রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দুর্নীতিবিরোধী’ একদল শিক্ষকের বিরোধিতার মুখে সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করা হয়েছে।
Published : 04 May 2021, 06:12 PM
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এই ঘটনা চলাকালে এই শিক্ষকদের সঙ্গে একদল যুবকের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
এই সময় ভিড়ের মধ্যে একজন যুবক শিক্ষকদের ‘গুলি করার হুমকি’ দিয়েছেন বলে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. লুৎফর রহমান বলেন, তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হতে দেননি তিনি।
“এতে কিছু কথা কাটাকাটি হয়েছে। এখন পরিস্থিতি ভালো।”
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপাচার্য বাসভবনে সিন্ডিকেটের ৫০৬তম সভা নির্ধারিত ছিল।
২০১৭ সালে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের মেয়াদ বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে।
তাই সভা বন্ধের দাবিতে এই শিক্ষকরা সকাল সাড়ে ৯টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এদিকে, সকাল ৯টায় ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের একটি অংশ উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন, যারা শিক্ষকদের কর্মসূচির বিরোধিতা করছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাড়ে ৯টার দিকে ‘প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে আন্দোলনকারী অর্ধশতাধিক শিক্ষক সেখানে উপস্থিত হন। তারা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বাধা দেন। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের কথাকাটাকাটি হতে দেখা যায়।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এই শিক্ষকেদর ‘ভেতরে ঢোকা যাবে না’ বলে জানান।
এমন সময় এক যুবক বলে ওঠেন, “তাহলে কিন্তু স্যার গুলি করে দিব একদম!”
এই ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেলেও তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।
‘প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মধ্যে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি সুলতান-উল-ইসলামও রয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছি। কিন্তু ভাড়াটিয়া নিয়ে এসেছে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে। আমাদের গুলি করে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।”
এমন পরিস্থিতিতে সভা স্থগিত করার খবর আসে।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করা হয়েছে।”
সভা পরবর্তীতে কবে বা কখন হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানা যায়নি।
উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফারুক হোসেন এবং সাবেক সহ-সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
দুজনকেই ফোন করা হয়ছে; কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি।
উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানসহ বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ-বাণিজ্য, আর্থিক লেনদেনসহ ২৫টি অনিয়মের অভিযোগ দেন একদল শিক্ষক। ইউজিসি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
কমিটি উপাচার্যের বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগের প্রমাণ পায়। নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়ায় গত বছর ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে রাবিতে সব ধরনের নিয়োগ স্থগিত রাখাসহ ১২টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর থেকে একদল শিক্ষক উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন।
সিন্ডিকেট সভা বিষয়ে উপাচার্যকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।