Published : 05 May 2025, 08:19 PM
এক.
কমলাপুর রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর যাওয়ার কথা ছিল আজ। কিন্তু এক-দেড় মিনিট দেরি করে আসায় ট্রেন আমাকে না নিয়েই চলে গেছে। বাংলাদেশের ট্রেনগুলো যে এতোটা কঠিন সময় মেনে চলছে জানা ছিল না। আটটা মানে আটটা। এক মিনিটও এদিক-সেদিক হলো না। প্ল্যাটফর্মে ঢুকেই দেখতে পেলাম ট্রেন তার হুইসেল বাজিয়ে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে। ট্রেন ধরতে আমি জোরে দৌড় লাগালাম। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড়। আমার দৌড় দেখে ব্যাপক হইহুল্লোর তৈরি হলো। কিছু লোক চিৎকার করছে। দাঁড়িয়ে থাকা দুই-তিনজন আমার পেছনে পেছনে দৌড়ানো শুরু করল। আমাকে দেখে তারাও দৌড়াচ্ছে কেন বুঝতে পারলাম না। ট্রেন ধরবে বলে মনে হচ্ছে না। অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে হয়তো।
দৌড়াতে দৌড়াতেই একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি দৌড়াচ্ছেন কেন ভাই? আপনিও কি দেরি করেছেন?’
লোকটি উত্তরে বলল, ‘আরে নাহ। আমি আপনাকে হেল্প করার জন্য দৌড়াচ্ছি। আপনাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিব। একা উঠতে পারবেন না। আপনি আরো কুইক দৌড়ান। কুইক। এভাবে স্লো মোশনে দৌড়ালে তো হবে না। আপনার ব্যাগ আমার হাতে দেন। দৌড়াতে সুবিধা হবে। ট্রেনে উঠে গেলে মালপত্র আমি ঢুকিয়ে দিব। ’
কুইক বললেই কুইক দৌড়ানো যায় না। বরং লোকটি বলার পর গতি আরো স্লো হলো। আমার এক হাতে ব্যাগ, আরেক হাতে রসমালাইয়ের বাটি। রসমালাইয়ের রস বেয়ে বেয়ে পড়ছে। ট্রেনের গতি আমার দৌড়ের গতির চেয়ে বেশি সন্দেহ নেই। হিসাব বলছে- এই ট্রেন ধরা সম্ভব নয়। গতি আরো বাড়াতে হবে। তবে উটকো ঝামেলা হচ্ছে সঙ্গে দৌড়ানো ব্যক্তিরা। এরা ব্যাপক সন্দেহজনক। আমাকে ধরে ট্রেনে উঠিয়ে ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয় কিনা কে জানে! স্টেশনগুলোতে প্রতারকরা ঘোরাঘুরি করে। সুযোগ পেলেই সবকিছু হাতিয়ে নেয়।
আমি হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। ট্রেন ছুটে চলল কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে। ছোট্ট বেলায় ট্রেন দেখলে টাটা দিতাম। ট্রেন মিস করে এখনো টাটা দিতে ইচ্ছা করছে। আমি টাটা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় তেড়ে এলো সঙ্গে দৌড়ানো দুই ব্যক্তি। ট্রেন ধরতে না পারায় তারা আমার চেয়েও বেশি হতাশ। আমাকে ঘিরে একটা জটলা তৈরি হলো। হাতের নাগালের ট্রেন না ধরায় উপস্থিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। আমি যে ইচ্ছা করেই ট্রেন ধরিনি এটা তারা নিশ্চিত। অপরাধটা বিরাট এবং শাস্তিযোগ্য। দৌড়ানোর পারিশ্রমিক হিসাবে একজন চা-নাস্তা খাওয়ার টাকাও দাবি করে বসল। তার দাবির প্রতি সহমত জানাল আরো কিছু লোক।
আশেপাশে কোথাও পুলিশ দেখছি না। এসব ক্ষেত্রে মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে হয়। এরা যে সংঘবদ্ধ চক্র বুঝতে বাকি থাকল না। কৌশল করতে হলো অনেক। আমি অমুক পত্রিকার সাংঘাতিক সাংবাদিক সেটা ইঙ্গিতে বোঝালাম। রেলওয়ে থানার ওসি আমার ল্যাংটা কালের বন্ধু সেটাও জানাতে হলো সবাইকে। সমন্বয়ক সাজিদ আলম আমার এলাকার ছোট ভাই। বিএনপির ফখরুল ইসলাম আলমগীর... অনেকের নামই নিতে হলো বিপদ থেকে বাঁচতে।
প্রতারকদের হাত থেকে কোনো রকমে রক্ষা পেলাম। ট্রেন মিস করলেও এখন আর খারাপ লাগছে না। প্ল্যাটফর্মের বাইরে অভ্যর্থনা কক্ষ। অভ্যর্থনা কক্ষের সামনে বসে এক ব্যক্তি সেদ্ধ ডিম খাচ্ছে। সেদ্ধ ডিম খাওয়া কোনো ঘটনা না। তবে এই ব্যক্তির ডিম খাওয়ার ধরণ পুরোপুরি ভিন্ন। পরপর দুটা ডিম খেল চোখ বন্ধ করে। চোখ-মুখ দেখে মনে হতে পারে ধ্যান করছে একাগ্রচিত্তে। ডিম খেতে খেতে ধ্যান। এটাকে ডিম্ব-ধ্যান বলা যাবে কিনা ধ্যান বিশেষজ্ঞদের জিজ্ঞাসা করতে হবে! তিন নাম্বার ডিম খাওয়ার আগে আমি লোকটির কাছে গিয়ে বললাম, ‘ভাই এভাবে চোখ বন্ধ করে ডিম খাচ্ছেন কেন?’
লোকটি চোখ খুলে মুচকি হেসে বলল, ‘এটা আমার আনন্দের সময়। মানুষ যখন ট্রেন মিস করে তখন আমি ডিম খাই। মনে হয় পৃথিবী থেমে গেছে। আর আমি একমাত্র সচল মানুষ। হা হা হা।’
আমি হা করে তাকিয়ে থাকলাম। এই রকম অদ্ভুত মানুষ আমি আগেও দেখেছি। তবে তারা ছিল কাগজে, প্রিয় লেখক মোস্তফা মামুনের গল্পে। হঠাৎ মনে হলো- আজকে আমিও অদ্ভুত একটা চরিত্রে ভূমিকা রাখছি। আমার সঙ্গে মিশে গেছে আরো অদ্ভুত কিছু ঘটনা। যেসব ঘটনা কথাশিল্পী মোস্তফা মামুন ঘটান তার গল্প-উপন্যাসে। সৃষ্টি করে যান রঙিন বৈচিত্র্যময় জীবনের।
বড় একটা সুটকেস নিয়ে অল্প বয়সী এক তরুণী অপেক্ষা করছে। কাকে যেন ফোন দিচ্ছে একটু পর পর। প্রেমিক হতে পারে। বোঝাই যাচ্ছে অপর পাশ থেকে কেউ ফোন ধরছে না। তরুণীর চোখে-মুখে উদ্বিগ্ন ভাব। দেখে মনে হচ্ছে কেঁদে দিবে। অস্থির হয়ে রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে বারবার।
বাজিতপুরে ফোন করা জরুরি। আমি যে যাচ্ছি না জানাতে হবে। কিন্তু পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম ফোন নেই। নাহ, কোনো পকেটেই নেই। সংঘবদ্ধ প্রতারকদের কাজ সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না। প্ল্যাটফর্মে প্রতারকরা আমাকে ঘিরে ধরেছিল। কথা বলার কোনো এক ফাঁকে সেখানেই হয়তো মেরে দিয়েছে।
রেলওয়ে স্টেশনটাকে এখন আর স্টেশন মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে বিশাল একটা পৃথিবী। আর চমকপ্রদ একটা গল্পের প্লট। মজার কথা হচ্ছে- আমিও গল্প লিখব আজ। আর আমার গল্পের ভেতরে থাকবে গল্পাকার মোস্তফা মামুনের গল্পের গল্প। গল্প ছুটবে গল্পের কাছে। দৌড়াবে হাসবে। দিনটা হবে গল্পে গল্পে একাকার। গল্পরা আজ কথা বলবে ফিসফিস করে, কখনো বা অট্টহাসিতে। আবার কখনো গল্প হবে কাঁটা। ক্ষত-বিক্ষত করবে পাঠকের বুক।
‘মেয়ের বাবা’ গল্পটির কথাই শুরুতে বলি। আমি বাবা বলেই হয়তো এই গল্পটি আমার কাছে বিশেষ কিছু। হাসি, আবেগ আর কষ্টের গল্প। আমার ধারণা 'মেয়ের বাবা'ই মোস্তফা মামুনের শ্রেষ্ঠ গল্পগুলোর একটি। সব বাবার কাছেই সন্তান হচ্ছে বেহেস্তের টুকরা। আর সন্তান হারানো বাবা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে অভাগা ব্যক্তি। মেয়ের বাবা গল্পে একজন বাবার আবেগ সম্পর্কিত আচরণগুলো অসাধারণ দক্ষতায় উঠে এসেছে। এটি এমন একটি গল্প, যা মানুষের অনুভূতিগুলোর মাঝে পাঠককে নিমজ্জিত করে। গল্পের শেষে পাঠকের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। লেখক তার স্বভাবসুলভ হিউমার দিয়ে শুরু করেন। আর শেষ করেন এক আকাশ বেদনা দিয়ে।
এরপর আসে পলাতক বীর৷ পলাতক বীর আসলে গল্প না, এক ধরণের অভিজ্ঞতা। পড়ার সময় মনে হয় আমি পড়ছি না, এই চরিত্রটার পেছনে হাঁটছি। গলির পর গলি, স্বপ্নের পর স্বপ্ন। সে পালিয়ে বেড়ায় ঠিকই, কিন্তু পালাতে পালাতেও সে বীর। কারণ সবকিছুর বিপরীতে দাঁড়িয়ে সে মানুষ থাকতে পেরেছে। পলাতক বীর মোস্তফা মামুনের অন্যতম সেরা গল্প। সত্যিকার মানুষের গল্প।
কমলাপুর স্টেশনে ট্রেন চলছে, অথচ আমার গল্প বন্ধ। এটা ঠিক মানাচ্ছে না। এখন বরং ঢোকা যাক আমার গল্পের মোস্তফা মামুনীয় বাঁকে- যেখানে হঠাৎ একটা দমকা বাতাস আসে, গল্প ঘুরে যায়, পাঠক নড়ে বসে। আর শেষে, বুকের গভীর থেকে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলতে হয়।
দুই.
রাস্তায় এসে বুঝলাম, আমার ব্যাগটিও খোয়া গেছে। অথচ কাঁধেই ঝোলানো ছিল এটি। মোটামুটি ভারী ব্যাগটি হঠাৎ উধাও হলো কিভাবে সেও এক রহস্য। আমি কিছুই বুঝলাম না কেন সেটা চিন্তার ব্যাপার। অন্যমনস্ক ছিলাম ঠিক আছে, তাই বলে এতোটা! ব্যাগটি ফেলে এসেছি, নাকি প্রতারকদের দক্ষ হাতের কাজ নিশ্চিত হতে পারছি না।
এখন আমাকে মোটামুটি নি:স্ব বলা যায়। পকেটে আমি টাকা রাখি না। হিপ পকেটে মানিব্যাগ রাখা ক্ষতিকর- এটা জানার পর থেকেই টাকা থাকে কাঁধের ব্যাগে। যেহেতু কিশোরগঞ্জ যাচ্ছিলাম, কাপড়চোপড়ও ছিল কিছু। এটিএম কার্ড থাকে মানিব্যাগের পকেটে। মোবাইল আর এটিএম কার্ড যদি একজনের হাতে পরে তাহলে সর্বনাশ। পিন নাম্বার চেঞ্জ করে সব টাকা তুলে নিতে পারবে। আমার সারা জীবনের সঞ্চয় আছে সেখানে। অনেক কষ্টের টাকা। প্রতারকদের দেরি করার কথা না। সব টাকা তুলেও ফেলেছে হয়তো। বাসায়ও ঢুকতে হবে চোরের মতো, তালা ভেঙে। কারণ দরজার চাবি আছে ব্যাগে।
নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করতে গিয়ে ধরা খেয়ে যাচ্ছি। আমার লেখার কথা ছিল মোস্তফা মামুনের সেরা দশ গল্পের রিভিউ। অথচ আমি লিখছি নিজের গল্প। ঠিক মতো লিখতে না পারলে ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে। কায়দা করতে গিয়ে যে গল্প ফেঁদেছি, সেখান থেকে বের হওয়ার উপায় দেখছি না। বরং আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছি। আমি চেয়েছিলাম প্রথম কয়েকটা লাইন মোস্তফা মামুনীয় ঢংয়ে শুরু করতে। হৃদয় তোলপাড় করা সেই ঢং। ব্যাপারটা সিম্পল কিন্তু কঠিন। প্রথম প্যারাতেই দিতে হবে ধাক্কা। ধাক্কাটা যত জোরে হবে ততোই সফলতা। এরপর আসবে হাসি। হাসির পর কষ্ট। আঁৎকে উঠবে মানুষ। তারপর চমক। সবশেষে কী হবে কেউ জানে না। কখনো নীরবতা, কখনো দীর্ঘশ্বাস! কখনো বা চোখ ভিজে যাওয়া হাসি। তিনি শব্দ নিয়ে ম্যাজিক দেখান। তাঁর গল্পে হতাশার মধ্যেও থাকে এক ধরনের কমেডি, যন্ত্রণার মধ্যেও অদ্ভুত রস। পাঠক কখন হেসে ফেলে আর কখন যে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, টেরই পায় না। কখনো কখনো বাক্য হয়ে উঠে ছুরি। কাটা দেয়, ক্ষত-বিক্ষত হয়ে উঠে মন।
পড়তে পড়তেই ঘোর তৈরি হয়। অদ্ভুত ভালোলাগা কিন্তু বিষন্নতা মোড়ানো ঘোর। মোস্তফা মামুন পাঠককে নিয়ে যান কল্পনার অলীক জগতে। খেলা করেন জীবন নিয়ে। উল্টে-পাল্টে দেন সবকিছু। চরিত্র গড়ে উঠে পরম মমতায়। পাঠক গল্পের ভেতরে হেঁটে বেড়ান, নতুন করে আবিষ্কার করেন নিজেকেই।
তিন.
সবকিছু খোয়ালেও নিজেকে সর্বহারা মনে হচ্ছে না। রসমালাইটা কেউ নেয়নি। কেন নেয়নি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হবে। বিষয়টা টেনশনের। চোররা কি মিষ্টির প্রতি আগ্রহ হারাল? এতো লোভনীয় রসমালাই!
আমি স্টেশনে ফিরে গেলাম। পুরো স্টেশন খুঁজেও আমার ব্যাগ, মোবাইল পাওয়া গেল না। দেখা হলো অনেকের সঙ্গেই। প্রতারকরা আগের জায়গাতেই আছে। নতুন কোনো মক্কেলকে খুঁজে পেয়েছে বোধহয়। ডিম খাওয়া ব্যক্তিটির সঙ্গেও দেখা হলো৷ কেউ আমার ব্যাগের খবর দিতে পারল না। শুধু সেই তরুণীটিকে কোথাও দেখলাম না। সে হয়তো চলে গিয়েছে তার প্রেমিকের সঙ্গে। যার জন্য সে অপেক্ষা করছিল। মেয়েটির আশেপাশে আমি অনেকক্ষণ ঘুরঘুর করেছি৷ সেখান থেকেও ব্যাগ চুরি যেতে পারে।
বাসায় ফেরাটাই এখন কষ্টের। স্টেশন থেকে আমার বাসা ১৪ কিলোমিটার দূরে। পকেটে যেহেতু টাকা নেই, বাস-সিএনজিতে যাওয়াটাও ঠিক হবে না। ফ্রি ফ্রি যাওয়া অশোভন। মামার বাসা ধানমণ্ডিতে। তাকে ফোন দিলে গাড়ি পাঠিয়ে দেবে। সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে নিমিষেই। কিন্তু আমার কাছে বর্তমানের মামুনীয় জটিলতাও খারাপ লাগছে না। নিজেকে গল্পের নায়ক মনে হচ্ছে। যে গল্প তৈরি হচ্ছে আমাকে ঘিরে। হেঁটেই বাসায় চলে যাব বলে ঠিক করলাম। ১৪ কিলোমিটার হেঁটে যাওয়া অসম্ভব কিছু না। আজকে বরং হেঁটে যাওয়াটা জরুরী। দেখা যাক দিনটা কিভাবে শেষ হয়। আরো অনেক ফাঁদ ও চমক থাকার কথা। মোস্তফা মামুন তার গল্পে সাহিত্যের ফাঁদ পাতেন। প্রতিটি ফাঁদে থাকে রহস্য। হাস্যরসের মধ্যেও এক ধরণের অস্থিরতা ঢুকিয়ে দেন। পাঠক ছটফট করে। গল্প শেষ না করে আপনি উঠতে পারবেন না কিছুতেই।
রাস্তায় এক ভ্যানওয়ালার সঙ্গে পরিচয়। সে আমাকে শাহবাগ নামিয়ে দেবে বলেছে। সম্পূর্ণ ফ্রি। ভ্যানে করে আমি এখন শাহবাগ যাচ্ছি৷ আমার সঙ্গে আছে এক টিয়া পাখি ও তার মালিক। এই পাখি ভাগ্যগণনা করতে পারে বলে জানাল তার মালিক। টিয়া পাখি খাঁচার ভেতরেই কাঁচা মরিচ খাচ্ছে। আমি টিয়াপাখির মালিককে জিজ্ঞাসা করলাম, 'আপনার পাখি কি কথা বলতে পারে?
টিয়া পাখিওয়ালা বলল, 'হ্যাঁ পারে। সবচেয়ে বেশি বলে ‘বাবু খাইছ?’ খুব আদুরে কণ্ঠে বলে। তবে মাঝে মাঝে রেগে গেলে ‘চোর চোর’ বলে গালিও দেয়। গালি অবশ্য কম দেয়। অনেক দিন পর পর মেজাজ বেশি খারাপ হলে বলে। গত দুই মাসে কাউকে চোর বলেছে বলে মনে পড়ে না।'
আমি টিয়া পাখির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিলাম। পাখি খাঁচার ভেতরেই নড়েচড়ে উঠল। এই টিয়া পাখি মনে হয় কাঁচামরিচ আসক্ত। তার মালিক আরেকটা কাঁচামরিচ দিল। কচকচ করে মুহূর্তেই শেষ। পাখিটি আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চিৎকার করে বলে উঠল, ‘চোর চোর চোর।’
আমি আঁৎকে উঠলাম। বেক্কল টিয়া পাখি। সে অবশ্যই ভুল করছে। চোর আমাকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। আর এই পাখি কিনা আমাকেই চোর বলে। কত বড় বদ! পাখি আবারো চিৎকার করল, ‘চোর চোর চোর’। এবার সবারই ভয় পাওয়ার কথা। পাখির চিৎকার শুনে ভ্যানগাড়ি থেমে গেল। ভ্যানের ড্রাইভার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ভাইজান আপনি নেমে যান। আপনাকে নিয়ে আমি কোনো বিপদে পড়তে চাই না। পাখি যখন আপনাকে চোর বলতেছে তখন নিশ্চয়ই কোনো ঘাপলা আছে।'
আমি ভ্যান থেকে লাফ দিয়ে নেমে যাই। রাস্তায় নেমেই আবার হাঁটি। পাখি আমার দিকে এখনো তাকিয়ে আছে। তার মুখটা করুণ। সে আবার বলে উঠল, 'চোর চোর চোর'।
আমি কেঁপে উঠলাম। ভয় লাগল খুব। জীবনে অনেক গালিগালাজ শুনেছি। দুই-একবার মারধোরও খেতে হয়েছে। কিন্তু চোর অপবাদ শুনলাম এই প্রথম। পাখি বলে ছেড়ে দিলাম। মানুষ হলে দৃশ্যটা হতো অন্য রকম। চিৎকার করে বলতাম ‘তুই চোর। তোর ১৪ গুষ্টি চোর। কত বড় সাহস আমকে চোর বলিস।’ হালকা-পাতলা জুডো-কারাতে শিখেছিলাম একসময়। সেগুলোরও কিছুটা প্রয়োগ করা যেত। পাখির ব্যাপারটা অবশ্য ভিন্নও হতে পারে। পাখি যদি সত্যিই ভাগ্যগণক হয় তাহলে এটাকে সতর্কবার্তা হিসেবেও ধরে নেওয়া যায়। পাখি হয়তো আমার ভবিষ্যত বলছে। ভবিষ্যতে আমি হয়তো বিরাট চোর হবো কিংবা কোনো চোর দ্বারা আবার আক্রান্ত হবো। দুটোর সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই তা এখনই জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।
রাস্তাগুলো খুব অচেনা মনে হচ্ছে। ঢাকায় থাকছি কয়েক যুগ। অথচ এই পথ, এই গলি, সুন্দর সুন্দর বাড়ি- আগে কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। এলাকাটিকে খুব সুন্দর লাগছে। আমি একটি বিশাল বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। উঁকি দিয়ে দেখলাম ভেতরে কী। বাড়ির সামনে অসংখ্য পুলিশ। এই বাড়িতে কি কোনো অঘটন ঘটেছে? কোনো চুরি, ডাকাতি বা অন্যকিছু? এত পুলিশ কী করছে এখানে?
গরমে ক্লান্ত লাগছে খুব। আমি সুন্দর বাড়িটির সামনে বসে পড়ি। আমার হাতে রসমালাইয়ের বাটি এখনো আছে। বাটিটি কারো হাতে গছিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো। এই এলাকায় গাছপালা অনেক। দক্ষিণ দিক থেকে হালকা একটা শীতল হাওয়া এলো। আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। আমি মনে হয় ঘুমিয়ে পড়ছি। কিন্তু চোখ লাগতেই প্রচণ্ড ধাক্কায় সজাগ হতে হলো। তাকিয়ে দেখি এক পুলিশ শক্ত করে আমার হাত ধরে আছে। এত শক্ত করে ধরেছে যেন আমি পালাতে না পারি। ওয়াকিটকি হাতে রাগী গলায় এক পুলিশ অফিসার বললেন, ‘আপনি এতদূর আসলেন কিভাবে? কী করছেন এখানে?’
আমি বললাম, ‘একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি তো তাই। আমার বাসা মিরপুর চিড়িয়াখানার পাশেই।’
আমার কথা শুনে পুলিশ অফিসারের রাগ আরো বেড়ে গেল। তিনি হুংকার ছেড়ে বললেন, ‘চিড়িয়াখানায় হেঁটে হেঁটে যেতে হবে কেন? এত দূরে কেউ হেঁটে যায়? আপনার গতিবিধি সন্দেহজনক। এটা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন জানেন না! আপনি রেড লাইন অতিক্রম করে ফেলেছেন। এখানে কেউ বিশ্রাম নিতে আসে না। আর আপনার হাতে কী? কোনো বোমাটোমা নয়তো?’
রসমালাইয়ের বাটি পরীক্ষা করা হলো। নাক দিয়ে গন্ধ শুকা হলো। নির্দোষ রসমাইলাকেও কোনো পুলিশ বিশ্বাস করছে না। তারা এমন ভাবে দেখছে যেন এটা মারণাস্ত্র। পুলিশ আমার সারা শরীর তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছু পেল না। এতে তাদের সন্দেহ আরো ঘনিভূত হলো। আরেক পুলিশ সদস্য বলল, ‘স্যার, এই লোক কোনো বিদেশি সংস্থার গুপ্তচরও হতে পারে। থানায় নিয়ে ভালো করে ডলা দিলেই সব বলে দিবে। খুবই সন্দেহজনক গতিবিধি স্যার। পকেটে একটা টাকাও নাই কিন্তু হাতে রসমালাই!'
আমাকে আটক করা হলো। হাতে হ্যান্ডকাপ পরানো হলো। এখন সম্ভবত থানায় নিয়ে ডলা দেওয়া হবে। কঠিন ডলা। স্বীকারোক্তিও আদায় করা হতে পারে। ছবিসহ পত্রিকায় খবর আসতে পারে- প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন থেকে গুপ্তচর আটক। নাশকতার ষড়যন্ত্র করছে আন্তর্জাতিক চক্র। নেপথ্যে ফ্যাসিবাদী শক্তি।
পুলিশের হাতে আগে কখনো আটক হইনি। ডলা খাওয়ার অভিজ্ঞতাও নেই। ডলাটা কিভাবে শুরু হতে পারে সেটা কল্পনায় কিছুক্ষণ ভাবলাম। কেন জানি কোনো ভয় কাজ করছে না আমার ভেতর। বরং এক প্রকার নিশ্চিন্ত বোধ করছি। আমি যা ভাবি তা হয় না। আশার কথা, আজকের দিনটা মোস্তফা মামুনীয় দিন। এই দিনে যেকোনো কিছু হতে পারে। গল্প ঘুরে যেতে পারে মুহূর্তেই। লেখকের কলমের খোচায় ঝড় থেমে যায়। আর শান্ত নদীতে আছড়ে পড়ে বিশাল ঢেউ।
চার.
আমি আশংকা বোধ করছি। আশংকাটা পুলিশকে নিয়ে নয়, আমার মামুনীয় গল্প নিয়ে। পুলিশের কাছে ধরা খেলাম। আমার আনন্দিত হওয়ার কথা। কারণ গল্পের জন্য এটা ছিল দারুণ। কিন্তু চিন্তার বিষয়- এ মুহূর্তে গল্পে জম্পেশ হিউমার সেট করা যাচ্ছে না। হিউমারটা ভাতের সঙ্গে আচারের মতো। জঘন্য খাবারকেও সুস্বাদু করে দেয়।
আজ দিনটা শুরু হয়েছিল কি চমৎকার ভাবেই! ট্রেন মিস করলাম, তারপর রসমালাই নিয়ে কী সুন্দর দৌড়। আমার পেছন পেছন দৌড়াল প্রতারকরা। পৃথিবীর সব দৌড়ের মধ্যেই এক প্রকার সৌন্দর্য আছে। দৌড়া-দৌড়ি পাঠককে পুলকিত করে। এরপর সব কিছু হাতিয়ে নিল। সেখানেও মজা ছিল। কিন্তু গল্পের এ পর্যায়ে এসে সেভাবে পারছি না মনে হয়৷ পারব কিভাবে? আমি কি মোস্তফা মামুন? হিউমারটা মোস্তফা মামুনের জন্মগত প্রতিভা। এমন মোহনীয় হিউমার একমাত্র তিনিই পারেন। আমি তাকে ঈর্ষা করি। তার মতো হতে চেষ্টা করি। কিন্তু সম্ভব হয় না। অবাক লাগে, এত সাবলীল হিউমার কিভাবে তৈরি করেন তিনি? এত অনায়াসে? কোথাও কোনো ফাঁকি নেই তো? কিম্বা চালাকি!
তার ভাষা চরিত্রগুলোর মতোই সরল, আনন্দময়। লেখক সরলতাকে পুঁজি করে গল্পের ডালি সাজান। পলাতক বীর, পিস্তলধারী পাওনাদার, গয়না, মেয়ের বাবা সরলতার অনন্য উদাহরণ। এখানে সরলতা, রস, ভালোবাসা, মায়া, নাটকীয়তা সবকিছুরই অপূর্ব মিলন ঘটেছে। তাই তো নির্দ্বিধায় বলে ফেলি- এ গল্পগুলোই বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোট গল্প।
সালাম গল্পটিকে অবশ্য একটু ভিন্ন বলা যায়। এখানে সরলতা কম। হিউমার আছে যথেষ্ট, হা হা হাসি নেই। নীরব রসের ভেতর আছে নীরব কান্না। আর আছে সরব দীর্ঘশ্বাস। এক অপরাধীর ক্রসফায়ারের ঘটনা। মানবিক গল্প কিন্তু বড্ডো নিষ্ঠুর লাগে। শেষে এসে মনে হলো- লেখক আসলেই নির্দয়। তিনি চাইলেই ছেলেটিকে বাঁচিয়ে দিতে পারতেন। গল্পটা একটু অন্যভাবে লিখলে ক্ষতিটা কী হতো। তবে এমন নিষ্ঠুর গল্পকেও আমি সেরাদের কাতারে রাখব।
বেকার মামা এবং বুলেট ভাইয়ের সমিতি প্রাণ খুলে হাসির গল্প। আপনি হাসবেন আর গল্প শেষ করে একটা দর্শন নিয়ে যাবেন।
আমার গল্পের ধারা থেমে গেছে। মামুনীয় দিন কোথায় গেল? আসলে এটা তো গল্প নয়, গল্পের রিভিউ। আবার রিভিউটাও গল্পের মতো। এত পেঁচিয়ে লিখলে কিছু ঠিক থাকে!
পাচ.
থানার হাজতখানা দেখার সৌভাগ্য আগে কখনো হয়নি। এবার সেই সুযোগটা হয়ে যাবে ভেবে কিঞ্চিৎ আনন্দিত বোধ করলাম। কিন্তু পুলিশ আমাকে নিয়ে হাজতখানায় ঢুকাল না। বরং হ্যান্ডকাপ খুলে দিয়ে ওসির রুমে নিয়ে গেল। ওসির রুমে এসি চলছে। শীতল-আরামদায়ক পরিবেশ। ওসি সাহেব আমাকে দেখে হ্যান্ডশেক করতে হাত বাড়িয়ে দিলেন। তারপর হাত ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললেন, `আমি দুঃখিত। পুলিশ আপনাকে চিনতে পারেনি। তাই ধরে এনেছে। আপনিও নিজের পরিচয় দেননি। পরিচয়টা তখন দিলে এমন ভুলবোঝাবুঝি হতো না। যাইহোক, পুলিশও মানুষ। ভুল আমাদেরও হয়। স্যারের সংগে আমি নিজে কথা বলেছি। তিনিও ব্যাপারটা সিম্পলভাবে নিয়েছেন।'
ঘটনা কী কিছুই বুঝলাম না। ওসি সাহেব কোন স্যারের কথা বলছেন? এতকিছু ঘটে গেল কখন? বিস্মিত হলাম না। মোস্তফা মামুনীয় দিনে এমন নাটকীয় কিছু ঘটতেই পারে। কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে পরে বলা বড় মুশকিল।
পুলিশের গাড়ি আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেল। সেখানে আরেক বিস্ময়। বাসার সিকিউরিটি রুমে বসে আছে স্টেশনের সেই তরুণী। তার সঙ্গে সুন্দরমত একটা ছেলেও আছে। এবারের বিস্ময় আমাকে সত্যিই বিস্মিত করল।
আমাকে দেখে তরুণী হেসে দিল। ছুটে এল আমার দিকে। যেন ছোট বেলায় হারানো ভাইকে খুঁজে পেয়েছে সে। তরুণী বলল, `আমার নাম সুমি। আপনার এই ব্যাগ আর মোবাইলটা আমার কাছে ছিল। আপনি আমার সামনেই ফেলে গিয়েছিলেন। এরপর অনেক খুঁজেছি আপনাকে। কোথাও পাইনি। ফোন আনলক থাকায় আপনার এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে ঠিকানা পেয়েছি। এখন আপনার জিনিস রেখে দিয়ে আমাদের বাঁচান।'
বাঁচান বলেই তরুণীটি হেসে দিল। খিলখিল হাসি। এখন তাকে আগের চেয়েও সুন্দর লাগছে। সকালে এত সুন্দর লাগেনি। ও হ্যাঁ, বুঝেছি। মেয়েটি শাড়ি পড়েছে। স্টেশনে সালোয়ার-কামিজ ছিল। সুন্দর লাগার এইটাও একটা কারণ হয়তো।
তরুণীটি তার পাশের ছেলেটাকে দেখিয়ে বলল, `ও আমার হাজব্যান্ড। আমাদের বিয়ে হয়েছে আজকেই। স্টেশন থেকে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।'
শেষ অংশ
ঠিক করেছি আজ রাতেই কিশোরগঞ্জ যাব। ট্রেন আছে একটা, সেটা দিয়ে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু রাতেও স্টেশনে গিয়ে দেখি, হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন চলে যাচ্ছে। আমি দৌড়াই, আরো জোরে দৌড়াই- কিন্তু ট্রেন ধরতে পারি না। ট্রেনের গতির সঙ্গে আমার গতি মেলে না। পিছিয়ে পরে আরো জোরে দৌড়াই। তবু ট্রেনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তেই থাকে আমার।
আমি হতাশ হয়ে হাঁটতে থাকি। কোথায় যাব জানি না, আমার কোনো গন্তব্য নেই। সামনের দিকে তাকাই। দেখি- এক লোক ধীর পায়ে আমার দিকে আসছে। কিছুটা অদ্ভুত, কিন্তু খুব পরিচিত যেন। লোকটি কাছে আসতেই আমি চমকে উঠি। আরে, এটা তো মোস্তফা মামুন—আমাদের মামুন ভাই।
আমি চিৎকার করে ডাকি, `মামুন ভাই আপনি এখানে? কোথায় যাচ্ছেন?
মোস্তফা মামুন আমার দিকে হালকা হাসি দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়লেন। কিছুটা নীরবতার পর বললেন, `কোথাও না। আমি শুধুই ট্রেন দেখতে এসেছি। যে ট্রেন চলে যায় আমি তাকে দেখি। '
আমি তার কথা কিছুই বুঝলাম না। সাহিত্যিকদের কথা মনে হয় এমনই হয়। কিছু বোঝা যায়, কিছু যায় না। মুচকি হেসে বললাম, `কিন্তু আমি তো ট্রেন ধরতে চেয়েছিলাম মামুন ভাই। অনেক চেষ্টা করেছি, পারিনি।
হাসিটা তার অভ্যাস, মজ্জাগত। এবার তিনি হো হো হেসে উঠলেন। বললেন, `হ্যাঁ, ট্রেন ধরার চেষ্টা করা খুব ভালো। তবে কখনো কখনো ট্রেন ধরে কোনো লাভ হয় না। বেশিরভাগ সময় ট্রেনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শুধুমাত্র দেখার। ধরার নয়।'
আমি চুপ হয়ে গেলাম, তার কথাগুলো যেন ভেতরে ঢুকে যাচ্ছিল। আমি বুঝি, আবার বুঝি না। তিনি আবারো বললেন, `তুমি কি জানো- এই স্টেশন থেকে ট্রেন চলে যায়, আবার ফিরে আসে। কিন্তু কখনো কখনো, জীবনে এমন কিছু না পাওয়াকেই ভালো মনে হয়।'
মোস্তফা মামুনের মুখে রহস্যের হাসি। জাদুকর যেভাবে রহস্য করে বলে যান, সেভাবেই তিনি বললেন, `জীবনটা ট্রেনের মতোই। আমরা যতই দৌড়াই, কিছু ট্রেন এমনিই চলে যাবে। আমরা তাদের ধরতে পারব না। কিন্তু সঠিক সময়ে আরেকটা ট্রেন ঠিকই আমাদের জন্য আসবে। আমাদের নিয়ে যাবে গন্তব্যে। '
আমি কিছু বলার আগেই মোস্তফা মামুন চলে যেতে শুরু করেন। ট্রেনের হুইসেল ভেসে আসে দূর থেকে। সিগারেটের ধোঁয়া ধীরে ধীরে মিশে যায় রাতের অন্ধকারে।