গাজীপুরের প্রসিদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্র শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজার ঘিরে হাজারখানেক বানরের বাস।
Published : 19 Apr 2020, 08:30 PM
হানা দেওয়া নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারা দেশের মতো গাজীপুর জেলাও অবরুদ্ধ। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পর গাজীপুরে কোভিড-১৯ রোগী বেশি শনাক্ত হওয়ায় এর বাসিন্দাদের মাঝে ভীতিও বেশিও।
অন্য সব কিছুর মতো কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে বরমী বাজারের সব দোকানপাট। এতে বিপাকে পড়েছে এখানকার বানররা।
বাজারের কাছে দোকানের পাশেই বাড়ি স্থানীয় ব্যবসায়ী রিপন সাহার।
রিপন বলেন, “বাসায় বসে খাবারের জন্য বানরের কান্না শুনতে পাই।
দিন দুয়েক তিনি কিছু কলা-রুটি কিনে বানরদের দিয়েছেন। তাতে অবশ্য এত বানরের খিদে মেটার কথা নয়।
এলাকায় কথিত আছে-শীতলক্ষ্যার তীরের এ বাজারে ব্যবসা করতে আসত বার্মার ব্যবসায়ীরা। তাদের মাধ্যমে প্রায় দুইশ বছরের বেশি আগে থেকেই এ বাজারে মানুষের সাথে সাথে আস্তানা গাড়ে বন্যপ্রাণী বানরও।
বাজারের দোকানগুলো এসব বানরের খাবারের প্রধান উৎস। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউনে বাজারের দোকানপাট বন্ধ থাকায় চরম খাদ্য সঙ্কেটে পড়ছে হাজার খানেক এসব ‘বর্মী বানর।’
স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান মিয়া জানান, এ এলাকায় বানর দলবেঁধে চলাচল করে।কখনও নদীর ধারে আবার কখনও দোকানের টিনের ছাদে সব জায়গায় এদের দেখা মেলে।
“বন্যপ্রাণী হলেও বন না থাকায় এরা দোকানের ও বাসাবাড়ির পরিত্যক্ত স্থানে এবং গাছে আস্তানা গড়েছে।”
খাবার না দিলে দোকানপাটে বানরের উৎপাত বেড়ে যায় বলে বিভিন্ন দোকান থেকে বছরের পর বছর ধরে বানরদের খাবার দিয়ে আসছে বলে জানান তিনি।
তবে এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউনে বাজারের দোকানপাট বন্ধ থাকায় ‘তাদের চাহিদামত খাবারেরও ব্যবস্থা হচ্ছে না।’
“এখন যদি জরুরি ভিত্তিতে বানরের খাবারের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে এরা যেমন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে, তেমনি বিপন্ন হয়ে পড়বে এ এলাকার বানর।”
তবে অনেক আগেই এসব বানরের খাবারের ব্যাপারে প্রশাসন চিন্তাভাবনা শুরু করেছিল বলে জানালেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক বাদল সরকার।
তিনি জানান, বিভিন্ন বাসাবাড়িতে বানরের উৎপাত ঠেকাতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে গাজীপুর জেলা প্রশাসন পাঁচ টন চাল খয়রাতি সাহায্য দেয় বানরের খাবারের সংস্থানের জন্য।
এ চাল বিক্রির টাকা দিয়ে বানরের উপযোগী খাবার সরবরাহ করা হয়ে আসছিল।এর পাশাপাশি একশটি কলাগাছ রোপন করাও হয়। যদিও পরে তা টিকে থাকেনি বলে জানান তিনি।
“নতুনভাবে আর বরাদ্দ না আসায় এখন খাবার দেওয়া যাচ্ছে না। এরপর থেকে স্থানীয় দোকানদার এবং বানর দেখতে আসা পর্যটকদের দেওয়া খাবারে খিদে মেটাত বানররা।”
বেশ কিছুদিন ব্যক্তিগতভাবে এসব বানরের খাবারের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন ঘরবন্দি সাধারণ মানুষকে সহায়তা দিতে হচ্ছে। তাই ইচ্ছে থাকার পরও বানরের জন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না।”
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ঢাকার বিভাগীয় বন-কর্মকর্তা কাজল তালুকদার বলেন, “এ মুহূর্তে বানরের খাবার সহায়তা দেওয়ার মতো কোনো বরাদ্দ আমাদের নেই।
“তবু প্রাণী বলে কথা, তাই প্রকৃতি থেকে খাবারের কোনো ব্যবস্থা না থাকা এবং করোনার প্রভাবে অভুক্ত থাকায় মানবিক দিক বিবেচনায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”