শেয়ার নিয়ে কারসাজির বিভিন্ন অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবীরুল আহমেদ চৌধুরীসহ ১২ জনকে মোট এককোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
Published : 28 Nov 2017, 08:40 PM
একইসঙ্গে নিয়ম ভেঙে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে তাতে অতিরিক্ত মুনাফা দেখিয়ে বাজার প্রভাবিত করায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কার্যালয়ে নিয়মিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন তাসবীরুলের স্ত্রী খন্দকার তাছলিমা চৌধুরী ও ভাই তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, যারা কোম্পানিটির সাবেক পরিচালক।
বিনিয়োগকারী সৈয়দ সিরাজউদ্দৌলা, আবু সাদাত মো. সায়েম ও ইয়াকুব আলী খন্দকারের সঙ্গে তাছবীর দম্পতিকেও বাজার কারসাজিকারক হিসেবে চিহ্নিত করেছে কমিশন।
তালিকাভুক্তি ছাড়াও রাইট শেয়ার ইস্যু করে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে একাধিকবার অর্থ তুলেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে তৈরি হওয়া বেসরকারি খাতের এ এয়ারলাইন্সটি। ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ারে বড় ধরনের লোকসানে রয়েছে।
২০১২ সালের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে ইউনাইটেড এয়ারের ব্যাপক দর ও লেনদেন বৃদ্ধি পায়। এর কারণ খুঁজতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের আর্থিক বিবরণীতে এবং ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক বিবরণীতে ডেফার্ড ট্যাক্স হিসাবে না ধরার কারণে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ও শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) অতিমূল্যায়িত হয়ে বাজারকে প্রভাবিত করে।
এ বিষয়টি সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে সতর্কপত্র ইস্যু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ের মধ্যে শেয়ার লেনদেন করায় এবং মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের আগেই তা জেনে শেয়ার কেনা-বেচা করে মুনাফা বানানোর মাধ্যমে আইন ভঙ্গ করায় তাসবীরুলের ভাই তোফায়েলসহ সাতজনকে ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের আগেই তা জেনে শেয়ার কেনা-বেচা করে মুনাফা অর্জন ও বাজার কারসাজিতে জড়িত থাকার দুটি অপরাধে এমডি তাসবীরুল ও তার স্ত্র্রীকে তাছলিমাকে ২০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিরাজউদ্দৌলা, সায়েম ও ইয়াকুবের বিরুদ্ধে বাজার কারসাজিতে অংশ নেওয়ার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ব্যবসা বাড়ানোর কারণ দেখিয়ে ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এরপরের বছরই প্রতিটি শেয়ার ১৫ টাকা দরে রাইট ইস্যু করে আরো ৩৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবারই বোনাস শেয়ার নিয়ে শেয়ারসংখ্যা বাড়াতে থাকে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে আইপিওতে আসার পর থেকেই কোম্পানির পরিচালকরা তাদের হাতে থাকা বাজারে বিক্রি শুরু করে।
ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩১ অক্টোবর তারিখ পর্যন্ত উদ্যোক্তা/পরিচালকদের কাছে রয়েছে মাত্র চার দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার। বেশিরভাগ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
মঙ্গলবার শেয়ারটি আগের দিনের চেয়ে ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ৫ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়। ৫২ সপ্তাহে ৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৩০ পয়সার মধ্যে শেয়ারটির দর উঠানামা করেছে।
গত দুই বছর কোনও লভ্যাংশ না দেওয়ায় জেড ক্যাটাগরির লেনদেনে রয়েছে কোম্পানিটি।
ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ১৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। তার আগের লাভ/লোকসানের কোনো তথ্য নেই।
কোম্পানিটির স্বল্পমেয়াদী ঋণ ১১৮ কোটি ৩৫ ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ রয়েছে ১৭৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। তাছাড়া বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে ইউনাইটেডের এয়ারওয়েজের ১২৫ কোটি টাকার বেশি টাকা দেনা রয়েছে।