সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে কুমিল্লা নগরীকে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে দিতে সব ধরনের ‘প্রস্তুতি’ সেরে নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী; সার্বিক নিরাপত্তায় বিভিন্ন বাহিনীর সাড়ে তিন হাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকছেন।
Published : 14 Jun 2022, 01:18 PM
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা নির্বাচনী প্রচার পর্ব শেষ হয়েছে সোমবার মধ্যরাতে। এরপর থেকেই নিরাপত্তা জোরদারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা শুরু হয় কুমিল্লা শহরে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। জেলা পুলিশের বাইরেও আশপাশের জেলা থেকে আনা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য, ভোটের দিন রাস্তায় থাকবে এপিসি, জলকামানের গাড়ি।”
বুধবার ভোটের দিন নিরাপত্তায় কোনো ব্যত্যয় ‘ঘটবে না’ আশ্বাস দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কোনো ‘অপ্রীতিকর’ ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে; সেভাবেই নিরপত্তার আয়োজন সাজিয়েছেন তারা।
সোমবার রাত ১২টা থেকে নগরীতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা পুলিশ। নির্বাচনের পরদিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় জরুরি সেবায় নিয়োজিত ও কার্ডধারী সাংবাদিক ছাড়া আর কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করতে পারবেন না।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকার বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিন হাজার ৬০৮ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। ৭৫টি চেকপোস্ট, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৩০টি টিম, অর্ধশতাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের মাঠে থাকছেন।
র্যাব সদরদপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আর মঈন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২৭ ওয়ার্ডে বাহিনীর ৩০টি গাড়ি টহলে আছে।
এখন পর্যন্ত যে নির্বাচনী পরিবেশ ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি যেমন আছে, তাতে ভোটের দিন কোনো ‘ঝামেলার’ শঙ্কা দেখছেন না চর্থা এলাকার বাসিন্দা সোলায়মান মিয়া।
৬৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বলেন, “বলুনতো, অতীতে কুমিল্লা শহরে কোনো নির্বাচনে সহিংসতা হয়েছে? এবারও কিছু হবে না। কুমিল্লার মানুষ শান্তিপ্রিয়। যেটা হয়েছে কাউন্সিলরদের মধ্যে টুকটাক, ঠেলাধাক্কা।”
ছোটরা এলাকার বাসিন্দা কাজী সোহাগ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, পরিস্থিতি ‘শান্ত’ থাকবে বলেই তিনি আশা করছেন।
তার ভাষায় “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুভমেন্ট ভালো দেখছি। একটু পরপর অলিগলিতে র্যাব ও পুলিশের গাড়ির টহল দেখছি।”
কুড়িগ্রামের ফজু মিয়া ১৪ বছর ধরে কুমিল্লা শহরে রিকশা চালান। তার ভাষায়, ভোটার না আসতে পারে, কিন্তু নির্বাচনে কোন ঝামেলা তিনি দেখেননি অতীতে।
তবে অভিযোগ আছে প্রার্থীদের। বিএনপি ছেড়ে ভোটে আসা মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার প্রচারের শেষ দিন সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ‘বহিরাগতদের মহড়া বন্ধের’ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এছাড়া ইভিএমের ফলাফল বিবরণী প্রিন্ট করে প্রকাশের দাবিও তুলেছেন ঘোড়া প্রতীকের এই প্রার্থী।
কায়সারের অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ভোট শেষে ইভিএমের প্রিন্ট কপি কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্দিষ্ট বোর্ডে টানিয়ে দেওয়া হবে। আর অন্যান্য অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গত দুইবারের মেয়র এবং এবারের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর অভিযোগ, তিনি যেসব ওয়ার্ডে প্রচারে গেছেন, সেসব ওয়ার্ডের কর্মী সমর্থকদের ‘কাজ বন্ধের হুমকি’ দেওয়া হচ্ছে।
“বলে গেছে, নির্বাচনী কাজ বন্ধ না করলে ১৫ তারিখের পর দেখে নেবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হুমকি দেওয়া হচ্ছে অজ্ঞাতনামা মোবাইল ফোন নম্বর থেকে।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপনারাই দেখছেন কত শান্ত পরিস্থিতি। কোন ধরনের হুমকির অভিযোগ আমাদের কাছে নেই।”
তবে ভোটের দিন গোলযোগের শঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছেন না কুমিল্লায় সচেতন নাগরিক সমাজ (সনাক) এর সাবেক সভাপতি ও বাপার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত নাও থাকতে পারে। এখানে… আধিপত্য রয়েছে। শক্ত প্রতিপক্ষ রয়েছে।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কুমিল্লার ডিসি মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, “আইনশৃংখলা কমিটির সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কীভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু করা যায়। সে মোতাবেক এগিয়ে যাচ্ছি। সিটি নির্বাচনে সম্পৃক্ত সবকিছুই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।”
বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি বুথে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্যে ৮৯টি কেন্দ্রকে ‘অধিক ঝুঁকিপূণ, সাতটিকে ‘কম ঝুঁকিপূণ’ এবং নয়টিকে ‘সাধারণ কেন্দ্র’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
এ নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ভোটার আছেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী ছাড়াও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মোট ১০৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এ নির্বাচনে।