আজ থেকে এক দুই দশক আগেও স্ট্রিম শব্দটির অর্থ ছিল ছোট্ট জলধারা। সে সময় শতকরা একশ’ ভাগ ক্ষেত্রে এই মানে বোঝাতেই স্ট্রিম শব্দটি ব্যবহৃত হতো। এখন সেই হার নেমে এসেছে ৩৬ শতাংশে। বাকী ৬৪ ভাগ ক্ষেত্রেই শব্দটির মানে অনলাইনে কোনো মিডিয়া ফাইল সঞ্চালন করা।
Published : 02 Aug 2019, 09:39 PM
কেবল স্ট্রিম নয়, খেয়াল করে দেখুন ক্লাউডের মানে প্রযুক্তিবান্ধব অনেকেই মেঘ বলবেন না, অন্তত প্রথম জবাবে নয়। একই কথা খাটে টুইট- যার মানে ছিল পাখির কিচিরমিচির অথবা জনপ্রিয় ফল আপেলের বেলায়। অ্যাপল মানে এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ফিরে যাই টুইট শব্দটিতে। ব্রিটিশ ন্যাশনাল ট্রাস্ট জানাচ্ছে, শতকরা কেবল একজন এখন টুইট বলতে পাখির ডাক বোঝান।
শব্দের এই বদলে যাওয়া অর্থ নিয়ে আয়োজিত এক জরিপে শতকরা ২৫ জন বাবা-মা বা বা তাদের আগের প্রজন্ম ভয় পাচ্ছেন তাদের উত্তরসূরীরা এই শব্দগুলোর মূল অর্থই আর কখনো জানবে না।
ইউনিভার্সিটি অফ লিডসের ভাষাবিজ্ঞানের গবেষক ড.রবি লাভ, যিনি উল্লিখিত জরিপটি পরিচালনা করেছেন, তিনি সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলছেন, ”আধুনিক প্রযুক্তির অনেক বিষয়ই ঠিক সহজে বুঝিয়ে বলা সম্ভব হয় না। আর এখানেই এসে হাজির হয় মেটাফোর বা রূপক।”
ড. লাভ আরও বলছেন- সহজসরল আর প্রাণবন্ত শব্দ অনেকসময়ই কঠিন বিষয়কে সহজে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে।
”এমনকি যে বিষয় তারা নিজেরাও ঠিকঠাক বোঝেন না, এইসব সহজ শব্দের ব্যবহারে তারাও সে বিষয়ে স্বাচ্ছন্দে কথা বলতে পারেন।” উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনার কোনো যন্ত্রে কোনো তথ্য প্রবাহিত হচ্ছে সেটা বোঝাতে স্ট্রিম শব্দটি যদি না থাকত, আপনি কী করে এটা বুঝিয়ে বলতেন?
শব্দের অর্থ পাল্টে যাওয়ার সুলুক সন্ধানে শব্দের দুইটি ডেটাসেট নিয়ে কাজ করেছেন গবেষকরা। এর একটি ডেটাসেটে ছিল ৯০ দশকের ৫০ লাখ কথোপকথন আর পরের ডেটাসেট ছিল ২০১০ দশকের প্রায় এক কোটি ২০ লাখ কথোপকথন।
গবেষণায় দেখা গেছে, আগের ডেটাসেটের তুলনায় পরেরটিতে মেঘ অর্থে ক্লাউড শব্দের ব্যবহার এক চতুর্থাংশে নেমে এসেছে।
তবে ড. লাভ বলছেন অর্থের এই পাল্টে যাওয়াকে ভালো বা মন্দ হিসাবে দেখার সুযোগ নেই। সময়ের সঙ্গে ভাষা নতুন নতুন অর্থ গ্রহণ করে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ক্যান (can) শব্দটির মানে যেমন স্বক্ষমতা বোঝায় তেমনি পানীয়ের জন্য অ্যালুমিনিয়াম কৌটাও বোঝায়।
শব্দের নতুন অর্থ নিয়ে আরেক বৈশিষ্ট্য হাজির করলেন ব্র্যান্ডবিষয়ক এজেন্সি ভিভিড ক্রিয়েটিভের গ্যারি অ্যাকারি। তিনি বলছেন- প্রতিষ্ঠানের নাম হিসেবে প্রকৃতির যে শব্দগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা অ্যাপল, নর্থ ফেইস, অ্যামাজন, নেকটার বা এটসেটরা, এর প্রতিটিই শোনার সঙ্গে সঙ্গে একটি ভালো অনুভূতি দেয়।
তবে, এর সবটাই যে মন ভালো করা তেমন নয়। ন্যাশনাল ট্রাস্ট-এর অন্যতম পরিচালক অ্যান্ডি বিয়ার বলেন, দেশজুড়েই তরুণ প্রজন্ম প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তিনি মনে করেন, কেবল প্রযুক্তি নয় শিশু-তরুণদের প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে পারলেই কেবল হারানো বন্ধন আবার তৈরি হতে পারে। তার মতে, সেটি করতে হলে ফিরে যেতে হবে প্রকৃতির কাছেই।