যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী উপচে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ভর্ৎসনার শিকার হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
Published : 18 Nov 2020, 10:06 PM
মহামারী সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দলকে সহযোগিতা করার জন্য তার ওপর চাপ বাড়ছে।
নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় স্বীকার না করার একগুঁয়েমিতে হোয়াইট হাউজের ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় (ট্রানজিশন) জটিলতা দেখা দিয়েছে।
ওদিকে, এই শীতে মহামারী পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে দেশটিতে যে হারে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে শুরু করেছে তাতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ সত্য হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন দৈনিক এক লাখের আশেপাশে নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দৈনিক মৃত্যুও হাজার ছাড়াতে শুরু করেছে।
কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্টের নির্বাচনে হেরে যাওয়া এবং নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় মহামারী মোকাবেলায় সমন্বিত জাতীয় কৌশল নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জাতীয়ভাবে কৌশল নির্ধারণে শূন্যতার ফলে স্বাস্থ্যখাত এবং স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনকে মহামারী নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে চরমভাবে ভুগতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় ‘আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’, ‘আমেরিকান নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘আমেরিকান হসপিটালস অ্যাসোসিয়েশন’র প্রধানরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে একটি খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়, ‘‘মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে হলে সবার আগে জানতে হবে আমাদের কী কী সম্পদ প্রয়োজন।”
“এজন্য আমাদের কী পরিমাণ ওষুধ ও রোগ শনাক্তের সরঞ্জামাদির যোগান আছে, চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষায় কী পরিমাণ পিপিই আছে, কতটি ভেন্টিলেটর আছে, হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য কতটি শয্যা বরাদ্দ আছে এবং কতজন চিৎসাকর্মীকে কাছে পাওয়া যাচ্ছে তার প্রকৃত তথ্য এবং পরিসংখ্যান নতুন প্রশাসনকে অবশ্যই জানাতে হবে। যাতে অগণিত মানুষের জীবন রক্ষা করা যায়।”
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের যে সংস্থা নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য ‘ট্রানজিশন’ প্রক্রিয়াগুলো শুরুর দায়িত্ব পালন করে সেই জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএসএ) এখনও বাইডেন ও তার রানিং মেট কমলা হ্যারিসের জয়কে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।
এ কারণে নিয়ম অনুযায়ী সম্ভাব্য পরবর্তী প্রশাসনকে যে সব বিষয়ে অবহিত করার কথা তা শুরু হয়নি, স্পর্শকাতর নানা ব্রিফিংয়ে বাইডেন ও হ্যারিস শিবিরের লোকজন থাকতে পারছেন না।
বাইডেনের সহযোগীরা জানিয়েছেন, ট্রাম্প ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অস্বীকার করায় বাইডেনের টিম টিকা বিতরণ নিয়ে কৌশল তৈরির পরিকল্পনায় থাকতে পারছে না।
এ নিয়ে বাইডেন বলেছেন, “কেউ কী এটা বুঝতে পারছেন? এটি জীবন বাঁচানোর বিষয়, বাস্তবেই, এটি অতিরঞ্জিত কোনও কথা না। আমরা সমন্বয় না করলে আরও লোক মারা যেতে পারে।”
ট্রাম্পের স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা এবং যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউচিরও একই মত। তিনি বলেন, সারা দেশজুড়ে মহামারীর বিরুদ্ধে ‘অভিন্ন পদ্ধতিতে’ লড়াই হলে সেটা অনেক বেশি কার্যকর হবে।
‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সমন্বয়হীন ভাবে যে যার মত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং আমাদের গণস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এমন কিছু মৌলিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন যেটা সবাই মেনে চলতে বাধ্য হবেন।
‘‘এক রাজ্য এক কথা বলছে, অন্য রাজ্য আবার অন্য কথা বলছে। এভাবে হবে না।”