আশ্বিনের শেষে আমন ধানের শীষ বেরোতে না বেরোতেই ধেড়ে ইঁদুরের আক্রমণে ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কায় পড়েছে গাইবান্ধার কৃষকরা।
Published : 17 Oct 2020, 02:59 PM
গাইবান্ধায় কয়েক দফা বন্যার ধকল শেষে রোপা আমন চষেছিলেন কৃষকরা। এসব ধানক্ষেতে ইঁদুরের এ আক্রমণ কোনোভাবেই ঠেকাতে পারছে না বলছেন তারা।
তাদের অভিযোগ জেলা কৃষি বিভাগের লোকজনকে সহায়তায় মাঠে পাশে পাচ্ছেন না।
চলতি বছর এ জেলার সাত উপজেলায় এক লাখ ২৮ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। তারমধ্যে পঞ্চম দফা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থেকে ৫ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমির ধান পচে নষ্ট হয়েছে বলছে কৃষি বিভাগ।
এদিকে, সরকারি কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) তথ্য ইঁদুর প্রতিবছর দেশের আমন ধানের শতকরা ৫ থেকে ৭ ভাগ, গম ৪ থেকে ১২ ভাগ, আলু ৫ থেকে ৭ ভাগ, আনারস ৬ থেকে ৯ ভাগ নষ্ট করে। গড়ে মাঠ ফসলের ৫ থেকে ৭ শতাংশ এবং গুদামজাত শস্য ৩-৫ শতাংশ ক্ষতি করে।
জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার হবিবুল্লাপুর গ্রামের বর্গাচাষি রেজাউল করিম জানান, ধার-দেনা করে চার বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছেন। তার ক্ষেতের ধান গাছে কেবল থোড় হয়েছে। বের হতে শুরু করেছে শীষ কিন্তু এক ধরনের বড় বড় ইঁদুর এ ধানগাছ কেটে সাবাড় করছে।
“কোনভাবেই তা ঠেকানো যাচ্ছে না।”
এভাবে চলতে থাকলে ক্ষেতে আর একটি ধান গাছও থাকবে না শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “তখন পরিবার-পরিজন নিয়ে উপোস থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।”
একই গ্রামের কৃষক আতোয়ার রহমান আকন্দ জানান, ক্ষেতে পানি। জমির আইলে (পাশে) ইঁদুরের কোনো গর্তও নেই।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের তালুক মন্দুয়ার গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, ধানক্ষেতে বিষ মাখা খাবার প্রয়োগসহ বিভিন্ন পন্থায় ফাঁদ পেতেও সামাল দিতে পারছেন না এসব ইঁদুর।
একই গ্রামের বর্গাচাষি সৈয়দ আলী বলেন, এ সময় সরকারি কৃষি বিভাগের লোকজন যদি কৃষকের পাশে এসে না দাঁড়ায় তাহলে ধার-দেনা করে মাঠে চাষ করা ফসলের এক মুঠোও আর ঘরে তোলা সম্ভব হবে না।
“কিন্তু কৃষি বিভাগের লোকজনকে মাঠে দেখা মিলছে না।”
যে ধানক্ষেতে পানি আছে সেই সব ক্ষেতে এই ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হচ্ছে বলে জানান সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের নিজপাড়া গ্রামের কৃষক আজিজ মিয়া।
তবে কৃষি বিভাগের লোকজন মাঠে নাই এ অভিযোগ মানতে নারাজ হলেও সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খাজানুর জানান, ইঁদুর নিধনের কৃষি বিভাগের আলাদা কোনো কর্মসূচি নাই। বিশেষ কোনো নির্দেশনাও পাননি।
এসব ইঁদুর নিধনের উপায় বাতলাতে গিয়ে খাজানুর বলেন, এ প্রজাতির ইঁদুর খুব চালাক। তাই ক্ষেতে ইঁদুরের যাওয়া আসার পথে প্রথমে এক থেকে দুই দিন মাছের শুটকিসহ বিভিন্ন খাবার ছিটিয়ে রাখলে তা সহজে খাবে।
“পরে ওই পথে জিংক ফসফাইট মিশ্রিত ওইসব খাবার ছিটিয়ে রাখতে হবে অথবা লানিরেট ছিটিয়ে রাখলেও এই ইঁদুর দমন করা সম্ভব।”
তবে ধানক্ষেতে বিষ মাখা খাবাসহ ফাঁদ পেতেও কৃষকরা ইঁদুর থেকে রক্ষা না পাওয়ায় অন্য এক পন্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাদুল্লাপুর উপজেলার হবিবুল্লাপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আকতারুজ্জামান।
“ওই পলিথিন বাতাসে উড়লে এক ধরণের শব্দ হবে, এতে ভয়ে ইঁদুর ক্ষেত ছেড়ে চলে যাবে।”
অন্য বছরের তুলনায় এবার আমন ধানের ক্ষেতে এক ধরণের গেছো ইঁদুরের বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলেন তিনি।
ইঁদুর নিধনে কৃষি তথ্য সার্ভিস রাসায়নিক ও অরাসায়নিক দুই ধরণের পন্থার কথা বলছে। যার মধ্যে বিষ প্রয়োগসহ নানা পন্থার পাশপাশি ইঁদুর ভক্ষণকারী প্রাণী শিয়াল, বেজি, বনবিড়াল, গুঁইসাপ, পেঁচা সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।