‘‘তেহরান সালমান রুশদির উপর হামলার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ থাকার বিষয়টি স্পষ্ট করে অস্বীকার করছে। ইসলামিক রিপাকলিক অব ইরানের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলার অধিকার কারো নেই।”
Published : 15 Aug 2022, 08:35 PM
ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার সঙ্গে ইরান কোনোভাবেই জড়িত নয় বলে স্পষ্ট করে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোমবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, ‘‘তেহরান এ ঘটনার সঙ্গে কোনও ধরনের যোগাযোগ থাকার বিষয়টি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করছে। ইসলামিক রিপাকলিক অব ইরানের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলার অধিকার কারও নেই।”
গত শুক্রবার নিউ ইয়র্কের শাটাকোয়া ইনস্টিটিউটে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন সালমান রুশদি।
হামলায় জড়িত সন্দেহে হাদি মাতার নামে ২৪ বছরের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। লেবানিজ বংশোদ্ভূত হাদির পরিবার বহু বছর আগে অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যায়। সেখানেই হাদির জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। হাদির বিরুদ্ধে আদালতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
রুশদির উপর হামলার পর সোমবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানায় ইরান।
রুশদির উপর হামলার ঘটনা ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে ‘খুশির খবরের’ মত করে প্রকাশ করা হয়েছে বলে এর আগে অভিযোগ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। ইরানের ওই আচরণকে তিনি ‘জঘন্য’ বলে বর্ণনা করেন।
বিবিসি জানায়, ইরানের সংবাদমাধ্যমে রুশদির উপর হামলাকে ‘ঈশ্বরের দেয়া শাস্তি’ বলা হয়েছিল।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব আরেকটি দৈনিকে হামলার কারণে রুশদি একটি চোখ হারাতে পারেন চিকিৎসকদের এমন আশঙ্কার খবরটি প্রকাশ করতে গিয়ে লেখে ‘শয়তানের একটি চোখ অন্ধ হয়ে যাচ্ছে’।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক রুশদির উপর ইরানসহ অনেক মুসলমানের ক্ষোভের কারণ তার লেখা উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’। ১৯৯৮ সালে প্রকাশের পরপরই বইটি ভারতসহ বিশ্বের একাধিক দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
ওই সময়ে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহোল্লাহ খমেনি রুশদির বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে মুসলমানদের তাকে হত্যা করার আহ্বান জানিয়ে ফতোয়া জারি করেছিলেন।
তারপর থেকেই মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে অনেকটা আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন রুশদি। কিন্তু সম্প্রতি ৭৫ বছরের এই লেখককে আবারও প্রকাশ্যে দেখা যেতে শুরু হয়। তারমধ্যেই তিনি হামলার শিকার হলেন।
এই হামলার বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আরো বলা হয়, রুশদি তার লেখায় যেভাবে ধর্মকে অবমাননা করেছেন সেটা বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে সমর্থন করা যায় না।
‘‘এই হামলায় আমরা সালমান রুশদি ও তার সমর্থকদের ছাড়া অন্য কাউকে দোষারোপ করা, এমনকি নিন্দার যোগ্য বলেও মনে করি না।
‘‘ইসলামের পবিত্র বিষয়গুলোকে অবমাননা করে এবং দেড় বিলিয়নেরও বেশি মুসলমান ও ঐশ্বরিক ধর্মের অনুসারীদের সহ্যের সীমা(রেড লাইন) অতিক্রম করে সালমান রুশদি নিজেকে জনগণের ক্ষোভ ও ঘৃণার সামনে মেলে ধরেছেন।”
রুশদির উপর হামলাকারীর বিষয়ে গণমাধ্যমে যা প্রকাশ পেয়েছে ইরান তার বাইরে আর কোনো তথ্য জানেনা বলেও জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি।
শুক্রবার হামলার পরপর রুশদিকে হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। শুরুতে চিকিৎসকরা তার জীবনের ঝুঁকি থাকার আশঙ্কা কথা জানালেও পরে অবস্থার উন্নতি হলে তার ভেন্টিলেশন খুলে নেওয়া হয়।
বর্তমানে কোনো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই তিনি শ্বাস নিতে পারছেন বলে জানা গেছে।