্রশস্ত পথ হলো স্বরলিপি। তখনকার বঙ্গদেশে স্বরলিপি ছিলো, কিন্তু তা উদ্ভাবিত হয়েছিলো ঠাকুরবাড়িতেই। সেই স্বরলিপিতে রবীন্দ্রনাথের গান বাঁধা পড়েছিলো অল্পবয়স থেকে। তখন তাঁর গানের স্বরলিপি করতে এগিয়ে এসেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, আর তাঁদের এক কর্মচারী কাঙালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর তাঁর স্বরলিপি করতে এগিয়ে এসেছিলেন এতোজন যে, তাঁদের সবার নাম মনে রাখাও কঠিন। স্বরলিপি ছাড়া, নানা নামে রবীন্দ্রনাথের গানের বই প্রকাশিত হতো প্রায় নিয়মিত বিরতিতে। অপর পক্ষে, দ্বিজেন্দ্রলালের 'আর্যগাথা' প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিলো তাঁর বিলেত যাওয়ার আগে, বেশ অল্পবয়সে। কিন্তু দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিলো অনেক পরে। আর তাঁর গানের সংকলন—'গান' প্রকাশিত হয়েছিলো তাঁর মৃত্যুরও দু বছর পরে। কিন্তু তখন স্বরলিপি প্রকাশিত হয়নি। বস্তুত, তাঁর বেশির ভাগ গানের স্বরলিপি তাঁর মৃত্যুর অর্ধ শতাব্দী পরেও প্রকাশিত হয়নি। তাঁর দুই অপ্রাপ্তবয়স্ক পুত্রকন্যার পক্ষে এ ব্যাপারে কোনো সহায়তা করা সম্ভব ছিলো না।
প্রসঙ্গত তাঁর গান সম্পর্কে আরও একটা কথা বলা দরকার। তিনি রবীন্দ্রনাথের অনুকরণ অথবা অনুসরণ করেননি। তাই রবীন্দ্রনাথের গানের চার তুকের কোনো প্রভাব দ্বিজেন্দ্রগীতিতে লক্ষ করা যায় না। কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উভয়ের গানে সাদৃশ্য দেখা যায়। এই সাদৃশ্য গানের কথা ও সুরের অনুপাতে। উভয়ই কথাপ্রধান গান রচনা করেছিলেন। যদিও, দ্বিজেন্দ্রলালের গানের তানে কোথাও কোথাও কথা ঢাকা পড়েছে। মনে রাখতে হবে যে, কবি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অনেক, অনেক বড়ো।
জীবনের শেষ দশ বছর তাঁর অশান্তিতে কেটেছিলো। এ সময়ে তিনি নাটক এবং স্বদেশেী গান রচনায় মন দিয়েছিলেন। তার ফলে কবি হিসেবে তিনি যতোটুকু খ্যাতি লাভ করেছিলেন, নাট্যকার হিসেবে তিনি তার থেকে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন। এসব নাটকের জন্যে তিনি অনেকগুলো উৎকৃষ্ট গানও রচনা করেছিলেন। এসব নাটকের বিষয়বস্তুতে একটা স্বদেশ-প্রীতি ছিলো। তাঁর নাটকের মতো স্বদেশী গানের জন্যেও তিনি খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তাঁর স্বদেশী গানগুলোর মধ্যে 'ধনধান্যপুষ্প-ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা', 'বঙ্গ আমার, জননী আমার, ধাত্রী আমার, আমার দেশ', 'একবার গালভরা মা ডাকে', 'সেদিন সুনীল জলধি হইতে' ইত্যাদি গানের উল্লেখ করা যেতে পারে। বিশেষ করে 'ধনধান্যপুষ্প-ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা' একশো বছরেরও পরে আজও সগৌরবে টিকে আছে। এসব গানের মধ্যে একই সঙ্গে দেশের প্রতি তাঁর আন্তরিক ভক্তি, ভালোবাসা এবং বীরত্ব প্রকাশ পেয়েছে।