ইতালির জেনোয়া শহরে গাড়ি চলাচলের একটি সেতু ধসে ৩৯ জন নিহতের ঘটনায় শোকের পাশাপাশি ক্ষোভও সঞ্চার হয়েছে।
Published : 15 Aug 2018, 09:25 PM
এত গুরত্বপূর্ণ একটি সেতু এভাবে ভেঙে পড়ায় এটির রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা নিরাপত্তার বিষয়গুলোতে কোনো গাফিলতি ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে একটি টাওয়ারসহ সেতুটির ৫০ মিটার উঁচু একটি অংশ ধসে পড়ে। ওই সময় সেতুর এ অংশে প্রায় ৪০টি গাড়ি ছিল। বিশাল বিশাল কংক্রিটের স্লাব দুটি গুদাম, রেল লাইন ও একটি নদী খাতের ওপর ধসে পড়ে।
সেতু ধসের কারণ এখনো জানা না গেলেও সেতুটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা কোম্পানির প্রধানের পদত্যাগের দাবি উঠেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বহু লোক কাজে যাওয়ার সময় কিংবা ছুটিতে কোথাও যাওয়ার সময় এ সেতুর ওপর গাড়িতে ছিল। কোনো কোনো গাড়িতে থাকা গোটা পরিবারই সেতু ধসে নিহত হয়েছে। ঠিক কত মানুষ নিহত হয়েছে এবং তাদের পরিচয় কি তা জানতে আরো সময় লেগে যেতে পারে।
বেঁচে যাওয়া মানুষেরা সেতু ধসে পড়ার সেই ভয়ংকর মুহূর্তের বর্ণনা দিয়েছেন। কেউ বলেছেন, তার গাড়ি দুটো কলামের মাঝের একটি জায়গায় গিয়ে পড়ে আটকে থাকায় তিনি বেঁচে গেছেন। আবার কেউ বলেছেন, সেতু কাঁপতে দেখেই সেটি ভেঙে পড়তে পারে আঁচ করে গাড়ি থেকে নেমে এক ছুটে দৌড়ে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে পেরেছেন।
ভয়াবহ এ ঘটনার পর বুধবার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পরিবহন মন্ত্রী ডানিলো টনিনেল্লি।
তিনি সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কোম্পানি অটোসট্রেড পার এল’ইটালিয়ার শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে বলেছেন। তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। আর এ কারণে কোম্পানিটিকে জরিমানা করাসহ তাদের কাজের লাইসেন্সও বাতিলের হুমকি দিয়েছেন টনিনেল্লি।
ওদিকে, কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা নিয়মানুযায়ী সেতুটি ত্রৈমাসিকভাবে দেখভাল করেছে।
তবে সেতুটির নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনোরকম গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে ঘটনাটি তদন্ত শুরু করেছে জেনোয়া সরকারি কৌঁসুলির কার্যালয়। ‘মানবসৃষ্ট ভুল’কেই সেতু ধসের জন্য দায়ী করেছেন প্রধান কৌসুঁলি।
সেতু ধসের ঘটনায় নতুন করে সামনে চলে এসেছে ইতালির অবকাঠামো নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিতর্ক। তাছাড়া, মোরান্দি সেতুটি নিয়ে অনেকের সতর্কবাণী আমলে নেওয়া হয়েছিল কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ইতালির দৈনিক ‘কোরিয়ের ডেলা সেরা’র তথ্যমতে, দেশটিতে ৫ বছরের মধ্যে এটি পঞ্চম সেতু ধসের ঘটনা।
জেনোয়া শহরের এই মোরান্দি সেতুটি কেমনভাবে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি কতদিন টিকবে এমন প্রশ্নের জবাবে এর আগে অনেকেই এটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে বলে জানিয়েছিলেন।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে সেতুটির অবস্থা নিয়ে কথা বলেছিল জেনোয়া সিটি কাউন্সিল। স্থানীয় শিল্প ফেডারেশনের এক কর্মকর্তাও তখন বলেছিলেন, সেতুটি ‘১০ বছরের মধ্যে’ ভেঙে পড়তে পারে।
এরপর ২০১৬ সালেও এক প্রকৌশলী সেতুটি ত্রুটিপূর্ণ বলে জানিয়েছিলেন।
সেতুটি ওই এলাকায় চলাচলের প্রধান সেতু ছিল। ফলে সেটি ভেঙে পড়াতে এখন এলাকাটির পরিবহন ব্যবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কোন্তে এ ঘটনার পর দেশজুড়ে সব অবকাঠামো দু’বার করে পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন।